আনন্দ মুখোপাধ্যায় :: সংবাদ প্রবাহ টিভি : ১৯শে জানুয়ারি :: কোলকাতা ::
পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন রাজ্য বিধানসভার নির্বাচন নিয়ে এই করেনাকালে প্রথম জনমত সমীক্ষায় বলা হয়েছে, একুশের রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে জোর লড়াই হবে তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির। তবে ক্ষমতায় আসবে তৃণমূল। বাড়বে বিজেপির আসন।
এবিপি আনন্দ এবং সি-ভোটারের এক যৌথ সমীক্ষায় ফুটে উঠেছে এই চিত্র। রাজ্যের ২৯৪টি বিধানসভা আসনের ১৮ হাজার ভোটারের মধ্যে এই সমীক্ষা চালানো হয় ৬ থেকে ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত। আজ মঙ্গলবার কলকাতার সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয় সেই সমীক্ষা রিপোর্ট। পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার নির্বাচন আগামী এপ্রিলে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজ্য বিধানসভার ২৯৪টি আসনে এবার ১৫৪ থেকে ১৬২টি আসনে জিততে পারে তৃণমূল। আর বিজেপি জিততে পারে ৯৮ থেকে ১০৬টি আসনে। বাম ও কংগ্রেস জোট জিততে পারে ২৬ থেকে ৩৪টি আসন। আর অন্যরা পেতে পারে ২ থেকে ৬টি আসন। গত ২০১৬ সালের সর্বশেষ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল পেয়েছিল ২১১ আসন। বাম-কংগ্রেস জোট আসন পেয়েছিল ৭৬টি। এর মধ্যে অবশ্য কংগ্রেসের ঝুলিতে ৪৪ এবং বাম দলের ঝুলিতে ৩২টি আসন গিয়েছিল। আর বিজেপি পেয়েছিল মাত্র ৩টি আসন। এবার সেই চিত্র পাল্টে যাবে।
যদিও ২০১৯ সালের সর্বশেষ লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে অবশ্য দেখা দেখা গেছে, এই রাজ্যের ২৯৪টি বিধানসভা আসনের মধ্যে তৃণমূল এগিয়ে ১৬৪টি আসনে। বিজেপি ১২১ আর বাম-কংগ্রেস জোট এগিয়ে মাত্র ৯টি আসনে।
এই সমীক্ষা রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল পেতে পারে ৪৩ শতাংশ ভোট। এ ছাড়া বিজেপি ৩৭ দশমিক ৫০ আর কংগ্রেস-বাম জোট ১১ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পেতে পারে। গত ২০১৯ সালের সর্বশেষ লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল ৪৩ দশমিক ২৮ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। বিজেপি ৪০ দশমিক ২৫ এবং কংগ্রেস-বাম দল পেয়েছিল ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশ ভোট। এর মধ্যে কংগ্রেস ৫ দশমিক ৬১ এবং বাম দল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, এবার এই ভোটে তৃণমূলের ১ দশমিক ৯, বাম ও কংগ্রেসের ২০ দশমিক ২ শতাংশ ভোট কমছে আর বিজেপির ভোট বাড়ছে ২৭ দশমিক ৩ শতাংশ। আবার ২০১৯-এর সর্বশেষ লোকসভা নির্বচনের ভোটের হিসাবে বলা হয়েছে, তৃণমূলের ০.২৮ এবং বিজেপির ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ ভোট কমছে।
পাশাপাশি সমীক্ষা রিপোর্টে এ কথাও বলা হয়েছে, শুভেন্দু অধিকারীর বিজেপিতে যোগদানের কারণে ধাক্কা খাবে তৃণমূল। এই কথা বলেছেন ৪৫ দশমিক ৯ শতাংশ ভোটার। সৌরভ গাঙ্গুলীকে মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী করা হলে বিজেপি সুবিধা পাবে বলে মনে করেন ৪৮ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ। আসন্ন ভোটে কার মুখ তুলে ধরা হলে বেশি সুবিধা পাবে বিজেপি, সেই প্রশ্নের জবাবে ভোটারদের ৩৩.৯ শতাংশ সৌরভ গাঙ্গুলীর, ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ দিলীপ ঘোষ এবং ১১ দশমিক ৭ শতাংশ শুভেন্দু অধিকারীর নাম বলেছেন। আবার কংগ্রেস ও বাম দল জোট বাঁধলে লাভ কার বেশি হবে, সেই প্রশ্নের জবাবে ভোটারদের ৩৬ দশমিক ৮ শতাংশ বলেছেন তৃণমূলের লাভের কথা।
বিজেপির লাভের কথা বলেছেন ৩৩ দশমিক ১ শতাংশ এবং কংগ্রেস-বাম জোটের লাভের কথা বলেছেন ১৩ দশমিক ২ শতাংশ ভোটার।অন্যদিকে সারদা ও নারদ কেলেঙ্কারিতে জড়িত লোকজনকে দলে নিয়ে বিজেপির ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে বলে মনে করেন ৪৭ দশমিক ৬ শতাংশ ভোটার।
বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা ও ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কিছুদিন আগে বলেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গে ২০০ আসনে জিতবে বিজেপি। আর তৃণমূলের নিয়োগ করা ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোরের ঘোষণা, বিজেপি ১০০ আসনও পাবে না। এই দুজনের মধ্যে কার ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি বলে মনে করছেন, সমীক্ষায় এমন প্রশ্নের জবাবে ৪১ দশমিক ২ শতাংশ ভোটার বলেছেন অমিত শাহর ভবিষ্যদ্বাণীর কথা। আর প্রশান্ত কিশোরের ভবিষ্যদ্বাণীর পক্ষে বলেছেন ৩৫ দশমিক ৯ শতাংশ ভোটার।