গভীর জঙ্গলে মধু সংগ্রহ করে বাড়ি ফেরার পরেই বনবিবির মন্দিরে মোরগ ছেড়ে মানত পূরণ করেন মউলরা ।

স্পর্শ দাস :: সংবাদ প্রবাহ :: কুলতলি :: ১২,মে :: গভীর জঙ্গলে মধু সংগ্রহ করে বাড়ি ফেরার পরেই বনবিবির মন্দিরে মোরগ ছেড়ে মানত পূরণ করেন মউলরা । প্রাণ হাতে নিয়ে বেঁচে ফিরে বাঘের উদ্দেশ্যেও জঙ্গলে মোরগ ছাড়ে মধু সংগ্রহকারীরা। প্রাচীন এই রীতি-নীতি ঘিরে এখন সুন্দরবনের নানা গ্রামে বসে মেলাও । কুলতলি ব্লকের মৈপিঠের এই মেলাকে স্থানীয় মানুষজন বলেন “জঙ্গল মেলা”।

সুন্দরবনের গভীর জঙ্গলে মধু সংগ্রহ করে ফিরে বন বিবির মন্দিরে পুজো দিয়ে ঘরে ঢোকার রেওয়াজ। সেই সঙ্গে বাঘ এর হাত থেকে বেঁচে ফিরতে পেরে বাঘের দেবতা হিসাবে পরিচিত দক্ষিণরায়ের উদ্দেশ্যেও মোরগ জঙ্গলে ছেড়ে দেয় মউলরা ।

গভীর জঙ্গলে দরমার বেড়া দেওয়া একটা বনবিবির মন্দির । সেই মন্দিরেই প্রতিবছর বৈশাখে আয়োজন হয় বিশেষ পুজোর। পুজোকে কেন্দ্র করে মেলা বসে যায় আশেপাশে । এবারও ধুমধাম করে পুজো ও মেলার আয়োজন হয় । পুজোকে ঘিরে ভিড় কাতারে কাতারে লোকজন ভিড় জমায়।

মাকড়ি নদী পেরোনোর নৌকাগুলিতে তিল ধারণের জায়গা নেই । এই এলাকায় নদী পারাপারের জন্য সেভাবে কোনও ঘাটের ব্যবস্থা নেই । ফলে কাদার উপর দিয়ে হেঁটে হাঁটু বা কোমর সমান জলে নেমে নৌকায় চড়তে হয় । ভিড় সামলাতে এ দিন বাড়তি পুলিশও মোতায়েন করা হয় । তৈরি রাখা হয় বিপর্যয় মোকাবিলা দলও। বনবিবির পুজো দিয়ে মানত রাখেন অনেকে।

সেই মতো দেবীর উদ্দেশ্যে মোরগ সমর্পণ করে পরে তা ছেড়ে দিতে হয় জঙ্গলে । এই পুজোর রীতি-নীতি অনুযায়ী অনেকেই পুজো দিয়ে জঙ্গলেও মোরগ ছাড়েন । মৈপিঠের শনিবারের বাজার থেকে বেশ কিছুটা এগিয়ে মাকড়ি নদী পেরিয়ে পৌঁছতে হয় ঘন ম্যানগ্রোভের জঙ্গলের ভিতর বনবিবির এই মন্দিরে ।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রায় ৭০ বছর আগে এই মন্দির তৈরি হয়েছিল। এমনিতে বনবিবির পুজো হয় মাঘ মাসে। কিন্তু জঙ্গল নির্ভর মানুষজন বর্ষার মুখে জঙ্গলে মাছ-কাঁকড়া ধরতে বেরোনোর আগে এই সময় বিশেষ পুজোর আয়োজন করেন। প্রায় ৬০ বছর ধরে অতি নিষ্ঠার সাথে চলে আসছে এই পুজা ও মেলা ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

15 − four =