নেশা মুক্তি কেন্দ্রে চিকিৎসার নামে মাদকাসক্ত যুবকদের মারধর করার অভিযোগ উঠেছে মালদায়।

কুমার মাধব :: সংবাদ প্রবাহ :: মালদা :: মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার তুলসিহাটায় একটি নেশা মুক্তি কেন্দ্রে চিকিৎসার নামে মাদকাসক্ত যুবকদের মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। মারধরের মুখে নেশাগ্রস্ত যুবকদের চিৎকারের আওয়াজ ঢাকতে জোরে জোরে ডিজে বাজানো হতো ওই নেশা মুক্তি কেন্দ্রে। দেওয়া হতো না পর্যাপ্ত ওষুধ। ওষুধ চাইলেই বেধড়ক মার অশ্লীল গালিগালাজ দেওয়া হতো মাদকাসক্তদের।

প্রথমে বিনামূল্যে গরিব ঘরের মাদকাসক্ত যুবকদের চিকিৎসা করার প্রলোভন দেখিয়ে টেনে আনা হতো এই নেশা মুক্তি কেন্দ্রে। তারপরে রোগীদের আটকে রেখে পরিবারগুলিকে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা আদায় করা হতো। সারাদিন রোগীদের শুকনো মুড়ি জল খাইয়ে রাখা হতো। কোন রোগী প্রতিবাদ করলে তাদের দিয়ে নোংরা হয়ে থাকা শৌচালয় বাথরুম পর্যন্ত খালি হাতে পরিষ্কার করানো হতো। মাদকাসক্ত যুবকদের মারার জন্য রাখা হয়েছিল বিশেষ ধরনের লাঠি।

এমনটাই গুরুতর অভিযোগ উঠে এসেছে হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার তুলসিহাটা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় গড়ে ওঠা এক নেশা মুক্তি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য দিবালোকে এই ধরনের কাজ নেশা মুক্তি কেন্দ্র দিনের-পর-দিন ঘটে চলেছে। এমনকি গতকাল রবিবার এই নেশা মুক্তি কেন্দ্রের কর্মচারীদের বেধড়ক মারধরের মুখে পড়ে হরিশ্চন্দ্রপুরের এক মাদকাসক্ত যুবকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে |

অভিযোগ করেছেন এলাকার বাসিন্দা এবং স্থানীয় তৃণমূল ও বিজেপি নেতৃত্ব। ওই যুবকের নাম শওকত আলী (৩২)। বাড়ি হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার সদলিচক গ্রাম পঞ্চায়েতের তালগ্রাম হাটের পশ্চিম পাড়ায়।

এমনকি ওই মাদকাসক্ত যুবকের দেহ লোপাট করার অভিযোগ উঠেছে ওই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে। ওই কেন্দ্রে গতকাল যুবকটির মৃত্যু হলে তাকে তড়িঘড়ি হরিশচন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসককে ডাকা হয়েছিল মৃতদেহ পরীক্ষার জন্য। কিন্তু হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃতদেহ পরীক্ষা করার আগেই ওই ব্যক্তির দেহ গাড়িতে করে নিয়ে চম্পট দেয়।

ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল তুলসিহাটায় তদন্ত করতে গেলে মৃত দেহ লুকিয়ে ফেলার চেষ্টা করা হয়। এমনকি তড়িঘড়ি করে মৃতদেহ পরিবারের লোকের হাতে তুলে দেওয়া হয়। মৃত ব্যক্তির পরিবারকে হুমকি দেওয়া হয় প্রকাশ্যে মুখ না খুলতে। মৃত ব্যক্তির পরিবারের লোক দেরি না করে মৃতদেহ কবরস্থ করে দেয়। এমনকি নেশা মুক্তি কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের চাপে ওই মৃত ব্যক্তির পরিবার পুলিশেও অভিযোগ জানায়নি।

ওই মৃত ব্যক্তির দেহ ময়নাতদন্ত করা হয়নি। এই ঘটনা নিয়ে ওই নেশা মুক্তি কেন্দ্র কর্ণধারের একটি অডিও রেকর্ডিং ভাইরাল হয়েছে। গোটা ঘটনা ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকায়। গোটা ঘটনায় পুলিশ প্রশাসন কেন নিশ্চুপ রয়েছে এই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার বাসিন্দা এবং রাজনৈতিক দলের নেতারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 + eleven =