একটু একটু করে ইতিহাসের পাতা থেকে আজ মুছে যাচ্ছে ফ্রেজারগঞ্জের ঐতিহাসিক এন্ডো ফ্রেজার সাহেবের ঐতিহাসিক সেই বাংলো বাড়ি

নিজস্ব সংবাদদাতা :: সংবাদ প্রবাহ :: ফ্রেজারগঞ্জ :: রবিবার ১২,অক্টোবর :: দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার নামখানা ব্লকের ফ্রেজারগঞ্জ উপকূল থানার ঢিল ছোড়া দূরত্বে শতাব্দী প্রাচীন এন্ডো ফ্রেজারের বাংলোর ধ্বংসস্তূপ দেখলে পর্যটক থেকে এলাকাবাসীর এখন একটাই প্রশ্ন সংস্কার কি করা যেত না ।

সমুদ্রের করাল গ্রাস থেকে কি উদ্ধার করা সম্ভব নয় । তবে এ প্রশ্নের উত্তর না মিললেও কয়েক মাসের মধ্যেই এখানে এন্ডো ফ্রেজারের মূর্তি স্থাপিত হবে সেটার অবশ্য আশ্বাস মিলেছে। উল্লেখ্য এক সময় এই ফ্রেজারগঞ্জ অত্যাচারী ইংরেজদের পদধ্বনিতে কম্পিত হয়েছিল।

পদ দলিত হয়েছিল এদেশের মান-সম্মান-সংস্কৃতি। তৎকালীন সময়ে এই নামখানা ব্লকের এই এলাকায় আবির্ভাব হয়েছিল ইংরেজ সাহেব এন্ডো ফ্রেজারের।

                                                      স্থানীয় বাসিন্দা পিছনে ফ্রেজার সাহেবের বাংলো  

ফ্রেজারগঞ্জ হল পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার অন্তর্ভুক্ত কাকদ্বীপ মহাকুমার নামখানা ব্লকের একটি গ্রাম । বর্তমানে বকখালির সি-বিচ লাগোয়া।দেশ তখনও স্বাধীন হয়নি। এ দেশে রাজত্ব চালাচ্ছে ব্রিটিশরা।

সেই সময় ফ্রেজার সাহেব এই বকখালিতে এসেছিলেন। বানিয়েছিলেন থাকার জন্য একটি বাংলো। দেশ পরবর্তীতে স্বাধীন হলেও সেই বাংলো সংস্কারের কোনও দায়িত্ব নেয়নি তৎকালীন সরকার ।

এলাকাবাসীর দাবি, বর্তমানে বাংলোর আর অস্তিত্ব নেই সেইভাবে। জরাজীর্ণ অবস্থা তার । ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ছে বাংলো। ঘরের মধ্যে গজিয়ে উঠেছে বড় বড় বট, অশ্বত্থ গাছ। প্রচুর মানুষ এই বাংলো আজও দেখতে আসেন। বকখালিতে এটাও একটা টুরিস্ট স্পট হিসেবে ধরা হয়।

অত্যাচারী ইংরেজ শাসক সাহেব এন্ডো ফ্রেজারের নাম অনুসারে নামাঙ্কিতএই জায়গাটিতে এখনো ইতিহাসের শেষ সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে ফ্রেজার সাহেবের অতিথি শালার একটি ধ্বংসাবশেষ।

সালটা ১৯০৩ । উড়িষ্যা থেকে বাংলার ছোট লাট লেফটেন্যান্ট হয়ে এলেন এন্ডো ফ্রেজার। বঙ্গোপোসাগরের কূলে একটি ছোট্ট গ্রাম আবিষ্কার করেন যার নাম নারায়ন তলা । আর যার প্রেমে পড়ে গেলেন ফ্রেজার সাহেব ।

তৈরি করলেন একটি বিলাসবহুল বাংলো বাড়ি ।বাংলোর চারিদিকে হাজার হাজার নারকেল গাছ বসিয়ে নারকেল বাগান তৈরি করে ফেলেন। পরবর্তীকালে ফ্রেজার সাহেবের নাম অনুসরণ করে নারায়ণতলা হয়ে ওঠে ফ্রেজারগঞ্জ।

জনশ্রুতি আছে কলকাতায় যাওয়ার সময় ফ্রেজার সাহাবের জাহাজ এই জায়গায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। তাকে অর্ধ মৃত অবস্থায় এক গ্রাম্য কিশোরী উদ্ধার করে। সুস্থ হবার পর ফ্রেজার সাহেব এই জায়গায় থাকা শুরু করেন।তারপর বেশ কিছুদিন পর তার লোকজন সাহেবকে নিয়ে কলকাতায় ফেরেন।

তবে যে কিশোরী সাহেবকে সেবা-শুশ্রূষা করে বাঁচিয়েছিলেন তার আর খোঁজ মেলেনি কোনোদিন । কেউ বলেন খুন করা হয়েছে তাকে আবার কেউ বলেন সে বেপাত্তা হবে গিয়েছে । তবে সঠিক কি কারণ তা আজও জানা যায়নি।

তবে এই এলাকায় বঙ্গোপসাগরে উপকূল হওয়ায় দিনের পর দিন ভূমিক্ষয় হওয়া শুরু করে। ১৯০৮ সালে গভর্নর বদল হবার পর আর অঞ্চলটি আর সংরক্ষণে আগ্রহ দেখায়নি।

বর্তমান সরকারের সুন্দরবন বিষয়ক উন্নয়ন মন্ত্রীর চেষ্টায় আর কিছুদিনের মধ্যে এই এলাকায় বসবে এন্ডো ফ্রেজারের মূর্তি। যা জানান দেবে বিগত দিনের ইতিহাসের সাক্ষী । এ বিষয়ে এক পর্যটক জাকির হোসেন জানান, ইংরেজ আমলের এই ঐতিহাসিক বাংলো বাড়িটি সংরক্ষণ করা দরকার ছিল রাজ্য সরকারের।

রাজ্য সরকার এই বাংলো বাড়িটি সংরক্ষণ করলে বকখালি ঘুরতে আসা পর্যটকদের অন্যতম ডেস্টিনেশন হতো এই বাংলো। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে প্রায় ভগ্নপ্রায় দশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভগ্নপ্রায় দশা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই বাংলা বাড়িটির। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে সংরক্ষণ করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে । কিন্তু তাতে লাভ হবেনা বলে মনে হয়।

এই বাড়িটিও নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে । স্থানীয় বাসিন্দাদের কথা মাথায় রেখে নদী বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়েছে। বাংলো বাড়ি রক্ষা না করতে পারলেও এলাকার মানুষদের রক্ষা করার জন্য আমরা নদী বাঁধ নির্মাণ করার কাজ শুরু করেছি।

কালের নিয়মে ধীরে ধীরে একটু একটু করে ইতিহাসের পাতা থেকে তাই আজ মুছে যাচ্ছে ফ্রেজারগঞ্জের  এন্ডো ফ্রেজার সাহেবের ঐতিহাসিক সেই বাংলো বাড়ি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × three =