নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন – আড়ি পাততে ইসরায়েল থেকে পেগাসাস কিনেছে ভারতও

                                                                                                 বিজ্ঞাপন

পেগাসাস নিয়ে ভারতীয় রাজনীতির আবার উত্তপ্ত হয়ে ওঠার পেছনে রয়েছে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদন। তদন্তধর্মী সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে ভারত সরকার ইসরায়েল থেকে ফোনে আড়ি পাতার জন্য ব্যবহৃত পেগাসাস স্পাইওয়্যার প্রযুক্তি কিনেছিল। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারত-ইসরায়েলের মধ্যে মোট ২০০ কোটি ডলারের ওই চুক্তির মধ্যে পেগাসাস ছাড়াও ছিল অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা।

অভিযোগ, ওই প্রযুক্তির সাহায্যে সরকার দেশের রাজনৈতিক নেতা, আইনজীবী, বিচারপতি, সাংবাদিক, শিল্পপতি, সমাজকর্মী, গণ-আন্দোলনকারী নেতা, মানবাধিকারকর্মীসহ বহু মানুষের ফোনে আড়ি পেতেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসরায়েলি সংস্থা এনএসও এক দশক ধরে ওই প্রযুক্তি বিভিন্ন দেশের সরকার ও সরকারি সংস্থাকে বিক্রি করে আসছে। ২০১৭ সালে ‘হিন্দু জাতীয়তাবাদের’ জোয়ারে ভেসে প্রধানমন্ত্রী হয়ে নরেন্দ্র মোদি ইসরায়েল সফরে যান।

কোনো ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সেটাই ছিল প্রথম ইসরায়েল সফর। সেই সফরে দুই প্রধানমন্ত্রী মোদি ও নেতানিয়াহুকে খালি পায়ে সমুদ্রসৈকতে হাঁটতে দেখা গিয়েছিল।

ওই সফরেই চুক্তি সম্পাদিত হয় বলে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে। ২৮ জানুয়ারি প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনের শিরোনাম ‘দ্য ব্যাটল ফর দ্য ওয়ার্ল্ডস মোস্ট পাউয়ারফুল সাইবারওয়েপন’। লেখক রণেন বার্গম্যান ও মার্ক মাজেট্টি। তাঁরা লিখেছেন, চুক্তি সইয়ের মাস কয়েকের মধ্যেই নেতানিয়াহু ভারত সফরে আসেন। তারপর ২০১৯ সালের জুন মাসে জাতিসংঘে ইসরায়েলের পাশে দাঁড়িয়ে জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদে ফিলিস্তিনকে পর্যবেক্ষকের মর্যাদা দেওয়ার প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভারত ভোট দেয়।

মোদি সরকার দেশদ্রোহ করেছে। এরপরই সংবাদ সম্মেলন ডাকেন রাজ্যসভার বিরোধী নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে ও কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা। তাঁরা বলেন, মোদি সরকার সংসদ ও সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। ধোঁকা দিয়েছে। সরকার ও তার মন্ত্রীরা দেশের মানুষের সঙ্গে মিথ্যাচার করেছে।

তাঁরা বলেন, খোদ প্রধানমন্ত্রী নিজেকে দাঁড় করিয়েছেন প্রশ্নের মুখে। সংসদে তাঁকে জবাবদিহি করতে হবে। তাঁরা বলেন, সর্বোচ্চ আদালতকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্টের উচিত নিজে থেকে শাস্তির ব্যবস্থা করা। কারণ, সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। তাঁকে বিভ্রান্ত করেছে।

আজ সন্ধ্যায় প্রাক্তন  সেনাপ্রধান ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভি কে সিং এই প্রতিবেদনকে নস্যাৎ করে টুইটে বলেন, নিউইয়র্ক টাইমস বিশ্বাসযোগ্য ? ওরা সুপারি মিডিয়া (টাকা নিয়ে কাজ করে) বলে পরিচিত।

পেগাসাস নিয়ে সরকার সংসদ ও সুপ্রিম কোর্ট কোথাও স্পষ্ট করে সব তথ্য জানায়নি। সুপ্রিম কোর্টে সরকারের যুক্তি ছিল, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার স্বার্থে সবকিছু জানানো যাবে না।

সরকার পেগাসাস প্রযুক্তি কিনেছে কি না, তা-ও বলা যাবে না। সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতার যুক্তি ছিল, তেমন করা হলে সন্ত্রাসবাদীরা সচেতন হয়ে যাবে। সরকারি যুক্তি অগ্রাহ্য করে সুপ্রিম কোর্ট এক বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়ে দিয়েছেন। ওই প্রযুক্তির সাহায্যে সাধারণ নাগরিকদের ফোনে আড়ি পাতা হয়েছে কি না, বিশেষজ্ঞরা তা তদন্ত করছেন।

এই বিষয়ে বিজেপির এক সূত্র শনিবার  বলেন, বিরোধীরা যত যা-ই করুক, সংসদে এ বিষয়ে সরকার কিছুই বলবে না। কারণ, বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × two =