দেহে প্রাণ ফেরাতে ঘর বন্ধ করে চললো প্রার্থনা, দেহে ধরল পচন খুবলে খাচ্ছে পিঁপড়ে

সুদেষ্ণা মন্ডল :: পাথরপ্রতিমা :: সংবাদ প্রবাহ ::  মৃত শিশু বেঁচে উঠবে এমনটাই দাবি দীক্ষা গুরুদেবের । প্রার্থনা করার পর দরজা বন্ধ করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রেখে দিলেই নাকি নিথর দেহ প্রাণ ফিরে আসবে । এমনই আজব নিদান দিয়ে বছর দুয়েকের মৃত একরত্তির দেহ বদ্ধ ঘরের মধ্যে আটকে রেখে দেওয়ার অভিযোগ উঠল এক ধর্মীয় মণ্ডলীর দীক্ষাগুরুদের বিরুদ্ধে। আর নয়-নয় করে ২০ ঘণ্টার ও বেশি সময় দরজা-জানালা বন্ধ অন্ধকার ঘরের মধ্যে আটকে পচল শিশুর দেহ। ছোট্ট মৃতদেহটিকে খুবলে খেল পিঁপড়ে । দেখা মিলল এমনি হাড় হিম করা দৃশ্য । মৃতদেহে যখন পচন শুরু হয়েছে , দুর্গন্ধের চোটে যখন পাড়া-প্রতিবেশীদের প্রাণ ওষ্ঠাগত তখনও ওই শিশুর বেঁচে ওঠার আশায় দরজার বাইরে হত্যে দিয়ে পড়ে রয়েছে মৃত শিশু পরিবার। অলৌকিক দৃশ্যের সাক্ষী থাকতে ধর্মীয় গুরুর দরজার সামনে শিশুটির বাবা-মা অন্যান্যরা। এমনই হাড় হিম করা ঘটনার সাক্ষী রইলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবনের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ পাথরপ্রতিমার ছোট রাক্ষসখালি গ্রামের মানুষ। এই ঘটনার কথা চাউর হতেই কুসংস্কারের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠেন এলাকার শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ। ইতিমধ্যেই স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির তরফে পাথরপ্রতিমা থানায় একটি অভিযোগ জানানো হয়েছে। যারা মৃত শিশুর বেঁচে ওঠার নিদান দিয়েছিলেন সেই দীক্ষাগুরুর বাড়ি ঘিরে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন গ্রামবাসীরা। দীক্ষাগুরুর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আবেদন জানিয়েছে এলাকাবাসীরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার দুপুরে পরে পুকুরে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয় বছর দুয়েকের গৌরব মাইতির। স্থানীয় মাধবনগর গ্রামীণ হাসপাতালের চিকিৎসক ওই শিশুকে মৃত ঘোষণা করার পর শিশুটিকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয় । এর পরই শুরু হয় ধর্মীয় কুসংস্কার। জানা গিয়েছে, ওই এলাকাতেই রয়েছেন এক দম্পতি। তাদের অধীনে রয়েছে আরও ১০ জন। স্থানীয় মানুষ তাদের মণ্ডলী আখ্যা দিয়েছেন। অভিযোগ সেই মণ্ডলীই শিশুটিকে বাঁচিয়ে তোলা সম্ভব বলে বিধান দেয়। তাই কোলের মৃত সন্তান বেঁচে ওঠার আশায় মণ্ডলীর কথামতো ওই পরিবারও নানা কুসংস্কারমূলক কাজ কারবার করতে শুরু করে । মৃত শিশুর মা ববিতা মাইতি জানান,

সন্তানকে বাঁচিয়ে দেওয়া হবে এই বিধান দিয়ে মণ্ডলীর গুরু তাদের বলেন , মৃত শিশুকে ঘরের মধ্যে রাখতে। তারপর ওই ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে বিকেল চারটে থেকে প্রায় রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত অন্ধকার ঘরে ধূপধুনো জ্বেলে ফুল দিয়ে চলে যিশুর কাছে প্রার্থনা । মণ্ডলীর লোকজন চলে যাওয়ার সময় ঘরের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে দিয়ে যান এবং বলে যান সারারাত দরজা খোলা যাবে না। ঘরের ভিতরে কেউ ঢুকতেও পারবে না। সকাল হলেই মৃত শিশু মা বলে ডাকবে। বিধান মেনে এভাবেই প্রায় ২০ ঘণ্টা মৃত শিশুকে অন্ধকার ঘরে ফেলে রাখেন তারা। কিন্তু সে বেঁচে ওঠেনি। মৃত শিশুর ঠাকুরমা ঝর্ণা মাইতি জানান, মণ্ডলী বলেছিল, প্রভু যিশুর কাছে প্রার্থনা করা হয়েছে। দরজা যেন কেউ না খোলে। শিশু বেঁচে যাবে। বেলা গড়িয়ে গেলেও সাড়াশব্দ না পেয়ে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে দেখি ততক্ষণে পিঁপড়ে খুবলে খেয়েছে শিশুটির দেহ। পরে শিশুটিকে উদ্ধার করে দেহ সৎকারের ব্যবস্থা করা হয়।জানা গিয়েছে, মণ্ডলের এই গুরু পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মণ্ডলীর সদস্যরা। মণ্ডলীর এক মাথা দীপক মাইতি জানান, মৃত শিশুটির পরিবারই শিশুর সুস্থতায় প্রার্থনা করার জন্য আমাদের জোরাজুরি করে। মণ্ডলীর এক মহিলা সদস্য জানান, মরা মানুষ আমরা বাঁচাই না। পরমেশ্বর পিতার কাছে প্রার্থনা করে অসুস্থকে সুস্থ করে তুলি। সেরকম নজিরও রয়েছে। ওই শিশু মারা গিয়েছে তা আমরা জানতাম না। গোটা ঘটনায় ফুঁসছেন এলাকাবাসী। পুলিশ জানিয়েছে, বিষয়টির তদন্ত শুরু হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যরা এ ধরনের ভয়ংকর কুসংস্কারের বিরুদ্ধে এলাকার সাধারণ মানুষকেই রুখে দাঁড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন ।

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 × 4 =