সুদেষ্ণা মন্ডল :: সংবাদ প্রবাহ :: বারুইপুর :: একটা সময় ছিল যখন বাঙালির শীত মানেই পিঠে-পুলি আর সার্কাস। দিন বদলেছে। পাল্টে গিয়েছে বিনোদনের মাধ্যম। কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘরে বসে নতুন ওয়েব সিরিজ দেখাই এখন ট্রেন্ডি। আর শতাব্দী প্রাচীন সার্কাস শিল্প এখন হারানো নস্টালজিয়া।
স্মার্টফোনের বাড়বাড়ন্ত, নিত্যনতুন ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ইত্যাদি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে সার্কাস শিল্পের দিকে। এখন ইচ্ছে হলেই তো সবই হাজির হয়ে যায় মুঠোফোনের ছোট্ট স্ক্রিনে। তার মধ্যেই যেন কফিনে শেষ পেরেক পুঁতে দিয়েছে কোভিড পরিস্থিতি। বিনোদনের বহু মাধ্যমের মাঝে টিকে থাকার লড়াই চালাচ্ছে সার্কাস শিল্প। কিন্তু সেটাও আর কত দিন! এ প্রশ্ন ভাবাচ্ছে এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হাজার হাজার মানুষকে।
গত ২০০০ সালের পর শুধুমাত্র ভারতবর্ষেই ১৭টির বেশি সার্কাস কোম্পানি তাদের ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছে। | সেই জায়গায় করে নিয়েছে আধুনিক সার্কাসে আগের জৌলুস কমাতে দু-একটি তাঁবু পড়লেও গ্রামগঞ্জে আর দর্শক টানে না। সার্কাস দেখা বাক্তিদের। বিদেশে যেখানে ধনা নাইমানের আসর। যেমন করে হারিয়ে একপ্রকার প্রায় বন্ধ করেছেন বেশিরভাগ মানুষজন।
আর সেই আকর্ষণ কমেছে বাঘ, সিংহ, বাঁদর, ভালুক সহ জীবসনের সর্বেক্ষণের জন। সরকার ও আনন্দ দেওয়ার জন্য সার্কাসের অন্যান্য পশুরা না থাকায়। এটাই বাস্তব। এই বাস্তব বুঝেই সার্কাস কোম্পানিগুলি পিছু হঠতে বাধ্য হয়েছে। আগে যেখানে ১০-১২ জন মিলে সার্কাসে জোকারের ভূমিকা পালন করত এখন সেখানে একজন।
লিন্টন দাস বলেন, আগে যেখানে সার্কাসে ১০- ১২ জন মিলে জোকার সেজে দর্শকদের আনন্দ দিতাম সেখানে এখন আমি একা! মনটা ভালো নেই, ভালো লাগছে না কিন্তু তেইশ বছর ধরে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত আমি। স্মার্টফোনের যুগে মানুষ সার্কাসের দিকে থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।
ডায়মন্ড সার্কাস এর ম্যানেজার মাধব বাবু । তিনি জানান, আমরা গ্রামের বিভিন্ন প্রান্তে শীত পড়লেই সারকাস নিয়ে যেতাম। ২০০২ সালে বহু মানুষ সার্কাসের টিকিট না পেয়ে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরতো। কিন্তু সেই চিত্র অনেকটাই বদলেছে। সার্কাসে এখন টিকিট বিক্রি হয় না।
যদিও হাতে গোনা কয়েকটি টিকিট বিক্রি হলেও সার্কাস দেখতে আসা দর্শকেরা বলে সার্কাসের আগের মতন জৌলুষ আর নেই বিভিন্ন পশুপাখির খেলা সেটি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। এখন আমাদের সেই ভরসা আফ্রিকান শিল্পীরা।
বিদেশীদের ওপর ভরসা করে এখন সার্কাস চালাচ্ছি আমরা। সার্কাসের আগামী ভবিষ্যৎ কি হবে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না সরকার যদি মুখ তুলে না থাকায় তাহলে এই বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম সার্কাস হারিয়ে যাবে!