নিজস্ব সংবাদদাতা :: সংবাদ প্রবাহ ::বসিরহাট :: শনিবার ১৮,অক্টোবর :: বসিরহাটের ইটিন্ডায় এই মন্দির ঘিরে রয়েছে নানা লোককথা। কালীপুজোর রাতে ইছামতী থেকে তোলা গলদা চিংড়ি দিয়ে হয় দেবীর ভোগ। যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এই প্রথা।
সিদ্ধেশ্বরী মন্দির নিয়ে নানা গল্প-কথা ছড়িয়ে আছে ইটিন্ডা জুড়ে। প্রায় ৪০০ বছর আগে কৃষ্ণনগরের মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় নৌপথে যশোহরের ধূমঘাট থেকে টাকি যাচ্ছিলেন।
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের এই এলাকাটি সেই সময় ছিল বন- জঙ্গলে ঘেরা। দীর্ঘ নৌ-যাত্রায় ক্লান্ত হয়ে বসিরহাট শহরের উত্তর-পূর্ব দিকে ইছামতীর পাড়ে একটি জায়গায় রাতে বিশ্রাম করার পরিকল্পনা নেন তিনি।
ভোরে ইছামতী নদীতে সূর্যোদয়ের রং দেখে আপ্লুত হয়ে পড়েন রাজা। তখনই সিদ্ধান্ত নেন গঞ্জ তৈরি করবেন সেখানে। নাম হবে ইটিন্ডা। পাশাপাশি সেই গ্রামে একটি কালী মন্দির তৈরিরও নির্দেশ দেন তৎকালীন টাকির জমিদার পরিবার রায়চৌধুরীদের।
মহারাজার ইচ্ছায় এলাকার বন-বাদাড় পরিষ্কার করে একদিকে যেমন গঞ্জ তৈরি হয়েছিল, অন্যদিকে তালে তাল মিলিয়ে গড়ে উঠছিল সিদ্ধেশ্বরী মায়ের মন্দির। প্রাথমিকভাবে বাঁশ ও বিচালি দিয়ে তৈরি হয়েছিল সেই মন্দির।
পরে বসিরহাট ১ নম্বর ব্লকের ইটিন্ডা-পানিতর গ্রাম পঞ্চায়েতের ইটিন্ডা কলবাড়ি সংলগ্ন এলাকায় তৈরি হয় পাকা মন্দির। তবে ঐতিহ্য ও পুজোর পরম্পরা কিছুই বদলায়নি।
শ্যামা পুজোর দিন সাধারণত কোথাও দেবীর ভোগে দেওয়া হয় খিচুড়ি, কোথাও বা নিরামিষ খাসির মাংস, কোথাও ইলিশ মাছ। কিন্তু ইটিন্ডার এই সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরে ইছামতীর গলদা চিংড়ি ছাড়া কালী মায়ের পুজো সম্পূর্ণ হয় না।
যুগ যুগ ধরে মৎস্যজীবীরা ইছামতী থেকে যে গলদা চিংড়ি নিয়ে আসেন, সেগুলিই দেবীকে অর্পণ করা হয়। যা একরকম নজির।
আরও গল্প, এই মন্দির থেকে ৫ কিলোমিটার দূরের গ্রাম সংগ্রামপুরের দক্ষিণা কালী ইটিন্ডার সিদ্ধেশ্বরী কালী মায়ের সম্পর্কিত বোন। এক মন্দির থেকে অন্য মন্দিরে তাঁদের যাতায়াতের গল্পও প্রচলিত।
এখানে দেবীর পায়ের সামনে তিনটি ঘট স্থাপন করা আছে। যা একদিকে কালী অন্যদিকে শীতলা ও চণ্ডীকে এক অনন্য রূপ দিয়েছে। একাধিক ইতিহাস, গল্পকথা ও লোককথা জড়িয়ে রেখেছে এই সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দিরকে ঘিরে।