কাঁকসার রাজকুসুম গ্রামে শাল পিয়ালের ঘন জঙ্গলে আজও একই ভাবে জনপ্রিয় বন কালি।

নিজস্ব সংবাদদাতা :: সংবাদ প্রবাহ :: কাঁকসা :: শনিবার ২,নভেম্বর :: কাঁকসার রাজকুসুম গ্রামে শাল পিয়ালের ঘন জঙ্গলে আজও একই ভাবে জনপ্রিয় বন কালি। প্রতি বছরের মত এবছরও মহা ধুমধামে পুজোর আয়োজন করা হয়।পুজো শুরু হয় সকাল ১১টায় শেষ হয় দুপুর ২টোয়।

প্রতিবছর কালি পুজোর পরের দিন জঙ্গলের মধ্যেই বন কালীর মহা ধুমধামে পুজোর আয়োজন হয়ে আসছে। পুজোর সূচনা হয়েছিলো আনুমানিক ৫০০ বছর আগে। রাজকুসুম গ্রামের রায় পরিবারের সদস্য সনৎ কুমার রায় জানিয়েছেন, তাদেরই পূর্ব পুরুষ এই পুজোর সূচনা করেছিলেন।

পূর্বে জঙ্গলের মধ্যেই মূর্তি এনে পুজোর আয়োজন হতো। পুজোর পুরোহিত ছিলেন কাঁকসার গোপালপুরের ভট্টাচার্য্য বাড়ি থেকে। সেই সময় পুরোহিতকে রীতিমত লাঠিয়াল সাথে করে জঙ্গলে আনা হত।

গোটা এলাকায় চাষ হতো।ছিলো না তেমন রাস্তা ঘাট। তাই ধান ক্ষেতের মাঠের আল দিয়ে লাঠিয়াল দিয়েই আনা হতো পুরোহিত কে। এক বছর প্রবল বৃষ্টির সময় মাঠের আল দিয়ে জঙ্গলে যেতে সমস্যায় পড়তে হয়েছিলো সকলকে।

সেই বছর পুরোহিত স্বপ্নাদেশ পান। দেবী কালি তাকে তার বাড়িতেই পুজো করতে বলেন।
প্রায় ১০০ বছর আগে দেবীর নির্দেশ মেনে কাঁকসার গোপালপুর গ্রামে ভট্টাচার্য্য পরিবারে শুরু হয় দেবী কালির পুজো।

যেহেতু জঙ্গলে বহু বছর ধরে পুজো হতো তাই পুরোহিত দেবীর কাছে জানতে চেয়েছিল জঙ্গলে মূর্তি না থাকলে সেখানে সে কোথায় পুজো দেবে। উত্তরে দেবী তাকে জানিয়েছিল জঙ্গলের মধ্যে একটি গাছের গায়ে দুটো চোখের আকৃতি দেখা যাবে সেই গাছেই তিনি বিরাজমান থাকবেন। সেই গাছের গোঁড়ায় মূর্তি ছাড়াই হবে পুজো। ভক্তরা নিজেই আসবে পুজো দিতে।

তাই রীতি মেনে কালী পুজোর পরের দিন রাজকুসুম গ্রামে জঙ্গলের মধ্যে আজও একই ভাবে চলে বন কালীর পুজো। স্থানীয় বাসিন্দারা ছাড়াও বন কালীর স্থানে পুজো দিতে জেলা ছাড়িয়ে ভীন জেলা থেকেও হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমান প্রতি বছর।জঙ্গলের মধ্যে পুজোর আয়োজন হলেও আজও থাকে না কোনো মূর্তি।

রাজকুসুম গ্রামের বাসিন্দারা জানান দেবীর উপস্থিতি পুজো স্থানের চারিদিকে লক্ষ করা যায়।
প্রতিটি গাছের গায়ে চোখের আকৃতি দেখা যায়। মানুষ আসেন তাদের মনষ্কামনা নিয়ে। অনেকেই আসে পরিবারের সকলের সুখ শান্তি কামনা করতে। আবার অনেকেই আসেন তাদের মনস্কামনা পূরণ হলে পুজো দিতে।

পুজোর জন্য কাউকে নিমন্ত্রণ করা হয় না। তবে মানুষ প্রতি বছর নিজেই দেবীর মাহাত্মর কথা শুনে ভিড় করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

10 − three =