সুদেষ্ণা মন্ডল :: সংবাদ প্রবাহ :: সন্দেশখালি :: বৃহস্পতিবার ২৯,ফেব্রুয়ারি ::ইডি হামলার ৫৬ দিনের মাথায় খাঁচাবন্দি সন্দেশখালির ‘বাঘ’। এখনও থমথমে দ্বীপাঞ্চল। এলাকায় মোতায়েন বিশাল পুলিশবাহিনী। টহল দিচ্ছে ব়্যাফ। অশান্তি যাতে আর না ঘটে তাই সন্দেশখালির ২৩টি জায়গায় নতুন করে জারি ১৪৪ ধারা।
বসিরহাট মহকুমা আদালতের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ আদালত চত্বর।
সন্দেশখালিতে গ্রেফতার শেখ সাজাহান। সন্দেশখালি থানার পুলিশ গ্রেফতার করেছে ।
সূত্রের খবর সেখ সাজাহানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে মীনাখা থেকে কিন্তু পুলিশী সুত্রে এটা জানানো হয়নি ঠিক কার বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে । ধোঁয়াশা রয়েছে তার গ্রেপ্তারের দিনক্ষণ এবং সময় নিয়েও ।
কিছু অসমর্থিত সূত্রের খবর দিন দুয়েক আগেই নাকি শেখ সাজাহানকে কোনো একটি জায়গা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ।এলাকার নিরাপত্তার খাতিরেই নাকি এই খবর গোপন রাখা হয়েছিল ।পরে পুলিশী বন্দোবস্ত সম্পূর্ণ করার পরই তার গ্রেপ্তারের খবর প্রকাশ্যে আনা হয় ।
তাকে বসিরহাট আদালতে পেশ করা হলে পুলিশ এবং ইডি দুই পক্ষই তাকে ১৬ দিনের হেপাজতে চান । আদালত কিন্তু সবদিক বিবেচনা করেই শেখ সাজাহানকে দশ দিনের পুলিশী হেপাজত মঞ্জুর করেন ।এদিকে শেখ সাজাহানের গ্রেপ্তারির খবর শুনেই বিশাল এলাকা জুড়ে গ্রামবাসীদের একাংশ আবির খেলায় মেতে ওঠেন ।
নিউজ কো-অর্ডিনেটর সুদেষ্ণা মন্ডলের সংযোজন ::
পুলিশের নথি অনুযায়ী, রাত ১.১৫ মিনিট নাগাদ শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। মিনাখাঁ থানায় সকাল পর্যন্ত তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পুলিশের দাবি, শেখ শাহজাহান জেরায় তাঁর নিজের অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছেন। রাজ্য পুলিশ আদালতে সেই নথিই জমা দিয়েছে। ইতিমধ্যেই পুলিশ শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে একাধিক প্রমাণ পেয়েছে। পুলিশ শাহজাহানের জামিনের তীব্র বিরোধিতা করা হয়েছে। আপাতত বসিরহাট আদালত শেখ শাহজাহানের ১০ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার গ্রেফতারির পর বসিরহাট মহকুমা আদালতে তোলা হয় তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানকে। বিচারকের কাছে তাঁকে জামিন দেওয়ার আবেদন জানান শাহজাহানের আইনজীবী। তবে পাল্টা পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক সব বিস্ফোরক নথি তুলে ধরে। পুলিশের অভিযোগ, শেখ শাহজাহানকে তার নিজের এলাকায় প্রভাবশালী। তিনি জামিন পেলে সাক্ষীদের ভয় দেখাতে পারেন। তথ্য প্রমাণ লোপাট করতে পারেন।
মূলত, ইডি-র উপর হামলার ঘটনাতেই গ্রেফতার হয়েছেন সন্দেশখালির ‘বাঘ’। আজ আদালতে ১০ মিনিটেই সওয়াল-জবাব পর্ব শেষ হয়। এরপর শাহজাহানকে বের করে নিয়ে আসা হয় আদালতের বাইরে। তৃণমূল নেতার দুই আইনজীবী রাজা ভৌমিক ও অভিজিৎ ঘোষ বলেন, “পুলিশ ১৪ দিন চেয়েছিল। ১০ দিনের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আমরা জামিন চেয়েছিলাম। ইডির উপর হামলার ঘটনায় নাম রয়েছে ঠিকই। তবে সরাসরি কোনও যোগ ছিল না।”
অপরদিকে, আদালতে দেওয়া নথিতে পুলিশ দাবি করে, শেখ শাহজাহান কে হেফাজতে রেখে জেরা করার দরকার রয়েছে। কারণ তিনিই জানেন, ইডি-র উপর হামলার দিন কারা-কারা জড়িত ছিলেন। তাদের গোপন ডেরার হদিশ জানেন শাহজাহান। ইডি আধিকারিকদের কাছ থেকে লুট হওয়া জিনিস উদ্ধার করতে শাহজাহানকে হেফাজতে দরকার। এর পাশাপাশি শাহজাহান নথিতে উল্লেখ ছিল, তৃণমূল এই নেতার অতীত-ইতিহাস খুব খারাপ। একাধিক অপরাধের ইতিহাস আছে। তাই কোনও ভাবেই তাকে জামিন নয়। জামিনের তীব্র বিরোধিতা করে আদালতে নথি পেশ রাজ্য পুলিশের।
প্রসঙ্গত, পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৪৭, ১৪৮, ১৪৯, ১৮৬, ৩০৭, ৩৪১, ৩৪২, ৩৫৩, ৩৭৯, ৫০৬, ৩৪১, ৩৫৩, ৩২৩, ৪২৭, ৫০৬, এবং সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি আইনের ৩ নম্বর ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।

অন্যদিকে শেখ শাহজাহানকে পুলিশ গ্রেফতার করার পরই সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে ইডির পূর্বাঞ্চলীয় দফতরে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরের অফিসে তৎপরতা শুরু হয়ে গেল। ইডি সূত্রে খবর, শাহজাহানকে হেফাজতে নিতে চেয়ে কালবিলম্ব না করেই কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন জানাবে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা।
