আমি আনন্দ মুখোপাধ্যায়, সংবাদপ্রবাহ টিভি ডট কম এর নিউজ ডেস্ক থেকে আগামী দুই দিন ধরে আপনাদের শোনাচ্ছি বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্ররোচনায় কেমন করে আক্রান্ত হলো বিশ্বের সবথেকে শক্তিশালি দেশ আমেরিকার সংসদ ভবন আর সেই সময় কিই বা চলছিল সংসদের ফ্লোরে ।
আজ আমাদের প্রতিবেদনের শেষ পর্ব ।
বাইরে তখন বিকট শব্দ: এমিলি কচরান
বেলা সোয়া দুইটার কিছু পরই প্রতিনিধি পরিষদের অধিবেশন কক্ষের সহকারীরা আমাদের সতর্ক করলেন। তাঁরা আমাদের কোথাও আশ্রয় নিতে বললেন। প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্র্যাট সদস্য (সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা) স্টেনি হোয়েরসহ অন্য জ্যেষ্ঠ নেতাদের সরিয়ে নিতে দেখলাম। এক পুলিশ কর্মকর্তাকে বলতে শুনলাম, ‘ক্যাপিটল ভবনে কিছু মানুষ ঢুকে পড়েছে। সবাই এই কক্ষেই থাকুন, শান্ত থাকুন।’
কিন্তু আইনপ্রণেতারা শান্ত থাকতে পারেননি। তাঁরা চিৎকার-চেঁচামেচি করছিলেন। ততক্ষণে বাইরে কাঁদানে গ্যাস ছোড়া শুরু হয়ে গেছে। এক পুলিশ কর্মকর্তাকে বলতে শুনলাম, সবাই নিজ নিজ ডেস্ক কিংবা চেয়ারের নিচ থেকে গ্যাস মাস্ক বের করে পরে নিন। সাংবাদিকদেরও গ্যাস মাস্ক সরবরাহ করা হলো। বাইরে তখন বিকট শব্দ হচ্ছে। আত্মরক্ষার জন্য আমরা সবাই শুয়ে পড়েছিলাম।
পুলিশ কর্মকর্তারা বড় ও ভারী একটি কাঠের সিন্দুক পরিষদের অধিবেশন কক্ষের মূল দরজার সামনে এনে রাখলেন। কিছু আগে এই দরজা দিয়েই বেরিয়ে গেছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স।আমি আমার ল্যাপটপ, ফোন আর গ্যাস মাস্ক নিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে দরজার দিকে গেলাম। কিন্তু চিৎকার করে কেউ আমাদের শুয়ে পড়তে বলল। একটা চেয়ারের আড়াল থেকে দেখলাম, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েকজন সদস্য কাঠের ওই সিন্দুকের আড়াল থেকে দরজার দিকে বন্দুক তাক করে রয়েছেন। কী ঘটতে যাচ্ছে, আমি বুঝতে পারছিলাম না।
ব্যস এরপরে ঠিক কি ঘটেছিল আমার মনে নেই কারণ……….
সব মিটে গেল একসময় । আমরা সবাই নিরাপদে পেরিয়ে এলাম সেই দুঃসময় কিন্তু প্রসাশন থেমে থাকেনি শুরু হয়ে গেল তল্লাশি আর দুষ্কৃতি গ্রেপ্তার কারণ এদের নাম ফেডারেল পুলিস ….
মাথায় পশুর শিং পরা হামলাকারী গ্রেপ্তার
খালি গায়ে মাথায় পশুর শিং ও চামড়া পরে যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবনে হামলায় অংশ নিয়ে আলোচিত হয়েছিলেন তিনি। তাঁকে গতকাল শনিবার গ্রেপ্তার করেছে ফেডারেল এজেন্ট।
হামলার সময় প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির ভাষণ দেওয়ার ডেস্ক তুলে নেওয়া ব্যক্তিকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁকে গত শুক্রবার গ্রেপ্তার করা হয়।
পশুর শিং ও চামড়া পরে হামলায় অংশ নিয়ে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তির নাম জ্যাক অ্যাঞ্জেলি। অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের এই ব্যক্তি কিউ শামান নামেও পরিচিত।
গ্রেপ্তার অপর ব্যক্তির নাম অ্যাডাম ক্রিশ্চান জনসন।
জ্যাক অ্যাঞ্জেলি অ্যারিজোনা থেকে বেশ কিছু ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচার করেছেন, বিশেষ করে বিতর্কিত কিউঅ্যানন–বিষয়ক।
উগ্র ডানপন্থী কিউঅ্যানন তত্ত্বের বিশ্বাসীরা মনে করেন, শয়তানের উপাসক ও শিশু নিপীড়ক একটি গোপন সংগঠন বিশ্বব্যাপী তৎপরতা চালাচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গোপন সংগঠনের বিরুদ্ধে একাই লড়ে যাচ্ছেন। এই লড়াই চালিয়ে যেতে ট্রাম্পের ক্ষমতায় থাকা দরকার।
গত অক্টোবরে অ্যারিজোনা রিপাবলিককে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জ্যাক অ্যাঞ্জেলি জানিয়েছিলেন, তিনি মাথায় শিং ও চামড়া পরেন শুধু মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য। এতে তাঁর কিউঅ্যানন তত্ত্ব প্রচারে সুবিধা হয়।
জ্যাক অ্যাঞ্জেলি জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আহ্বানে সাড়া দিয়েই তিনি ৬ জানুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসির সমাবেশে এসেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ গতকাল শনিবার অপর ব্যক্তি অ্যাডাম ক্রিশ্চান জনসনের গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। জনসন ফ্লোরিডার অধিবাসী।
ক্যাপিটল ভবনে নজিরবিহীন হামলার ঘটনায় বিশেষভাবে কয়েকজনের ছবি-ভিডিও ভাইরাল হয়। তাঁদের মধ্যে অ্যাঞ্জেলি ও জনসন রয়েছেন।
গত বুধবার বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শত শত সমর্থক যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবনে (ইউএস ক্যাপিটল) হামলা চালান। যৌথ অধিবেশন চলাকালে হামলাকারীরা নিরাপত্তার বেড়াজাল ছিঁড়ে হুড়মুড় করে ক্যাপিটল ভবনের ভেতরে ঢুকে পড়েন। তাঁরা ক্যাপিটল ভবন তছনছ করেন। এই হামলায় ঘটনায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়। আহত হন অর্ধশত ব্যক্তি।
ট্রাম্পের উসকানিতে তাঁর সমর্থকেরা ক্যাপিটল ভবনে হামলা চালিয়েছিলেন। তাঁরা নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জয়ের সত্যায়ন ঠেকাতে চেয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত তাঁরা ব্যর্থ হন। বাইডেনকে বিজয়ী ঘোষণা করেছে কংগ্রেস।
এদিকে হামলার ঘটনায় এখন উল্টো চাপে পড়েছেন ট্রাম্প। তাঁকে অপসারণের দাবি উঠেছে। তাঁকে দ্বিতীয়বারের মতো অভিশংসন(IMPEACHMENT) করতে যাচ্ছেন ডেমোক্র্যাটরা।