কলকাতার বৌবাজারে ফিরিঙ্গি কালী মন্দির – বহু কিংবদন্তীর সংমিশ্রন

নিজস্ব সংবাদদাতা :: সংবাদ প্রবাহ :: কলকাতা ব্যুরো :: শনিবার ২৬,অক্টোবর :: আর কয়েকদিন পরেই বাঙালির অন্যতম ধৰ্মীয় উৎসব -‘কালীপুজো’। বাংলার সর্বত্র ছড়িয়ে আছে প্রচুর কালী মন্দির, যার একটা বড়ো অংশ কলকাতায়। কলকাতায় অবস্থিত তেমনই একটা ইতিহাস সমৃদ্ধ কালী মন্দির হলো বৌবাজারের ‘ফিরিঙ্গি কালী মন্দির’।

এই মন্দিরের সঙ্গে যুক্ত আছে এন্টানি ফিরিঙ্গির নাম। মন্দিরের প্রতিষ্ঠাকাল নিয়েও গবেষকদের মধ্যে রয়েছে মতান্তর। কারও মতে, এক নমঃশূদ্র ব্যক্তি এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পরে শ্রীমন্ত পণ্ডিত নামক এক ব্রাহ্মণ এই মন্দিরের দায়িত্ব পেয়েছিলেন।

অন্য একটি মত অনুসারে, প্রথমে এখানে ছিল একটি শিবমন্দির। পরে শ্রীমন্ত পণ্ডিত এখানে কালীমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। সেই সময় শ্রীমন্ত পণ্ডিত নাকি বসন্ত রোগের চিকিৎসা করতেন।

অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান-ফিরিঙ্গি অধ্যুষিত বৌবাজার অঞ্চলে তিনি বহু মানুষকে চিকিৎসা করে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে এনেছিলেন। কৃতজ্ঞতা স্বরূপ বহু ফিরিঙ্গি শ্রীমন্ত পণ্ডিতের মন্দিরে পুজো দিতে আসত। সেই কারণেই লোক মুখে ছড়িয়ে পড়ে ফিরিঙ্গি কালী নামটি। এটা একটা প্রচলিত কিংবদন্তি। এছাড়াও এই মন্দিরের সঙ্গে যুক্ত আছে আরও বহু গল্প-গাথা।

বিখ্যাত বই ‘কলকতার ইতিহাস’ থেকে জানা যায়, জনশ্রুতি, এই মন্দিরের পাশের গলিতে থাকতেন অ্যান্টনি সাহেবের মামা অ্যারাটুন সাহেব। সেখানে যাতায়াত থাকায় মাঝে মাঝে অ্যান্টনি সাহেব নাকি মন্দিরের চালায় বসে গান গাইতেন। মতান্তরে, তিনি নাকি একটি কালী মূর্তি গড়ে এই মন্দিরে বসিয়ে দিয়েছিলেন।

শোনা যায়, মন্দিরের পুরনো মূর্তিটি ছিল মাটির। ১৯৪৬-এর দাঙ্গায় পুরনো মূর্তিটি ধ্বংস হয়ে যায়। পরে ১৯৮৭ সালে কংক্রিটের মূর্তিটি তৈরি করা হয়। কালীপুজোয় আজও বহু ভক্ত সমাগম হয় এখানে। প্রতিদিন এখানে দেবীকে ভোগ নিবেদন করা হয়।

প্রতি অমাবস্যায় বহু মানুষ এখানে পুজো দিয়ে আসেন। আর কালী পুজোর দিন হাজার হাজার মানুষ এখানে আসেন দেবী দর্শনে। স্থানীয় প্রবীণ ভক্তপ্রাণ মানুষেরা বলেন, এই দেবী খুবই জাগ্রত। ভক্তের মনোবাঞ্ছা তিনি পূর্ণ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × four =