নিজস্ব সংবাদদাতা :: সংবাদ প্রবাহ :: তমলুক :: বুধবার ২০,আগস্ট :: মানসিক অসুস্থতার কারণে ছয় বছর আগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে হারিয়ে গিয়েছিলেন এক বৃদ্ধ। পরিবার আশা ছেড়ে দিয়েছিল, হয়তো কোনোদিন আর ফিরবেন না তিনি। কিন্তু ভাগ্য এবার অন্য কাহিনি লিখল।
তমলুক থানার পুলিশের প্রচেষ্টায় অবশেষে নিজের ছেলে ও নাতির হাত ধরে বাড়ি ফিরলেন সেই পান্ডুয়ার বৃদ্ধ স্বপন দত্ত (৭৫)।
বৃদ্ধ স্বপনের জীবন এক সময় বেশ সুখেই কেটেছে। হুগলির পান্ডুয়ার খান্যান এলাকার বাসিন্দা হলেও দীর্ঘদিন তিনি কলকাতার পিকনিক গার্ডেন বাড়িতে স্ত্রী উমা ও একমাত্র ছেলে বাপ্পাকে নিয়ে থাকতেন।
বৃদ্ধ স্বপনের ছেলে বাপ্পা দত্ত
আর স্বপন চাকরি করতেন চেন্নাইয়ে একটি বিদেশি বেসরকারি কোম্পানিতে। পদ ছিল ক্যাশ কালেক্টরের, আর বেতনও ছিল বেশ ভালো। সংসার চলত নিশ্চিন্তে।
কিন্তু হঠাৎই কোম্পানিটি ভারত থেকে তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নেয়। চাকরি হারান স্বপন দত্ত। সেই এক আঘাতেই ভেঙে পড়ে তাঁর জীবন। আয় বন্ধ, সংসারে আর্থিক টানাপোড়েন, তার সঙ্গে মানসিক অবসাদ— সব মিলে ধীরে ধীরে তিনি স্মৃতিভ্রষ্ট হতে শুরু করেন। চিকিৎসকরা পরে জানান, তিনি বাইপোলার ডিসঅর্ডার-এ ভুগছিলেন।
তাই কাউকে না জানিয়েই ২০১৯ সালে আগস্ট মাসের প্রথমদিকে কলকাতায় উদ্দেশ্যে রওনা দিলেও মানসিক অবস্থা ঠিক না থাকায় তিনি নিখোঁজ হয়ে যান। দিন দুয়েক পরে কসবা থানা এলাকায় তার এক আত্মীয় তাকে দেখতে পান এবং তার ছেলেকে ফোনের মাধ্যমে বিষয়টি জানান। সেখানে দিন কয়েক কাটানোর পরে ফের নিখোঁজ হয়ে যান তিনি।
পরিবার অনেক খুঁজেও কোনো হদিশ পায়নি। শেষমেষ কসবা থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন পরিবারের লোকেরা। কিন্তু তবুও কোনো খোঁজ মেলেনি। বছর কেটে যায় এক, দুই, তিন করে ছয়টি দীর্ঘ বছর। পরিবারের ধারণা হয়তো তিনি আর বেঁচে নেই।
ঠিক সেই সময়ই গত শনিবার রাতের অন্ধকারে তমলুকের রাধাবল্লভপুর সংলগ্ন আমগেছিয়া এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা লক্ষ্য করেন, একজন বৃদ্ধ এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছেন অস্থিরভাবে। তাঁর চেহারা ও ব্যবহার দেখে সন্দেহ জাগে। খবর যায় তমলুক থানায়।
পুলিশ এসে প্রথমে বৃদ্ধকে উদ্ধার করে। অসংলগ্নভাবে নানা কিছু বলতে থাকলেও, জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে ধীরে ধীরে নিজের নাম ও পান্ডুয়ার ঠিকানা বলতে সক্ষম হন তিনি। তখনই তমলুক থানার পুলিশ দ্রুত যোগাযোগ করেন হুগলি পুলিশের সঙ্গে। অবশেষে খোঁজ মেলে নিখোঁজ স্বপন দত্ত পরিবারের।
খবর পেয়ে ছুটে আসেন বৃদ্ধ স্বপনের ছেলে বাপ্পা দত্ত। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে তিনি দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন। বাবাকে ফিরে পেয়ে চোখের জলে ভিজে যায় তাঁর কণ্ঠ। তিনি বলেন, ডাক্তাররা বলেছিলেন বাবা মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন।
এত বছর ধরে নিখোঁজ থাকার পর বাবাকে আবার জীবিত ফিরে পাব, এটা স্বপ্নেও ভাবিনি। আজ মনে হচ্ছে ঈশ্বর আবার আমাদের জীবনকে ছুঁয়ে দিলেন।