সজল দাশগুপ্ত :: সংবাদ প্রবাহ :: দার্জিলিং :: বুধবার ৩১,মে :: তেনজিং নোরগে জন্ম ২৯ মে, ১৯১৪ , মৃত্যু ৯ মে, ১৯৮৬ । তাঁর খ্যাতি গোটা বিশ্বজুড়ে, তিনি একজন নেপালী শেরপা পর্বতারোহী ছিলেন। তিনি ও এডমন্ড হিলারি ১৯৫৩ সালের ২৯শে মে মিলিত ভাবে সর্বপ্রথম পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্ট পর্বত জয় করবার সাহসিকতা দেখিয়েছিলেন, পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ তাদের দুজনের কাছে নতি স্বীকার করেছিল।
তেনজিং নোরগের আসল নাম নামগিয়াল ওয়াংদি, ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসের শেষের দিকে নেপালের শোলোখুম্বু জেলার ত্সে-ছু গ্রামে এক শেরপা পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। রংবুক বৌদ্ধবিহারের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান লামা ঙ্গাগ-দ্বাং-ব্স্তান- দ্জিন-নোর-বু তাঁর নাম পরিবর্তন করে তেনজিং নোরগে নাম রাখেন।
ছোটবেলায় তেনজিংকে স্থানীয় এক বৌদ্ধমঠে লামা হওয়ার জন্য শিক্ষানবিশী করতে পাঠানো হয়, তবে তিনি কিছুদিনের ভিতর সেই স্থান থেকে পালিয়ে চলে যান।এরপর ১৩ বছর বয়সে তিনি নিজের বাড়ি থেকে কাঠমান্ডু পালিয়ে যান । পুনরায় ছয় সপ্তাহ পরে আবার ফিরে আসেন।
১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দে ১৮ বছর বয়সে অর্থ উপার্জনের করবার উদ্দেশ্য তেনজিং বারো জন সঙ্গীর সাথে দার্জিলিং শহরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন, তবে সেই সময় ভারত-নেপাল সীমান্তে তাদের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এরপর তেনজিংকে এক স্থানীয় নেপালী আশ্রয় দেন।
সেখান থেকেই তিনি দার্জিলিংয়ের নিকটে আলুয়াবাড়ীতে যান, দুধ বিক্রি করা শুরু করেন।
কিছুদিন পরে তেনজিং দার্জিলিং এর একটি বস্তিতে বসবাস শুরু করেন। ১৯৩৫ সালে দাওয়া ফুটি নামক এক শেরপা মেয়েকে বিবাহ করেন।
১৯৩৫ সাল থেকে শুরু করে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত কয়েকবার অভিযান বিফল হয়ে তার।এর পর ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে জন হান্টের নেতৃত্বে ব্রিটিশদের এভারেস্ট পর্বত অভিযানে তিনি অংশগ্রহণ করেন। মার্চ মাসে বেস ক্যাম্প তৈরী করে এরপর দলটি ৭,৮৯০ মিটার (২৫,৮৮৬ ফু) উচ্চতায় আরোহণ করে । সাউথ কলে তাদের শেষ শিবির স্থাপন করে।
২৬শে মে টম বুর্দিলঁ ও চার্লস ইভান্স শৃঙ্গজয়ের প্রচেষ্টা করেন , তবে ইভান্সের অক্সিজেন সরবরাহকারী ব্যবস্থায় গন্ডগোল দেখা যায়। এরপর তাঁরা শৃঙ্গ থেকে ৩০০ ফুট নিচে থেকে ফিরে আসতে বাধ্য হন। এরপর দলপতি হান্ট তেনজিং ও নিউজিল্যান্ডের পর্বতারোহী এডমন্ড হিলারিকে শৃঙ্গজয়ের চেষ্টা করার জন্য নির্দেশ দেন।
২৮শে মে তাঁরা আং ন্যিমা, আলফ্রেড গ্রেগরি ও জর্জ লোর সহায়তায় ৮,৫০০ মিটার (২৭,৮৮৭ ফু) উচ্চতায় তাঁদের শিবির স্থাপন করেন। ন্যিমা, গ্রেগরি ও লো নিচে ফিরত যান। হিলারির জুতো সারা রাত তাঁবুর বাইরে থাকার কারণে পরদিন সকালে সেগুলি জমে যায়,
এরপর দুই ঘণ্টা ধরে দুইজনে সমবেত ভাবে চেষ্টা করেন সেগুলিকে পুনরায় আগের অবস্থায় নিয়ে আসার, ও ত্রিশ পাউন্ড ওজনের সরঞ্জাম নিয়ে তাঁরা শৃঙ্গ আরোহণ করার চেষ্টা শুরু করেন।
শৃঙ্গের ঠিক নিচে চল্লিশ ফুটের খাড়া একটি পাথরের দেওয়াল ছিল,সেখানকার একটি খাঁজ ধরে হিলারিও তাঁকে অনুসরণ করে। তেনজিং আরোহণ করেন সকাল ১১:৩০ মিনিটে , তিনি এভারেস্ট পর্বত শৃঙ্গ জয় করতে সক্ষম হন, পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ নেপালি শেরপার নিকট নত স্বীকার করে।
পর্বতশৃঙ্গে তাঁরা পনেরো মিনিট ছিলেন। এই সময় কালে হিলারি তেনজিংয়ের ছবি তোলেন এই আলোকচিত্রে তেনজিংকে তাঁর বরফ-কুঠার তুলে ধরে থাকতে দেখা যায়। তাঁর বরফ-কুঠারে জাতিসংঘ, ইংল্যান্ড, নেপাল ও ভারতের পতাকা লাগানো ছিল।

