নিজস্ব সংবাদদাতা :: সংবাদ প্রবাহ :: বর্ধমান :: শুক্রবার ২৫,জুলাই :: মাত্র সাত মাসের এক শিশুকন্যার জীবনে নেমে এল চরম দুঃসহ পরিণতি। মা হারানোর পর, বাবার স্নেহ থেকেও বঞ্চিত হয়ে ঠাঁই হলো সরকারি হোমে। এদিন একদিকে মায়ের দেহ সৎকারের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে শ্মশান ঘাটে, অন্যদিকে এদিনই মাতৃহীন শিশু কন্যা ঠাই পেলো সরকারি হোমে ।
আদর করে শিশু কন্যার নাম রাখা হয়েছিলো অনীতা। বর্ধমান রেলস্টেশনের ব্রিজের নিচেই ছিল তার ছোট্ট দুনিয়া – ভবঘুরে বাবা-মার সঙ্গে কাটত প্রতিটি দিন। কিন্তু মা’র অকাল মৃত্যু সবকিছু বদলে দিল রাতারাতি।
জানা গিয়েছে, ওই শিশু কন্যাটির মা রানি হেমব্রম একজন ভবঘুরে ছিলেন, এবং বাবা সোম টুডুও ছিলেন একজন ভবঘুরে।
দিন কাটত রেলস্টেশন চত্বরেই। রানী হেমরম নামে এক ভবঘুরে ভিক্ষুকের সঙ্গে তার আলাপ হয়, যা গড়ায় প্রেমে এবং পরে বিয়েতে। ঘরবাড়ি না থাকলেও, রেলস্টেশনের ব্রিজের নিচে তাঁরা গড়ে তোলে ভালোবাসার সংসার।
ধীরে ধীরে সেই সংসারে আসে একটি কন্যাসন্তান। ভিক্ষাবৃত্তি এবং টুক টাক বিভিন্ন কাজ কর্ম করে এবং নানা কষ্টে রেললাইনের পাশেই খোলা আকাশের নিচে চলত তাদের সংসার।
ছোট্ট শিশুকন্যাকে নিয়ে হাসি খুশি ও আনন্দে দিন কাটছিল তাদের। কিন্তু কয়েকদিন আগে থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন শিশুটির মা রানী হেমব্রম। অভাব-অনটনে ঠিকমতো চিকিৎসা করাতে পারেননি তার স্বামী।
পরে বর্ধমানের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা খবর পেয়ে তাকে ভর্তি করায় বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে।
দীর্ঘ লড়াইয়ের পর বৃহস্পতিবার মৃত্যু হয় তাঁর বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ভেঙে যায় রেললাইনের পাশে গড়ে ওঠা ছোট্ট ভালোবাসার সংসার। আজ সেই ঘর আর নেই, নেই মা’র কোল, নেই বাবার সাহচর্য। নিঃস্ব, অসহায়, নিরুপায় সেই সাত মাসের শিশুকন্যাটিকে সরকারি হোমে নিয়ে যায় বাবা সোম টুডু।
কে জানে, কবে আবার সে ফিরে পাবে স্নেহের ছোঁয়া, নতুন কোনো কোলে ঘুমিয়ে পড়বে নিশ্চিন্তে।