জয়পুরে লোহা মান্ডির ভয়াবহ ডাম্পার দুর্ঘটনা : তদন্ত শুরু,মৃত অন্তত ১৩ জন , আহতদের চিকিৎসা চলছে

ব্যুরো নিউজ  :: সংবাদ প্রবাহ :: জয়পুর :: সোমবার ৩,নভেম্বর :: দুপুর একটার দিকে জয়পুরের লোহা মান্ডি এলাকার কাছে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১৩ জনের, আহত হয়েছেন আরও প্রায় ৩০ জন।

বেপরোয়া গতিতে আসা একটি ডাম্পার ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পরপর কয়েকটি গাড়ি, মোটরসাইকেল ও পথচারীদের উপর দিয়ে চলে গেলে ঘটনাস্থলেই বহুজন প্রাণ হারান।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, দুর্ঘটনাটি ঘটে যখন একটি খালি ডাম্পার ট্রাক হরমাড়া থানার অধীনস্থ লোহা মান্ডি এলাকা দিয়ে দ্রুতগতিতে যাচ্ছিল। স্থানীয়দের মতে, ট্রাকটি এতটাই দ্রুত ছিল যে চালক প্রথম এক মোটরবাইককে ধাক্কা দেওয়ার পরও গাড়ি থামাতে পারেননি। এরপর ট্রাকটি আরও প্রায় ৩০০ মিটার পথজুড়ে ছুটে গিয়ে একাধিক গাড়ি ও দোকান ভেঙে দেয়।

চোখের দেখা সাক্ষীরা জানিয়েছেন, “ডাম্পারটি যেন পাগলের মতো দৌড়াচ্ছিল। যেদিকে যাচ্ছিল, সেদিকের সবকিছু ধ্বংস করে দিচ্ছিল।”

দুর্ঘটনার খবর পেয়ে হরমাড়া থানার পুলিশ, দমকল বাহিনী এবং NDRF দলের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কাজ শুরু করেন। আহতদের দ্রুত SMS হাসপাতালের ট্রমা সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে গ্রিন করিডর তৈরি করে অ্যাম্বুলেন্স চলাচল সহজ করা হয়।

দুর্ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন জয়পুরের জেলা সংগ্রাহক ও পুলিশ কমিশনার।

রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী ভজনলাল শর্মা টুইট করে মৃতদের পরিবারের প্রতি শোকপ্রকাশ করেছেন এবং জানিয়েছেন,“প্রয়াতদের পরিবারকে সরকার ৫ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেবে। আহতদের বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।”

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ডাম্পার চালক দুর্ঘটনার পর গাড়ি ফেলে পালিয়ে যায়।
তবে CCTV ফুটেজের সাহায্যে তার পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে — জয়পুরের কাছাকাছি এক বালু পরিবহন কোম্পানির চালক।

পুলিশ জানিয়েছে, চালকের বিরুদ্ধে IPC ধারা ৩০৪ (অমনোযোগে মৃত্যু ঘটানো), ২৭৯ (বেপরোয়া ড্রাইভিং) ও ৩৩৭/৩৩৮ (আহত করা) ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে।

মঙ্গলবার সকালে অভিযুক্তকে ধরতে তল্লাশি অভিযান চলছে এবং সীমান্ত এলাকায় চেকপোস্টগুলো সতর্ক করা হয়েছে।

ট্রমা সেন্টারে ভর্তি আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। চিকিৎসক ডা. অনিল শর্মা জানিয়েছেন — “দু’জনের মাথায় মারাত্মক আঘাত রয়েছে, তিনজনের হাড় ভেঙেছে। কয়েকজনকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে।”

দুর্ঘটনার পর লোহা মান্ডি এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা বেপরোয়া ডাম্পার ও ট্রাক চলাচলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখান।
তারা জানান,

“এই এলাকায় প্রতিদিনই ভারি ট্রাক ঢোকে, অথচ কোনো গতি-নিয়ন্ত্রণ বা ট্রাফিক পুলিশ নেই।” স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, ডাম্পার চলাচলের সময়সীমা (রাত ১০টা–ভোর ৬টা) নতুন করে নির্ধারণ করা হবে এবং ট্রাফিক ক্যামেরা বসানো হবে।

জয়পুর মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন — শহরের শিল্পাঞ্চলে প্রবেশ করা সব ভারি যানবাহনের GPS ট্র্যাকিং বাধ্যতামূলক করা হবে। দুর্ঘটনার যান্ত্রিক ত্রুটি বা মানবিক ভুল — কোন কারণে নিয়ন্ত্রণ হারানো হয়েছিল, তা জানতে একটি বিশেষ তদন্ত দল (SIT) গঠন করা হয়েছে। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

18 − eighteen =