সুদেষ্ণা মন্ডল :: সংবাদ প্রবাহ :: সুন্দরবন :: সারা দেশ সহ সুন্দরবনের ব্যাঘ্র কুলের সংখ্যা জানার জন্যই প্রতি চারবছর অন্তর বাঘ শুমারি হয় l এবারও দেশজুড়ে বাঘ শুমারির সাথে বাঘের খাদ্যের মূল্যায়ন করার উদ্যোগ নিয়েছে ন্যাশনাল টাইগার কনজারভেশন অথরিটি (এনটিসিএ)l
পূর্বাঞ্চলীয় কেন্দ্র হিসাবে সুন্দরবনের সজনেখালিতে তিনদিনের বিশেষ প্রশিক্ষণের কাজ শুরু হয়েছে l যেখানে বনদপ্তরের উচ্চপদস্থ আধিকারিক থেকে একেবারে নিচুস্তরের বনকর্মীরা , যারা ম্যানগ্রোভের জঙ্গলে জীবনের ঝুঁকি নিয়েও বাঘ শুমারি কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে তাদের নিয়ে শুরু হয়েছে বিশেষ কর্মশালা ।
মূলত বিশ্বের বৃহত্তম বাদাবন বলেই খ্যাত এই সুন্দরবন l এই ম্যানগ্রোভ বাদাবনের দেশে বাঘের সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ করা অত্যন্ত কঠিন কাজ বনদপ্তরের পক্ষে l ভৌগলিক দিক থেকে বিচ্ছিন্ন এই সুন্দরবন এলাকায় জলে জঙ্গলে নানাবিধ সমস্যার মধ্যেও বনকর্মীরা বাঘের সংখ্যা নির্ধারণের জন্য বিশেষ প্রযুক্তির ক্যামেরা লাগিয়ে আসবেন এবার lপরবর্তী ক্ষেত্রে সেই ক্যামেরাবন্দি বাঘের ছবি দেখেই নির্ধারণ করা হবে সুন্দরবনের প্রকৃত বাঘের সংখ্যা l
অতীতে বাঘের পায়ের ছাপ ও মল সংগ্রহ করেই বাঘের সংখ্যা নির্ধারন করা হতো l পরবর্তী সময়ে সেই পদ্ধতি বাতিল করে ক্যামেরা বসানো হতে থাকে l এক একটি জায়গায় দু’টি করে ক্যামেরা বসাতে হয় যাতে একটি বাঘ বাঘের দুই দিকের ছবি ক্যামেরাবন্দি হতে পারে l বিশেষজ্ঞরা সেই বাঘের গায়ে ডোরাকাটা দাগ যা প্রতিটি বাঘের ক্ষেত্রে আলাদা হয় সেগুলি পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে মূল্যায়ন করে করে সংখ্যা জানতে পারবে । উল্লেখ্য সুন্দরবনে বিগত বাঘ সুমারিতে বাঘের সংখ্যা উঠে এসেছিল ৯৬ l
এবারের এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত বসিরহাট রেঞ্জ, সজনেখালি ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারি রেঞ্জ, ন্যাশনাল পার্ক ইস্ট রেঞ্জ ও ন্যাশনাল পার্ক ওয়েস্ট রেঞ্জের বনকর্মীদের সাথে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা বন বিভাগের অন্তর্ভুক্ত মাতলা রেঞ্জ,রায়দিঘি রেঞ্জ ও রামগঙ্গা রেঞ্জের বনকর্মীরাও অংশ নিয়েছে l দেশের মধ্যে সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ অরণ্য সুন্দরবনে ওড়িশার ম্যানগ্রোভ ডিভিশনের পাঁচজন দক্ষ বন কর্মীও রয়েছে বাঘ শুমারিতে থাকার জন্য l
প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে কিভাবে জঙ্গলে ক্যামেরা বসানো হবে এবং তা হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে l সাথে বাঘের খাদ্য অর্থাৎ হরিণ শুকর,বানর সহ অন্যান্য জীবজন্তুর ছবি ও উঠবে l সেই ছবি দেখেও বাঘের খাদ্যের সমস্যা আছে কিনা তার সমস্ত খুঁটিনাটি বিষয়গুলো এবার এই ক্যামেরায় ওঠা ছবির মাধ্যমেই পর্যালোচনা করা হবে l
ডিসেম্বরের ৫ তারিখ থেকে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প এলাকায় প্রথম ক্যামেরা বসানোর কাজ শুরু হবে যা ৩৫ দিনের মধ্যেই সম্পন্ন করা হবে l এর জন্য দশটি বিশেষ দল তৈরি করা হয়েছে l প্রতিটি টিমে প্রায় ১২ থেকে ১৪ জন করে থাকবে l জিপিএস প্রযুক্তি ছাড়াও আত্মরক্ষার্থে থাকবে বন্দুকও l ড্রোনও ব্যবহার করা হবে l
এছাড়া এবার একটি নতুন আপ ব্যবহার করা হবে l সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প এলাকাতে মোট ১১৬২ টি বিশেষ ধরনের ক্যামেরা বসানো হবে l যার মধ্যে ৮০০ টি ক্যামেরা সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের l বাকি ৪০০ টি ক্যামেরা দিয়ে সাহায্য করছে ডাবলু ডাবলুএফ l
পরবর্তী পর্যায়ে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা বিভাগীয় আওতাধীন সুন্দরবন অঞ্চলে একইভাবে ১৩৬ টি জায়গায় এই ক্যামেরা বসানো হবে l সেই ক্যামেরা বসানোর কাজ শেষ হবে ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই l ফলে আগামী কয়েক মাস পরেই নির্ধারণ হবে সুন্দরবনের ব্যাঘ্র কুলের সংখ্যা যা আগের থেকে বাড়লো না কমলো l পাসপাদি বাদাবন দক্ষিণ রায়ের খাদ্যের ঘাটতি রয়েছে কিনা সে বিষয়ে পরিষ্কার হয়ে যাবে বিশেষ এই মূল্যায়নের মাধ্যমে ।