আনন্দ মুখোপাধ্যায় :: সংবাদ প্রবাহ :: চন্দননগর :: মঙ্গলবার ২৮,অক্টোবর :: চন্দননগরের গর্ব “বিশ্বের সবচেয়ে বড় জগদ্ধাত্রী মণ্ডপ” ঘিরে আনন্দের আবহ মুহূর্তের মধ্যে বিষাদের রঙ ছড়িয়ে পড়ল মঙ্গলবার বিকেলে।
প্রবল হাওয়ার দাপটে হঠাৎ করেই ভেঙে পড়ল কানাইলাল পল্লী সর্বজনীন জগদ্ধাত্রী পূজা কমিটির বিশাল মণ্ডপ। ঘটনায় অন্তত সাতজন দর্শনার্থী আহত হয়েছেন, যাঁদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা গুরুতর বলে জানা গেছে।
সন্ধ্যার কিছু আগে, প্রায় সাড়ে চারটার সময় হঠাৎ ঝোড়ো হাওয়া বইতে শুরু করে। তখন মণ্ডপে শতাধিক মানুষ প্রতিমা দর্শনে ব্যস্ত ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, “হাওয়া হঠাৎ খুব জোরে বইতে শুরু করেছিল। কয়েক মিনিটের মধ্যেই বিশাল বাঁশের কাঠামো কাঁপতে থাকে, আর মুহূর্তের মধ্যে একপাশ ধসে পড়ে।”
মণ্ডপটি ছিল প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ ফুট উচ্চতার, যা এই বছরের জগদ্ধাত্রী উৎসবে “বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু প্রতিমা ও মণ্ডপ” হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। পূজা কমিটির সদস্যদের দাবি, মণ্ডপটি স্টিল ও বাঁশের যৌথ কাঠামোয় নির্মিত হলেও ঝড়ের বেগ এতটাই ছিল যে তা সামলানো সম্ভব হয়নি।
ঘটনার পর স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ একযোগে উদ্ধারকাজে নেমে পড়েন। আহতদের দ্রুত চন্দননগর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আহতদের মধ্যে রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা রোহিত দত্ত (২৫), মৌসুমি পাল (৩৪), এবং সুদীপ ঘোষ (২৮) সহ আরও চারজন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, অধিকাংশেরই হাত-পায়ে চোট লেগেছে, তবে প্রাণহানির আশঙ্কা নেই।
চন্দননগর কমিশনারেটের এক আধিকারিক জানান, “প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে প্রবল হাওয়ার ঝাপটায় মণ্ডপের একাংশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে পড়ে গেছে। আমরা মণ্ডপ এলাকা ঘিরে রেখেছি এবং কাঠামোর নিরাপত্তা যাচাই চলছে।”
অলৌকিকভাবে, বিশাল জগদ্ধাত্রী প্রতিমাটি বড় কোনও ক্ষতির শিকার হয়নি। যদিও মণ্ডপের সামনের অংশ ও সজ্জার একটি অংশ সম্পূর্ণভাবে ধসে গেছে। পূজা কমিটির সম্পাদক অজয় মণ্ডল বলেন, “আমরা কখনও ভাবিনি এমন বিপর্যয় ঘটবে। প্রতিমার কাঠামো প্রায় অক্ষত আছে, কিন্তু মণ্ডপ পুনর্নির্মাণ করা সম্ভব নয়। আহতদের পরিবারের পাশে আমরা আছি।”
ঘটনার খবর পেয়ে চন্দননগরের মহকুমাশাসক (এসডিও) ও পৌর প্রশাসক ঘটনাস্থলে পৌঁছন। এলাকায় ভিড় সামলাতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পৌরসভার পক্ষ থেকে মণ্ডপ নির্মাণে নিরাপত্তা মান যাচাইয়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পুজো বাতিল নয়
ঘটনা সত্ত্বেও পূজা বন্ধ হচ্ছে না বলে জানানো হয়েছে। আগামীকাল সকালে আংশিক সংস্কারের পর পূজার সমস্ত আচার অনুষ্ঠান স্বাভাবিকভাবে চলবে। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত বাঁশের ঘের ও সুরক্ষা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী উৎসব শুধু ধর্মীয় নয়, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীকও। সেই উৎসবে এমন দুর্ঘটনা আবারও প্রশ্ন তুলছে—বৃহৎ মণ্ডপ নির্মাণের আগে কতটা নিরাপত্তা খতিয়ে দেখা হয়? প্রশাসন ও পুজো কমিটিগুলির কাছে এখন সেই উত্তর প্রত্যাশিত।

