না-ফেরার দেশে পাড়ি দিয়ে একে একে বাড়ি ফিরছে নিথর দেহ, কান্নার রোল উঠছে জেলার প্রান্ত থেকে প্রান্তরে

সুদেষ্ণা মন্ডল  :: সংবাদ প্রবাহ :: দক্ষিণ ২৪ পরগনা :: রবিবার ৪,জুন :: অভিশপ্ত করমন্ডল এক্সপ্রেস ও হামসফর এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার পর ক্রমশ বেড়ে চলেছে মৃতের সংখ্যা। আহতদের ইতিমধ্যেই চিকিৎসা চলছে বিভিন্ন হাসপাতালগুলিতে। দুর্ঘটনার পর যত সমযের কাঁটা ঘুরছে ততই স্বজন হারাদের শুধু কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে , ভয়াবহ এই ট্রেন দুর্ঘটনায় রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ২৭ জনের। নিখোঁজ রয়েছেন ১৯ জন। ইতিমধ্যে রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এক এক করে মৃতদেহ পরিবারের হাতে তুলে দিচ্ছে রাজ্য সরকার। ভয়াবহ এই ট্রেন দুর্ঘটনায় কাকদ্বীপ বিধানসভা এলাকায় চারজন ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।

মৃতদের নাম মিরাজ উদ্দিন শেখ (২৯), হালিম মোল্লা (২৪), আনোয়ার হোসেন মোল্লা (২১), বুদ্ধদেব বাগ (৩২) । সকলেই ভিন রাজ্যে কাজের জন্য বেরিয়েছিলেন বাড়ি থেকে। ক্যানিং বিধানসভা এলাকায় মৃত্যু হয়েছে শামসুদ্দিন সরদার (৫০), শফিউদ্দিন সরদার (৫৩), মুসিবুর মোল্লা (১৮) নামে তিনজনের । কুলপি বিধানসভায় ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।

মৃতদের নাম অভিজিৎ হালদার(১৭), কুমার হালদার (২০), অনিমেষ হালদার (২৯), শুভাশিস ব্যানার্জি (২৩) । বিশাখাপত্তনামে রাস্তার কাজের জন্য কুলপি বিধানসভার মোট ছ-জন যুবক অভিশপ্ত করমন্ডল এক্সপ্রেস এ করে যাচ্ছিল কাজে যোগদান করতে। এদের মধ্যে চারজন মারা গিয়েছে এখনো পর্যন্ত । সুকান্ত হালদার নামে একজন নিখোঁজ রয়েছে। বুদ্ধদেব হালদারকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা গিয়েছে ।

বর্তমানে বুদ্ধদেব হালদার ডায়মন্ডহারবার জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বাসন্তী বিধানসভা এলাকার প্রাণ হারিয়েছে মোট সাত জন । মৃতদের নাম প্রভাস বৈদ্য (২৪), হারান গায়েন (৫০), নিশিকান্ত গায়েন (৪৩) বিকাশ হালদার (২৬), দিবাকর গায়েন (৩১), সঞ্জয় হালদার । এর মধ্যে একই পরিবারের তিন জনের মৃত্যু হয়েছে এই ভয়ানক দুর্ঘটনায়।

মগরাহাট পশ্চিম বিধানসভায় বছর একুশের আসিক আলী গাজীর মৃত্যু হয় । বারুইপুরের ধপধপির বাসিন্দা সৌরভ রায়(২২) এর মৃত্যু হয় । ক্যাটারিং এর কাজে যোগ দিতে জামাই বাবুর সাথে যাচ্ছিল । মৃত সৌরভের পরিবারের লোকজনকে সমবেদনা জানাতে রবিবার দুপুরে উপস্থিত হন বারুইপুর পশ্চিমের বিধায়ক তথা বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় ।

সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি ওই পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন বিমান বাবু ।জয়নগরের বাসিন্দা আজিজুল মোল্লা (৩৬) ও সঞ্জীব মন্ডল (২১) মৃত্যু হয় এই দুর্ঘটনায়। মহেশতলার পৌরসভার বাসিন্দা দেবেন্দ্র সিং (৩৮) এর মৃত্যুর পাশাপাশি গোসাবার বাসিন্দা সনৎ কর্মকার (৩১)ও বিষ্ণুপুরের বাসিন্দা বিশ্বনাথ চক্রবর্তীর (৩৮) মৃত্যু হয়।

মৃত ব্যক্তিরা কম বেশি সকলেই পরিযায়ী শ্রমিক। এরা ভিন্ রাজ্যে বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কেউ যাচ্ছিলেন কাজে যোগদান করতে আবার কেউ কাজ থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। পরিবারের মুখে হাঁসি ফোটানোর জন্য নিজেদের জীবন বাজি রেখে ভিন্ রাজ্যে পাড়ি দিয়ে আর ফেরা হলো না । শেষ পাড়ি জামালেন না ফেরার দেশে ।

রবিবার সকাল থেকে একে একে নিজের নিজের এলাকায় ফিরছে শুধুই নিথর দেহ । আর গোটা জেলার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে শুধুই বাজছে বিষাদের সুর । চারিদিকে শুধুই শোনা যাচ্ছে স্বজন হারাদের কান্নার রোল ।

স্বজন হারানোর যন্ত্রনায় ভেঙে পড়ছেন পরিবারের সদস্যরা। নিহত ও আহতদের পরিবারের পাশে সব রকম ভাবে থাকার আশ্বাস ইতিমধ্যেই দিয়েছে রাজ্য সরকার। সরকারের দেওয়া সেই আশ্বাসের দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন স্বজনহারা , নিখোঁজ ও আহত পরিবারের সদস্যরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × one =