চোখের সামনে থেকে বাবাকে টেনে নিয়ে যেতে দেখে কুমিরের সাথে লড়াই কিশোরের

সুদেষ্ণা মন্ডল  :: সংবাদ প্রবাহ :: পাথরপ্রতিমা :: মঙ্গলবার ৩০,জুলাই :: নদীতে মাছ ধরার সময় বাবাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল কুমির। পিছন থেকে সেই দৃশ্য দেখে আর এক দন্ড স্থির থাকতে পারেনি কিশোর ছেলে। সাহস সমস্ত শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বাবাকে বাঁচাতে। বাবার হাত টেনে ধরা কুমিরের চোয়াল ঠেলে দাঁতের পাটির মধ্যে হাত ঢুকিয়ে দিয়েছিল সে।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত জল-দানবের সঙ্গে লড়াইয়ে আর পেরে ওঠেনি ওই কিশোর। চোখের সামনে থেকে বাবাকে টেনে নিয়ে চলে যায় কুমির। ঘটনার দুদিন পর নদীতে ভেসে উঠল সেই মৎস্যজীবী বাবার ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ। ময়নাতদন্তের জন্য দেহ পাঠানো হয় কাকদ্বীপ হাসপাতালে।

পাথরপ্রতিমার মৎস্যজীবীর মৃত্যুতে একদিকে যেমন শোকের ছায়া নেমে এসেছে গোটা গ্রাম জুড়ে অন্যদিকে এলাকার মানুষজনের মুখে মুখে ফিরছে কিশোরের সাহসী পদক্ষেপের কথাও। আর ছেলে ভুলতেই পারছে না বাবার এহেন মৃত্যুর কথা।

                                                                               প্রতীকি  ছবি সৌজন্য  ইন্টারনেট 

রবিবার বছর ১২ এর ছোট ছেলেকে নিয়ে ডিঙি নৌকো করে মাছ ধরতে যান পাথরপ্রতিমার বাসিন্দা আব্বাস উদ্দিন শেখ(৪৫) নামে এক মৎসজীবী। নদীতে জাল ফেলতেই তাঁর হাতে কামড় বসায় এক কুমির। বাবার হাতের মাংস খুবলে গিয়ে রক্ত বের হতে দেখে ভয় না পেয়ে দশ-বারো বছরের ছেলে সাহসে ভর করে শরীরের সর্ব শক্তি দিয়ে কুমিরের মুখের ভেতরে হাত ঢুকিয়ে তার চোয়াল টেনে ধরে বাবাকে বাঁচাতে চেষ্টা করে।

কিন্তু কুমিরের শক্তির সঙ্গে পেরে উঠবে না এতটুকু ছেলে তা বুঝেছিলেন আব্বাস। তিনি চিৎকার করে ছেলেকে বলেন গ্রাম থেকে লোক ডেকে আনতে। মন চাইছিল না। কিন্তু বাবার কথা অবজ্ঞাও করতে পারেনি। ওই কুমির ভরা নদীতে সাঁতরে পাড়ে গিয়ে লোকও ডেকে আনে সে। কিন্তু ফিরে এসে দেখে কোথাও কেউ নেই। ডিঙিটা জলে ভাসছে। ততক্ষণে আব্বাসকে নিয়ে নদীতে ডুব দিয়েছে ‘জলদানব’।

অবশেষে দুদিন পর আব্বাস উদ্দিনের ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ ভেসে ওঠে নদীতে। চোখের সামনে বাবার এই অকাল মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না ওই কিশোর। এই ঘটনায় গ্রাম জুড়ে নেমে এসেছে শোকের পরিবেশ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × one =