টানা রিকশা: কলকাতার ঐতিহ্য আজ অস্তিত্বের সংকটে, বিকল্প জীবিকার দাবিতে সংগঠন নবান্নের দারস্থ

আনন্দ মুখোপাধ্যায় :: সংবাদ প্রবাহ :: কলকাতা :: শুক্রবার ১৭,অক্টোবর :: এককালে কলকাতার পরিচয়ের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিল টানা রিকশা। ভোরবেলা অফিসযাত্রী থেকে শুরু করে রাতের বৃষ্টিতে আটকে পড়া মানুষ—সবাইয়েরই আশ্রয় ছিল এই মানবচালিত বাহন।

কিন্তু আজ সময়ের স্রোতে সেই ঐতিহ্যবাহী টানা রিকশা হারিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। আধুনিক যানবাহনের ভিড়ে টিকে থাকা ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠেছে, আর সেই সঙ্গে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন হাজার হাজার রিকশাচালক।টানা রিকশা শ্রমিক সংগঠনের দাবি, সরকারের নিষেধাজ্ঞা এবং ক্রমবর্ধমান অটো, টোটো ও ব্যাটারি রিকশার দাপটে তাঁদের রুজির জায়গা প্রায় শেষ হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে এই পেশায় থাকা শ্রমিকরা বয়সের ভারে আর অন্য কোনো কাজ করতে পারছেন না। ফলে চরম আর্থিক সঙ্কটে দিন কাটছে তাঁদের।

এই পরিস্থিতিতে কলকাতা টানা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন আজ নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়েছে। তাঁদের প্রধান দাবি তিনটি—

১)সরকার যেন টানা রিকশা চালকদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে।
২)যাঁরা বয়স বা অসুস্থতার কারণে আর রিকশা টানতে পারছেন না, তাঁদের জন্য মাসিক ভাতা বা পেনশন চালু করা হোক।
৩)শহরের ঐতিহ্য হিসেবে টানা রিকশাকে সংরক্ষণ করে সীমিত এলাকায় পর্যটন বা প্রদর্শনীমূলক ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হোক।

সংগঠনের এক নেতা বলেন, “আমরা পেটের দায়ে এই পেশায়। এখন যদি এটাও বন্ধ হয়ে যায়, আমরা কোথায় যাব? সরকার আমাদের জন্য কিছু ভাবুক।”

অন্যদিকে, রাজ্য নগরোন্নয়ন দপ্তরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, পুরনো টানা রিকশার জায়গায় পরিবেশবান্ধব ব্যাটারি চালিত রিকশা আনার বিষয়ে সরকার ভাবছে। তবে সেই প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় লাগবে।

শহরের সমাজতত্ত্ববিদদের মতে, টানা রিকশা শুধু একটি বাহন নয়—এটি কলকাতার এক জীবন্ত ঐতিহ্য। মানবশ্রমের প্রতীক হলেও এটি শহরের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এক আবেগও বটে।

আজ তাই প্রশ্ন একটাই—কলকাতা কি তার এই শতবর্ষী ঐতিহ্যকে পুরোপুরি হারাতে চলেছে, নাকি নতুন আকারে টিকে থাকবে এই মানবচালিত রিকশা? উত্তর খুঁজছে শহরবাসী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seven + eighteen =