দিল্লিতে ট্রাক্টার উল্টে আন্দোলনকারী কৃষকের মৃত্যু কি পুলিশের গুলিতে – দুইপক্ষের চাপান উত্তর জারি

আনন্দ মুখোপাধ্যায় :: সংবাদপ্রবাহ টিভি ;; ২৬শে,জানুয়ারি :: নয়াদিল্লি ::

তলোয়ার হাতে পুলিশের দিকে ?

 

 

 

কৃষকদের ট্রাক্টর মিছিলের জেরে রণক্ষেত্র হয়ে উঠল  দিল্লি। কেন্দ্রীয় সরকারের তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে ২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসে দিল্লিতে ট্রাক্টর মিছিলের ডাক দেয় আন্দোলনরত কৃষকরা। সেই উপলক্ষে এদিন সকালের দিকে দিল্লি-হরিয়ানা সীমান্তের সিঙ্ঘু, গাজিপুর পয়েন্ট জড়ো হয় অসংখ্য ট্রাক্টর।

ট্রাক্টর উল্টে মৃত্যু কৃষকের, গুলি চালানোর অভিযোগ দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে

এরপর তারা র‌্যালি করে দিল্লিতে প্রবেশ করে। এনিয়ে বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের সাথে দফায় দফায় খণ্ডযুদ্ধ বাধে বিক্ষোভকারীদের। কোথাও কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হয়, কোথাও পুলিশ লাঠিচার্জ করে। পাল্টা কৃষকরাও লাঠি নিয়ে পুলিশের ওপর চড়াও হয়। এমনকি বেশ কিছু আন্দোলনরত কৃষকদের তলোয়ার হাতে পুলিশের দিকে তেড়ে যেতেও দেখা যায়।

এরপর বেলা গড়িয়ে দুপুর হতেই ব্যারিকেড ভেঙে লালকেল্লা ঢুকে পড়ে একদল বিক্ষোভকারী। এরপরেই কয়েকজন কৃষক লালকেল্লায় ঢুকে পড়েন এবং সেখানে কৃষক সংগঠন নিশান সাহিবের পতাকা ওড়ান।

স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লায় যেখান থেকে জাতীয় পতাকা উত্তোলন হয়, সেখানেই ওড়ানো হয় কৃষক সংগঠনের পতাকা। জাতীয় পতাকার থেকে উঁচুতে টাঙানো হয় কৃষক সংগঠনের ওই পতাকা। যা জাতীয় পতাকার অবমাননা-এই ঘটনা নিয়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। পরে অবশ্য পুলিশ সেই পতাকা নামিয়ে দেয়।

এনিয়ে রেড রোডে আন্দোলনকারী এক কৃষক জানান ‘মোদি সরকারকে বার্তা দিতেই আমরা এখানে জমায়েত হয়েছি এবং আমাদের কাজ হয়ে গেছে। আমরা এবার ফিরে যাবো।’ অন্য আরেক কৃষক জানান ‘আমাদের আটকানোর চেষ্টা করা হলেও আমরা রেড রোডে পৌঁছতে পেরেছি। আমাদের লক্ষ্যে না পৌঁছনো না পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলতেই থাকবে।’

এদিন দুপুরেই দিল্লির আইটিও সংযোগস্থলে বিক্ষোভকারীদের সাথে কৃষকদের খণ্ডযুদ্ধ শুরু হয়। ব্যারিকেড ভেঙে ইন্ডিয়া গেটের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে। এসময় বাধাপ্রাপ্ত হয়ে বিক্ষোভকারীরা পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে বলে অভিযোগ। বিক্ষোভকারীদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটানো হয়।

তারই মধ্যে মিন্টো রোডের কাছে ট্রাক্টর উল্টে এক বিক্ষোভকারী কৃষকের মৃত্যু হয়। ট্রাক্টরের নিচে তাঁর লাশ চাপা পড়ে থাকতে দেখ যায়। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এলাকা। বিক্ষোভকারীদের দাবি পুলিশের গুলিতেই নিহত হয়েছে ওই কৃষক। একসময় ওই লাশ আটকে রেখে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে বিক্ষোভকারীরা। 

তবে প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজের পর কৃষকদের ট্রাক্টর মিছিলের শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল থেকেই দিল্লির দিকে অভিযান শুরু করে কৃষকদের একাংশ। সকাল সাড়ে আটটা নাগাদই খবর পাওয়া যায় সিঙ্ঘু ও তিকরি সীমান্তে ব্যারিকেড ভেঙে আউটার রিং রোডের দিকে যাচ্ছে কৃষকদের মিছিল। যেটি অবশ্য আগে থেকে নির্ধারিত ছিল না। যা নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় দফায় দফায় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে।

পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের জেরে নয়ডা সেক্টর-৩৪ সহ দিল্লির একাধিক জায়গায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে রাখা হয়। রাত ১২টা পর্যন্ত বন্ধ করে রাখা হবে এই পরিষেবা।

এদিকে কৃষক আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়ে এই আইন প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী। টুইট বার্তায় তিনি বলেন ‘সহিংসতা কোনও সমস্যার সমাধান নয়। চোট-আঘাত যারই লাগুক, ক্ষতি যারই হোক না কেন, আসল ক্ষতি কিন্তু আমাদের দেশেরই। দেশের কল্যাণেই স্বার্থেই কৃষি-বিরোধী আইন তুলে নেওয়া হোক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twelve + 13 =