সুদেষ্ণা মন্ডল :: সংবাদ প্রবাহ :: গোসাবা :: রাজ্যের বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা হল। কার্যত উপনির্বাচনে বিধানসভা কেন্দ্র নিজেদের দখলে রাখল সবুজ শিবির। গত ৩০ নভেম্বর ৪ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন ছিল। গোসাবা শান্তিপুর, দিনহাটা ও খরদাহে তৃণমূলের বিজয় রথ অব্যাহত থাকল।
রাজ্যে ৪ বিধানসভার মধ্যে দ্বিতীয় ব্যবধানে জয়লাভ করেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা গোসাবার তৃণমূল প্রার্থী সুব্রত মন্ডল। সুব্রত মন্ডল তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি বিজেপির পলাশ রানাকে ১৪১৮৯৩ ভোটে পরাজিত করে। এই বিধানসভা কেন্দ্রে তৃতীয় স্থান দখল করে আরএসপি পার্টি অনিল মন্ডল ।অনিল মন্ডল এর প্রাপ্ত ভোট ৩০৬৮ বিজেপি প্রার্থী পলাশ রানার প্রাপ্য ভোট ১৮৩৩৮। ভোটের নিরিখে তৃণমূল প্রার্থী সুব্রত মন্ডল ভোট পেয়েছে ১৬০২৩১।
সকাল থেকে গণনা কেন্দ্রের সামনে কর্মী-সমর্থকদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতন। ভোট গণনা কেন্দ্রের সামনে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ও ভোট পরবর্তী হিংসা মতো ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য গণনা কেন্দ্রের সামনে মোতায়েন করা ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী। সকাল থেকে অন্যান্য বিধানসভা কেন্দ্রের মতনই এই কেন্দ্রে এগিয়ে ছিল তৃণমূল প্রার্থী। বেলা যতই বেড়েছে জয়ের ব্যবধান দ্বিগুন করেছে সুব্রত মন্ডল।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ইতিহাসের কোন প্রার্থী এত পরিমান বিপুল ভোটে জয়যুক্ত হয়নি কোন বিধানসভা নির্বাচনে। গোসাবা বিধানসভার তৃণমূল প্রার্থী সুব্রত মন্ডল কার্যত নজির গড়লেন। ২১ শের বিধানসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে থেকে ২৩ হাজারের কিছু বেশি ভোটে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি বিজেপির চিত্র প্রামাণিককে হারিয়ে তৃণমূল প্রার্থী জয়ন্ত নস্কর জয়যুক্ত হয়।
জয়ন্ত নস্করের মৃত্যুর পর এই কেন্দ্রের উপনির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ফল ঘোষণার পর তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা মিষ্টিমুখ ও আবীর খেলায় মেতে ওঠে। গোসাবা বিধানসভার তৃণমূল প্রার্থী সুব্রত মন্ডল বলেন, এই জয় গোসাবার মানুষের জয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে মানবিক প্রকল্প গুলি ছিল সেই প্রকল্পগুলির জয়। গোসাবা মানুষের ওপর যে আস্থা রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের। সেই আস্থা থেকেই আমরা বলেছিলাম গোসাবা বিধানসভার উপনির্বাচনের তৃণমূল প্রার্থীকে লক্ষাধিক ভোটে জয়যুক্ত করাবে গোসাবার মানুষ।
গোসাবার মাটিতে তৃণমূলের সংগঠন রয়েছে। বিজেপির কোন সংগঠন নেই বহিরাগত প্রার্থীরা ভোটের সময় শুধু এসেছে। এলাকার মানুষ বিজেপি প্রার্থী কে মেনে নেয়নি। ভোটে জয়ের পর সুনিশ্চিত করল কাজের লক্ষ্যমাত্রা, গোসাবার বিধানসভার অন্তর্গত বিভিন্ন এলাকার নদী বাঁধের বেহাল দশা রয়েছে,আমার প্রথম কাজই হবে নদীবাঁধ সংস্কার করা। এলাকার রাস্তাঘাট থেকে পানীয় জলের সার্বিক উন্নয়ন। গোসাবার বিভিন্ন দিক গুলি কে একত্রিত করে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করা অন্যতম লক্ষ্য রয়েছে। গোসাবার মানুষের পাশে বিধায়ক হিসেবে নয় বন্ধু হিসেবে থাকতে চাই।
গোসাবা বিধানসভায় তৃণমূলের কাছে পরাজিত হয়ে শাসকদলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বিজেপি প্রার্থী পলাশ রানা বলেন, রাজ্য সরকার সাধারণ মানুষের জন্য অনেক প্রকল্প ঘোষণা করেছে। উপ নির্বাচনের পর রাজ্য সরকারের প্রকল্পের তালিকায় নতুন দুটি প্রকল্পে সংযোজন হলো”ছাপ্পাশ্রী”ও “রিগিংশ্রী”। আগামী দিনে বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করতেই সরকার।
গোসাবার কোন বুথে ভোট হয়নি। আমি নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রতিটি বুথে সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখার জন্য বলেছি। সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে কি সাধারণ মানুষ ভোট দিতে পেরেছে কিনা। আমি মনে করি না এরপর থেকে কোটি কোটি টাকা খরচা করে নির্বাচন করার দরকার আছে । রাজ্যের শাসক দল থাকবে সেই শাসক দলের প্রতিনিধিদের বিজয়ী ঘোষণা করে দেয়া উচিত বলে আমি মনে করি।
অন্যদিকে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে আরএসপির প্রার্থী অনিল মন্ডল। অনিল মন্ডল বলেন আমরা ভেবেছিলাম যে মানুষ নির্দ্বিধায় ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দেবে। গোসাবার মাটি আরএসপির ঘাঁটি। আমরা জয়লাভ করবো এইটা নিশ্চিত ছিলাম। নির্বাচনের দিন গুলিতে কি অবস্থা হয়েছে তা দেখেই আমরা সুনিশ্চিত হয়ে গেছিলাম যে আরএসপি গোসাবার মাটি ধরে রাখতে ব্যর্থ হবে। শাসক দলের পক্ষ থেকে প্রতিটি বুথে ব্যাপক পরিমাণে ছাপ্পা ও সন্ত্রাস চালিয়েছে। এরপরে রাজ্য সরকারের নতুন প্রকল্প ঘোষণা করা উচিত “ছাপ্পাশ্রী”।
বিরোধীদের অভিযোগ হেলায় উড়িয়ে দিয়ে ক্যানিং পূর্ব কেন্দ্রের বিধায়ক সওকাত মোল্লা বলেন, গোসাবার মানুষ তৃণমূলের পাশে আছে বিরোধীদের পাশে নেই। তা আবার পরিষ্কার করে জানিয়ে দিলো গোসাবার মানুষ। এই জয় গোসাবার মানুষের জয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয়। হেরে গিয়ে শাসক দলকে অভিযোগে কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছে বিরোধীরা। কোনদিনই গোসাবার মানুষ গোসাবার মাটিতে বিরোধীদের একফোটা জায়গাও ছেড়ে দেয়নি। গোসাবায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসভার পর আমরা সুনিশ্চিত হয়ে গেছিলাম যে গোসাবা উপনির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী ১ লক্ষেরও বেশি ভোটে জয়লাভ করবে। আমাদের লক্ষ্য ২০২৪ তার আগে এই উপনির্বাচন আমরা মহড়া বলে মনে করছি।