আফগানিস্তানে পাকিস্তানের বিমান হামলা — তিন ক্রিকেটার সহ নিহত ১২ আফগান

নিজস্ব সংবাদদাতা :: সংবাদ প্রবাহ :: নিউজ ডেস্ক (কাবুল) :: আবারও সীমান্তে রক্তক্ষয়। আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে পাকিস্তানি বিমান বাহিনীর এক মারাত্মক হামলায় অন্তত ১২ জন আফগান নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে।

নিহতদের মধ্যে রয়েছেন তিনজন স্থানীয় ক্রিকেটারও। ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে।

স্থানীয় প্রশাসনের বরাত দিয়ে কাবুল থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার গভীর রাতে পাক যুদ্ধবিমানগুলো আফগান প্রদেশ খোস্তের সীমান্তবর্তী এলাকা গুরবাজে একাধিক রকেট ও বোমা হামলা চালায়। হামলায় একটি আবাসিক এলাকা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়।

নিহতদের মধ্যে রয়েছেন আফগানিস্তান অনূর্ধ্ব–১৯ দলের সাবেক ক্রিকেটার রহিমুল্লাহ আহমদজাই, স্থানীয় ক্লাব ক্রিকেটার জাকির খান ও হাবিবুল্লাহ। এছাড়াও নয়জন সাধারণ নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে আফগান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, রাত দেড়টার পর হঠাৎ প্রবল শব্দে কেঁপে ওঠে পুরো গ্রাম। কয়েক মিনিটের মধ্যেই তিন দফা বোমাবর্ষণ হয়। উদ্ধারকারী দল সকাল পর্যন্ত ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়া লোকজনকে উদ্ধার করে কাবুল সামরিক হাসপাতালে পাঠায়। গুরুতর আহত আরও অন্তত ২০ জন চিকিৎসাধীন।

আফগান সরকারের মুখপাত্র জামিল হাকিমি এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, “পাকিস্তান আবারও আমাদের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে। এটি যুদ্ধ ঘোষণা ছাড়া আর কিছু নয়।” তিনি জানান, এই ঘটনাকে জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিকভাবে তোলা হবে।

অন্যদিকে, ইসলামাবাদের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, ওই হামলায় লক্ষ্য ছিল সীমান্তবর্তী এলাকায় সক্রিয় ‘তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান’ (টিটিপি) জঙ্গি ঘাঁটি। তবে বেসামরিক হতাহতের খবর তারা “অস্বীকার বা নিশ্চিত” কোনোটিই করেনি।

এদিকে তিন আফগান ক্রিকেটারের মৃত্যুর খবরে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। আফগান ক্রিকেট বোর্ড এক বিবৃতিতে গভীর শোক প্রকাশ করে বলেছে, “এই তরুণ প্রতিভারা দেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ ছিল। পাকিস্তানের অমানবিক হামলায় তাদের হারিয়ে আমরা ভীষণ মর্মাহত।”

বর্তমানে সীমান্তে আফগান নিরাপত্তা বাহিনীকে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি আরও অবনতির আশঙ্কা করছে আন্তর্জাতিক মহল। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস দুই দেশকে সংযম বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।

হামলার পর খোস্ত প্রদেশের ধ্বংসস্তূপে এখনও চলছে উদ্ধারকাজ। নিহতদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায়। আফগানিস্তান জুড়ে শোক দিবস পালনের ঘোষণা দিয়েছে সরকার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

19 + 1 =