নিউজ ব্যুরো :: সংবাদ প্রবাহ :: কোলকাতা :: কলকাতার আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আনিস খান নিজ বাড়িতে হত্যার শিকার হওয়ায় তীব্র প্রতিবাদ চলছে রাজ্যজুড়ে। বিভিন্ন ইস্যুতেই আন্দোলন করা এই ছাত্রনেতার হত্যার ঘটনায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছেন। এর আগে শুক্রবার হাওড়ার আমতা থানার বাসিন্দা আনিস খানকে তার নিজ বাড়িতে গিয়ে অজ্ঞাত কয়েকজন লোক হত্যা করে।
মঙ্গলবার দুপুরে পূর্বসূচি অনুযায়ী পার্ক সার্কাস সেভেন পয়েন্ট থেকে মিছিল শুরু করে আন্দোলনকারীরা। আনিস কাণ্ডের বিচারের দাবিতে বহু পড়ুয়া সামিল হন অভিযানে। ছিলেন ভাঙড়ের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি। প্রথমে মৌলালিতে পুলিশি বাধার মুখে পড়েন আন্দোলনকারীরা। সেখানে পুলিশের সঙ্গে শুরু হয় বচসা। পরবর্তীতে ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়েন তাঁরা। মৌলালি হয়ে ডোরিনা ক্রসিংয়েরর দিকে আসার কথা ছিল মিছিলটির। সেখানে জলকামান নিয়ে প্রস্তুত ছিল পুলিশ।
এদিকে পুলিশি বাধার আশঙ্কা করে মিছিলের রুট বদল করে আন্দোলনকারীরা। এজেসি বোস রোড ফ্লাইওভার ধরে শিয়ালদহের দিকে রওনা দেয় মিছিলটি। রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় বসে পড়েন আন্দোলনকারীরা। বাধা দেওয়া হয় পুলিশের তরফেও। কিন্তু লক্ষ্যে পৌঁছতে মরিয়া পড়ুয়ারা। কলেজ স্ট্রিটের দিকে এগোতে থাকে মিছিল। পুরোপুরি আটকে যায় রাস্তা। অফিস ফেরার পথে প্রবল ভোগান্তির শিকার হন নিত্যযাত্রীরা। অবশেষে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে পুলিশ। আনিস কাণ্ডের প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থানে বসল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা |
এদিকে পরিবারের অভিযোগ, পুলিশের পোশাক পরা লোকেরা তিন তলা থেকে ফেলে আনিসকে হত্যা করেছে | পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ২৮ বছর বয়সী এই যুবককে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হচ্ছিল৷ তবে স্থানীয় পুলিশকে জানালেও এই বিষয়ে তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (এনআরসি) প্রতিবাদে আন্দোলনসহ একাধিক আন্দোলনে সামনের সারিতে ছিলেন আনিস। নিজের এলাকার জনস্বাস্থ্য আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার এক জলসা থেকে বাড়ি ফেরার কিছুক্ষণের মধ্যেই চার ব্যক্তি আসে তার খোঁজে। পরিবার জানায়, আগতদের একজন পুলিশের পোশাকে ছিলেন। অপর তিনজন ছিলেন সিভিক পুলিশের পোশাকে।
বারবার গেট খোলার অনুরোধ করলে আনিসের বাবা এক সময় খুলে দেন গেট৷ চারজনের তিনজন দ্রুত চলে যান তিন তলায়৷ আনিস তখন বারান্দায় বসে কানে হেডফোন লাগিয়ে মোবাইল ফোনে কিছু একটা শুনছিলেন৷ পরিবারের দাবি, রাত তিনটার দিকে ওই দুই ব্যক্তি তিন তলায় উঠে আনিসের মাথায় প্রথমে আঘাত করে, তারপর তিনতলা থেকে ফেলে দেয়৷
পরে পরিবারের পক্ষে থেকে সংবাদমাধ্যমকে আরো জানানো হয়, বারবার ফোন করা সত্ত্বেও আমতা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় ছয় ঘণ্টা পরে৷ ময়নাতদন্ত পরিবারের সবার অনুপস্থিতিতে ময়না তদন্তের অভিযোগও উঠেছে৷
রবিবার আনিসের বাড়িতে যান কৌশিক সেন, বোলান গঙ্গোপাধ্যায়সহ নাগরিক সমাজের কয়েকজন প্রতিনিধি৷ কৌশিক সেনের ছেলে ভারতে জাতীয় পুরস্কারজয়ী অভিনেতা ঋদ্ধি সেন সোশ্যাল মিডিয়ায় বিষয়টি নিয়ে সরব হন৷ নোংরা রাজনীতি করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি৷
একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আনিস হত্যার বিচারের দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেছেন৷
এদিকে আনিস হত্যার মামলাটি জরুরিভিত্তিতে গ্রহণ করেছে আদালত৷ মঙ্গলবার এ বিষয়ে সব তথ্য জমা দিতে আবেদনকারী পক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার বেঞ্চ। আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি কলকাতা হাই কোর্টে ওই আবেদনের শুনানি হবে৷
এই ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আনিসের পরিবারকে দেখা করার জন্য ডেকেছেন।
সোমবার আনিসের বাড়িতে যান ডিএসপি সুব্রত ভৌমিক৷ আমতা থানার ওসি দেবব্রত চক্রবর্তীকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন তিনি৷ এদিন আমতায় আনিসের বাড়িতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী পুলক রায়৷
অন্যদিকে সোমবার কলকাতার কলেজ স্ট্রিটে ভারতীয় ছাত্র ফেডারেশনের তরফে আনিসের মৃত্যুর প্রতিবাদে অবরোধ চলে দীর্ঘক্ষণ৷ আনিস হত্যার প্রতিবাদে কলেজ স্ট্রিটে বিক্ষোভ দেখায় এআইডিএসও সংগঠনও৷
সোমবার এক সাংবাদিক বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ছাত্রনেতা আনিস খানের রহস্যমৃত্যুর তদন্ত করবে বিশেষ দল৷ ১৫ দিনের মধ্যে ওই তদন্তকারী দল রিপোর্ট জমা দেবে৷ মমতা বলেন, ‘আনিসের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ ভালো ছিলো৷ আনিস আমাদের সাহায্যও করেছিলেন৷ আনিসের পরিবারকে বিশ্বাস রাখতে বলবো৷ নিরপেক্ষ তদন্ত হবে- কথা দিলাম৷ দোষীর কোনো ক্ষমা নেই।’
আনিসকে নিজেদের সংগঠনের সদস্য বলে দাবি করছে একাধিক রাজনৈতিক দল। আনিসকে তাদের দলের ছাত্র সংগঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা বলে দাবি করেন ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের একমাত্র বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি৷ কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন ছাত্র পরিষদ দাবি করেছে আনিস ছিলেন তাদের সংগঠনের সদস্য।
সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআইয়ের দাবি, আনিস ছিলেন তাদের সক্রিয় সদস্য। বিধানসভা নির্বাচনে সংযুক্ত মোর্চার নেতৃত্বে ব্রিগেড সমাবেশে দেখা গিয়েছিল আনিসকে৷