নিউজ ডেস্ক :: সংবাদ প্রবাহ :: নয়াদিল্লি :: উপরাষ্ট্রপতি ভেঙ্কাইয়া নাইডুর সাম্প্রতিক অরুণাচল সফর নিয়ে চীন আপত্তি জানালেও ভারত তা খারিজ করে বলেছে, অরুণাচল প্রদেশ ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।
চীনের আপত্তির কোনো প্রশ্নই ওঠে না। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি গতকাল বৃহস্পতিবারও মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক বৈঠকে এই প্রসঙ্গে বলেন, দ্বিপক্ষীয় আলোচনাই বিবাদ মেটানোর একমাত্র উপায়। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের কোনো অংশে আমাদেরই উপরাষ্ট্রপতি যাবেন এটাই স্বাভাবিক। এ নিয়ে কারও কোনো আপত্তি আমরা গ্রাহ্য করব না।’
উপরাষ্ট্রপতি অরুণাচল প্রদেশে গিয়েছিলেন গত সপ্তাহে। সেখানে বিধানসভা ভবনে তিনি ভাষণও দেন। সফর শেষ করে ফিরে আসার পর গত বুধবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ন আপত্তি জানিয়ে বলেন, চীন কোনো দিনই অরুণাচল প্রদেশকে ভারতের বলে মেনে নেয়নি। সীমান্তসংক্রান্ত চীনের অবস্থানও স্পষ্ট ও অপরিবর্তিত। দুই দেশের এই সীমান্ত অঞ্চলে ভারতীয় নেতাদের সফরে বরাবরই চীন বিরোধিতা করে আসছে।
চীনের আপত্তির খবর জানাজানি হতেই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বলেন, ‘অরুণাচল প্রদেশ ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এ নিয়ে আপসের প্রশ্নই ওঠে না। ফলে এই বিষয়ে চীনের আপত্তি আমরা খারিজ করছি।’
চীনের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত বিবাদ বহুদিনের। কিন্তু তা কখনো রক্তাক্ত হয়নি।
ব্যতিক্রম পূর্ব লাদাখের গলওয়ান। সেখানে দুই দেশের সেনাদের রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের পর থেকে ভারত-চীন সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। গলওয়ান-পরবর্তী ঘটনার পর মোট ১৩ দফা বৈঠকে বসেছে দুই দেশের সেনানীরা। কিন্তু সর্বত্র পূর্ণ ঐকমত্যে দুই দেশ পৌঁছাতে পারেনি। গত সপ্তাহে চুসুল মল্ডো সীমান্তে অনুষ্ঠিত ত্রয়োদশ বৈঠক অমীমাংসিতভাবে শেষ হয়। তারপরই উপরাষ্ট্রপতির সফর ঘিরে চীনের এই আপত্তি।
এর মধ্যেই চলতি মাসে অরুণাচল প্রদেশ ও উত্তরাখন্ডের দুই জায়গায় চীনা ফৌজ ভারতীয় সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকে পড়ে। ভারতীয় বাহিনীর তৎপরতা ও দুই বাহিনীর আলোচনার পর তারা ফিরে যায়।
ভারত সীমান্তে চীনের এমন আগ্রাসী অবস্থান কী কারণে জানতে চাওয়া হলে ‘ইনস্টিটিউট ফর ডিফেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যানালাইসিসের (আইডিএসএ) গবেষক স্মৃতি পট্টনায়ক গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, চীন এটা হঠাৎ করছে না। এই আচরণের সঙ্গে আফগানিস্তানের পালাবদলও সম্পর্কিত নয়। ভারতের সঙ্গে সীমান্ত নিয়ে এমন আচরণ চীন প্রায়ই করে থাকে। ইদানীং তা বাড়ার একটা কারণ চারদেশীয় অক্ষ ‘কোয়াড’। কোয়াড নিয়ে চীন অখুশি।
তার বিরোধিতাও তারা সব সময় তাদের মতো করে চলেছে। চার দেশের মধ্যে ভারত দুর্বলতম। সেই সুযোগ নিয়ে চীন জোরজবরদস্তি করে মানচিত্র বদলানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। স্মৃতি বলেন, এই ক্ষেত্রে বরং পাকিস্তানের কিছুটা উৎসাহ থাকতে পারে। কাশ্মীরের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের পর চীন ও পাকিস্তান দুই দেশই ভারতকে কৌশলগত দিক থেকে ব্যস্ত রাখতে আগ্রহী। তবে ভারতও নিজেদের প্রস্তুত রাখছে।
সেই প্রস্তুতির পাশাপাশি ভারত জোর দিচ্ছে আলোচনার মধ্য দিয়ে অমীমাংসিত বিষয়গুলোর মীমাংসায়। চীনের আপত্তি খারিজ করে বুধবারই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রও দ্বিপক্ষীয় আলোচনার ওপর জোর দিয়েছিলেন। গতকালও তিনি বলেন, আলোচনাই একমাত্র উপায়