গত ৫ জানুয়ারি সন্দেশখালিতে শেখ শাহাজাহানের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গিয়েছিলেন ইডির গোয়েন্দারা। সেখানে তাঁদের মারধর করা হয়। ইডির দুই গোয়েন্দার মাথা ফাটে। তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। এর পর ইডিই প্রথম শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। কলকাতা হাইকোর্টেও এ ব্যাপারে মামলা দায়ের হয়। এর পর গত মাস খানেক সময়ে শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে সন্দেশখালিতে যে সব অত্যাচার, অনাচারের অভিযোগ দায়ের হয়েছে তার ভিত্তিতেও এফআইআর নথিভুক্ত হয়েছে। পুলিশ সেই সূত্রেই গ্রেফতার করেছে শাহজাহানকে।

ইডি সূত্রে বলা হচ্ছে, শাহজাহানকে গ্রেফতারের দাবিতে প্রথম অভিযোগ দায়ের করেছিল কেন্দ্রীয় এজেন্সি। সুতরাং তাকে হেফাজতে চাওয়ার পূর্ণ অধিকার রয়েছে এজেন্সির। কারণ, শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে বেআইনি আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ নিয়ে তাকে জেরা করা প্রয়োজন। ইডি সূত্রে বলা হচ্ছে, শাহজাহানকে হেফাজতে নিয়ে অনুব্রত মণ্ডলের মতই দিল্লিতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে তারা।
এখানে জানিয়ে রাখা ভাল, শাহজাহানের বিরুদ্ধে শুধু বেআইনি লেনদেনের অভিযোগ নেই, কর্তব্যরত ইডি অফিসারদের উপর হামলার অভিযোগও রয়েছে। যে অভিযোগ যথেষ্টই গুরুতর।
অবশেষে গ্রেফতার সন্দেশখালির ‘বেতাজ বাদশা’ শেখ শাহজাহান। বুধবার রাতে মিনাখাঁর বামনপুকুর এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠকে এডিজি দক্ষিণবঙ্গ সুপ্রতিম সরকার জানান, বসিরহাট আদালতে পেশ করা হচ্ছে তাঁকে। একইসঙ্গে তাঁকে পুলিশি হেফাজতে চাওয়া হবে বলেও জানিয়ে দিয়েছেন এডিজি দক্ষিণবঙ্গে। শাহজাহানের বিরুদ্ধে ১৪৭, ১৪৮ ও ১৪৯ সহ বিভিন্ন ধারায় মামলা করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।
তবে এদিন সংবাদমাধ্যমের সামনে কোনও প্রশ্নের জবাব দেননি শেখ শাহজাহান। ইতিমধ্যেই একবার আদালত কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। পরে ফের আদালত কক্ষ থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয় শেখ শাহজাহানকে।
১০ দিনের পুলিশ হেফাজতে থাকবেন শাহজাহান। বসিরহাট মহকুমা আদালতে শাহজাহানকে ১৪ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে চায় পুলিশ। আদালত তাঁকে ১০ দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয়।
একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি শাহজাহান। শুধু আঙুল নাড়িয়ে তাঁকে কিছু ইঙ্গিত করতে দেখা যায়।
এদিকে শেখ শাহজাহানকে পেশ করা ঘিরে যাতে কোনওরকম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি না হয়, তার জন্য গোটা আদালত চত্বরে মোতায়েন করা হয় বিশাল পুলিশ বাহিনী। পাশাপাশি শাহহাজানের বাড়িতেও প্রচুর পুলিশ ও RAF মোতায়েনও করা হয়েছে। একইসঙ্গে সন্দেশখালির ২৩ জায়াগায় জারি ১৪৪ ধারা।
ইডির করা অভিযোগের ভিত্তিতেই গ্রেফতার করা হয়েছে শাহজাহানকে। সন্দেশখালির “বাঘে”র বিরুদ্ধে কী কী ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে, তাও জানানো হল। পাশাপাশি পুলিশের তরফে যে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করা হয়েছিল, সেই মামলাতেও শোন অ্যারেস্টের আবেদন জানানো হয়েছে।
গ্রেফতার হওয়া রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ডায়েরি থেকেই শেখ শাহজাহানের নাম উঠে আসে। রেশন দুর্নীতির তদন্তে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত ৫ জানুয়ারি সন্দেশখালিতে যান ইডির আধিকারিকরা। অভিযোগ, শাহজাহানের নির্দেশেই একদল গ্রামবাসী ইডির আধিকারিকের উপরে হামলা করে। ভাঙচুর করা হয় ইডির গাড়ি। এরপর থেকেই খোঁজা হচ্ছিল শেখ শাহজাহানকে। কিন্তু বিগত ৫৫ দিন ধরে নাগাল মেলেনি তাঁর। গতকাল, ২৮ ফেব্রুয়ারি রাতে মিনাঁখা থেকে গ্রেফতার করা হয় শেখ শাহজাহানকে। করতে তলার পর তাঁকে ভবানী ভবনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে সূত্রের খবর ||
পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৪৭, ১৪৮, ১৪৯, ১৮৬, ৩০৭, ৩৪১, ৩৪২, ৩৫৩, ৩৭৯, ৫০৬, ৩৪১, ৩৫৩, ৩২৩, ৪২৭, ৫০৬, এবং সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি আইনের ৩ নম্বর ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।