গঙ্গা সাগরের এক অসাধারণ সমন্বয়। হ্যাম রেডিওর সাহায্যে উদ্ধার দুই শিশু ।

নিজস্ব সংবাদদাতা :: সংবাদ প্রবাহ :: গঙ্গাসাগর :: শনিবার ১৮,জানুয়ারি :: মাননীয় জেলাশাসকের নির্দেশে এবং অতিরিক্ত জেলাশাসকদের পর্যবেক্ষণের মধ্যেই গঙ্গাসাগরের বিভিন্ন স্থানে হ্যাম রেডিওর ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিও ক্লাবের সদস্যরা

হারিয়ে যাওয়া অথবা কথা বলতে নাপারা , অথবা সংজ্ঞাহীন , বা শিশু এবং ভাষা না বুঝতে পারা মানুষদের মেলার বিভিন্ন প্রান্ত সহ অস্থায়ী হসপিটাল গুলি থেকে আমরা তাদের পরিবারের সাথে সাফল্যের সাথে মেলাতে পেরেছি ।

এ বছর সাগরের উল্লেখযোগ্য বিষয় বলে আমরা মনে করছি । জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তার জন্য ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছিল এবং তার কার্যকারী ব্যবহার । সম্ভবত দেশে প্রথম ড্রোন দিয়ে হারানো মানুষকে খুঁজে পাওয়া গেল ।

                                                               হারিয়ে যাওয়া বিপাশা নস্কর (৩)

ঘটনাটা ঠিক এমন । উত্তর ২৪ পরগনার বারাসাতের অশ্বিনী পল্লীর বাসিন্দা বিশালা নস্কর বয়স ৩৭ তার, নিজের দুই কন্যা সন্তান ( বিপাশা ৩ ও ঈশিতা ৯) সাথে মা মিনতি দলুই কে নিয়ে গঙ্গা সাগরে স্নান করতে এসেছিলেন ।

                                                গঙ্গাসাগরে  হারিয়ে  যাওয়া ইশিতা নস্কর (৯) 

পরপর দুটি কন্যা সন্তান হওয়ার কারণে তার বর এই মহিলাকে ত্যাগ করেন । সাগরের স্নান সেরে কে ওয়ান বাস স্ট্যান্ড থেকে কচুবেড়িয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার জন্য বাসে উঠতে গিয়েই বিপত্তি । দুই সন্তান বাসে উঠে পড়লেও বৃদ্ধা মাকে নিয়ে বাসে উঠতে পারেননি বিশালা । বাস ছেড়ে চলে গেলেই রাস্তায় কান্নায় ভেঙে পড়েন ।

সেখানে কর্তব্যরত পুলিশকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকরা মনে করেন চলমান বাসে উঠতে গিয়ে পড়ে গিয়ে জখম হওয়ার কারণেই হয়তো মহিলা চিৎকার করছেন । পাশেই ছিলেন কর্তব্যরত হ্যাম রেডিও ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিও ক্লাবের সর্বকনিষ্ঠ সদস্যা সাবর্ণী নাগ বিশ্বাস ।

সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলা মহিলাকে প্রাথমিক পর্যায়ে জল দিয়ে জ্ঞান ফেরান , একটু পরে ঐ বাসেই উঠতে না পারা তার মা মেয়েকে খুঁজতে খুঁজতে কে ওয়ান বাস স্ট্যান্ডে হ্যাম রেডিওর বুথে আসেন ।

তখনই জানা যায় ঘটনা অন্য । বৃদ্ধার দুই নাতনি বাসে উঠে পড়লেও বৃদ্ধা এবং তার মেয়ে উঠতে পারেননি । বাসের নম্বর কত তাও বৃদ্ধা ও তার মেয়ে কেউই নজর করেননি । কে ওয়ানের পুলিশ কন্ট্রোল রুমে বিষয়টি জানালেও পুলিশ তৎপর হয়ে ওঠে । কিন্তু কখন বাসটি ছেড়ে গেছে তার নম্বরই বা কত তা না জানার কারণে পুলিশ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন ।

সাবর্ণী তৎপরতার সাথে বাসস্ট্যান্ডে ঘুরতে থাকা একটি ড্রোন নজর করেন । ড্রোনের পরিচালক কর্তৃপক্ষ হর্শের সাথে দ্রুতই যোগাযোগ করেন । দ্রুতই হর্শের সহযোগিতায় কোন বাসে বাচ্চাগুলি উঠেছে বাসটির তখন সঠিক জায়গা কোথায় , তার বিস্তারিত তথ্য দেন । সাবর্ণী কন্ট্রোল রুম থেকে মহিলা পুলিশের একটি টিম নিয়ে রওনা দেন ওই বাসের উদ্দেশে ।

নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ রাখে হর্শের সাথে । কালিনগরের বাফার জোনের কাছে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা বাসের কাছে সাবর্ণী পৌঁছতেই হর্শ জানায় ওই বাসেই বাচ্চা দুটি আছে । অসাধারণ সমন্বয় । বাচ্চা দুটিকে উদ্ধার করা হয় । নিয়ে আসা হয় কে ওয়ান বাস স্ট্যান্ডে । পুলিশের সহযোগিতায় তাদের সামনেই তুলে দেওয়া হয় বাচ্চা দুটিকে তার মায়ের কাছে ।

হয়তো এটাই ড্রোন দিয়ে হারানো মানুষকে খুঁজে তার পরিবারের কাছে ফেরানো । ধন্যবাদ জেলাশাসক সহ , সকল অতিরিক্ত জেলা শাসকগণ, জেলা তথ্য আধিকারিক জেলা বিপর্যয় আধিকারিক কর্তব্যরত পুলিশকর্মী , এবং স্বেচ্ছাসেবকদের টিম গঙ্গাসাগরকে ।

সকলের মিলিত চেষ্টায় এবছর গঙ্গাসাগর মেলায় এই অসাধারণ কাজটি করা সম্ভব হয়েছে বলে আমরা মনে করি । সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ । তবে এই ঘটনার জন্য হ্যাম রেডিওর ছোট্ট সাবর্ণীকে তার তাৎক্ষণিক বুদ্ধির জন্য কুর্নিশ , তার উপস্থিত বুদ্ধির জন্যই হয়তো মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যেই এই অসাধ্য সাধন সম্ভব হয় ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

13 − eleven =