আনন্দ মুখোপাধ্যায় :: সংবাদ প্রবাহ :: কলকাতা ব্যুরো :: বুধবার ২,অক্টোবর :: বাঙালির শ্রেষ্ঠ ধৰ্মীয় তথা সামাজিক উৎসব দুর্গা পুজো। আমাদের প্রচলিত দেবী দুর্গার প্রতিমায় দেখা যায়, দেবীর পাদদেশে মহিষাসুরকে। আর আমরা পুজোর দিনগুলোতে এই মহিষাসুরকে পুজো অর্পণ করি।
এই মুহূর্তে একটা প্রশ্ন মনে জাগা স্বাভাবিক যে, কেন দেবী দুর্গার সঙ্গে মহিষাসুরকেও একই সাথে পুজো করা হয়। আধুনিক মতে মহিষাসুর পাপ ও অধর্মের প্রতীক। তাই সেই পাপকে বধ করা হয়। তৎসত্ত্বেও সে পূজিত হয় কেন?
এবার আমাদের ফিরে যেতে হবে পুরানে প্রচলিত একটা বিশেষ কাহিনীতে। এমনিতে আমরা জানি পুরাকালে মহিষাসুর নামে এক অসুর ব্রহ্মার বরে বলীয়ান হয়ে স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল অধিকার করলেন। পরে সেই অসুরকে বধ করার জন্য ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর তিনজনেই ভয়ংকর ক্রোধান্বিত হলেন। ব্রহ্মা হয়তো নিজের ভুল বুঝতে পারলেন, উপলব্ধি করলেন ভক্তরূপী মহিষাসুরকে বর দিয়ে কী অঘটনটাই-না তিনি ঘটিয়েছেন!
সে যাই হোক, এই তিন জনের মুখমণ্ডল ক্রোধে ক্রমশ ভীষণাকার ধারণ করল। তাঁদের সেই ক্রোধাগ্নি এবং অন্যান্য দেবতাদের তেজ সম্মিলিত হয়ে তৈরি হয়ে উঠলেন এক নারী। ত্রিভুবনের দুর্গতি নাশের জন্য তাঁর আবির্ভাব, তিনি দুর্গা। সমস্ত দেবতারা তাঁকে অস্ত্র দিয়ে সজ্জিত করলেন।
সেই দেবি দুর্গার হাতেই বধ হন মহিষাসুর। শুরু হল মহিষাসুর-দুর্গা যুদ্ধ। প্রবল সেই যুদ্ধে কম্পিত হল ত্রিভুবন। মহিষাসুর নানা রূপ ধারণ করে, নানা কৌশলে দেবীকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মহিষাসুর নিহত হল দেবীর হাতে।
দেবীর ত্রিশূল বিদ্ধ করল মহিষাসুর-বক্ষ। কিন্তু কতবার দেবি দুর্গা মহিষাসুরকে বধ করেন? পুরান মতে তিনবার। আদি সৃষ্টি কল্পে অষ্টাদশভুজা উগ্রচণ্ডী রূপে, দ্বিতীয় সৃষ্টি কল্পে ষোড়শভুজা ভদ্রকালী রূপে, তৃতীয় সৃষ্টি কল্পে দশভুজা দুর্গা রূপে।
এবার আমাদের মূল প্রশ্ন, কেন দেবি দুর্গার সঙ্গে মহিষাসুর পূজিত হন? এরও পিছনে অবশ্য একটা কাহিনি রয়েছে। স্বপ্নে ভদ্রকালী মূর্তি দেখেছিলেন মহিষাসুর। তা দেখে তিনি নাকি শুরু করেন দেবীর আরাধনা। তাঁর আরাধনায় প্রীত ও প্রসন্ন দেবী দেখা দিলেন ভক্ত অসুরকে।
মহিষাসুর দেবীকে জানালেন, আপনার হাতে আমার মৃত্যুর জন্য কোনও দুঃখ বা ক্ষোভ নেই। তবে আমার একটি মনোবাঞ্ছা আছে। আমি আপনার সঙ্গেই পূজিত হতে চাই। দেবী ভদ্রকালী তখন আশীর্বাদ করে বললেন, ‘তথাস্তু! তুমি উগ্রচণ্ডা, ভদ্রকালী, দুর্গা– এই তিন মূর্তিতে আমার পদলগ্ন হয়ে পূজা পাবে।’ ব্যস! সেই থেকে চালু হয়ে গেল দুর্গার সঙ্গে মহিষাসুরেরও পুজো।