বন্যা-ত্রাণ দুর্নীতি নিয়ে সিএজি কে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।আট সপ্তাহের মধ্যে জমা দিতে বলা হয়েছে রিপোর্ট আর তাই নিয়ে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠির মধ্যে তরজা শুরু

নিজস্ব সংবাদদাতা :: সংবাদ প্রবাহ :: মালদহ :: ২৮শে,এপ্রিল :: বন্যা-ত্রাণ দুর্নীতি নিয়ে সিএজি কে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।আট সপ্তাহের মধ্যে জমা দিতে বলা হয়েছে রিপোর্ট।আর সেই তদন্তের নির্দেশ দিতেই বন্যা-ত্রাণ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত তৃণমূল নেত্রীর গ্রেপ্তারির দাবিতে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ এলাকাবাসীর।এলাকাবাসীর দাবি তাদের প্রাপ্য টাকা আত্মসাৎ করেছেন তৃণমূল নেত্রী।

সেই টাকা ফেরত দিতে হবে তাদের। আর এই বিক্ষোভের ঘটনা সামনে আসতেই দ্বিধাবিভক্ত শাসক শিবির।বিচারাধীন বিষয় বলে একদিকে বিধায়ক সাফাই দেওয়ার চেষ্টা করলেও অন্যদিকে দুর্নীতির কথা মেনে নিয়েছেন পঞ্চায়েত সমিতির বন ও ভূমি কর্মাধক্ষ্য। বন ও ভূমি কর্মাধক্ষ্যর দাবি দুর্নীতি হয়েছে বলেই মানুষ বিক্ষোভ করছে।এমনকি সিবিআই তদন্তেরও দাবীও জানিয়েছেন তিনি।

অপরদিকে অভিযুক্ত তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে এই বিষয় যোগাযোগ করার চেষ্টা হলেও ফোন তোলেন নি তিনি।সমগ্র ঘটনায় শাসকদলকে এক হাত নিয়েছে বিজেপি।জেলায় অভিষেক ব্যানার্জীর নবজোয়ার যাত্রার প্রাক্কালে ব্যাপক অস্বস্তিতে তৃণমূল। ২০১৭ সালে ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল মালদার হরিশ্চন্দ্রপুরে। বন্যার কবলে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়েছিল বহু মানুষ।এখনো বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে গেলে শোনা যায় মানুষের হাহাকার।

ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিয়েছিল সরকার। কিন্তু বন্যা ত্রাণের সেই টাকা নিয়ে হরিশ্চন্দ্রপুরের দুইটি ব্লকে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠে।হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লক পঞ্চায়েত সমিতিতে ৩ কোটি ৫৪ লক্ষ এবং বড়ই গ্রাম পঞ্চায়েতে ৭৬ লক্ষ টাকা দূর্নীতির অভিযোগ উঠে।দুর্নীতিতে নাম উঠে আসে শাসকদলের বেশ কয়েকজন জন-প্রতিনিধি এবং নেতার।

যাদের মধ্যে বড়ই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সোনামণি সাহা সহ তৃণমূলের কয়েকজনকে ইতিমধ্যে জেল খাটতে হয়েছে। কিন্তু এলাকাবাসী এবং বিরোধীদের অভিযোগ অনুযায়ী এই বন্যা-ত্রাণ দুর্নীতির মাস্টারমাইন্ড হিসাবে বারবার শিরোনামে যার নাম উঠে এসেছে তিনি হলেন হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লক পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যা তথা হরিশ্চন্দ্রপুর ১(বি) ব্লক মহিলা তৃণমূলের সভানেত্রী সুজাতা সাহা।

এবার সেই সুজাতা সাহার গ্রেপ্তারির দাবিতেই শুক্রবার তুলসিহাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত আঙ্গারমুনি গ্রামে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখালো এলাকার সাধারণ মানুষ। এলাকাবাসীর অভিযোগ বন্যায় তাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল।কিন্তু তারা তাদের প্রাপ্য টাকা পায়নি।সেই টাকা আত্মসাৎ করেছেন তৃণমূল নেত্রী সুজাতা সাহা। তাদের প্রাপ্য টাকা তাদেরকে ফেরত দেওয়ারও দাবি তুলেছে এলাকাবাসী।

প্রসঙ্গত হরিশ্চন্দ্রপুরের প্রাক্তন বিধায়ক মোস্তাক আলমের করা মামলায় কিছু দিন আগেই এই দুর্নীতিতে সিএজি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।আর সেই নির্দেশের পরেই এই বিক্ষোভের ঘটনায় রীতিমতো শোরগোল পড়ে গেছে এলাকায়।এদিকে এই ঘটনা নিয়ে তৃণমূল শিবিরের মধ্যে মতানৈক্য দেখা গেছে।

একদিকে চাঁচল বিধানসভার বিধায়ক নিহাররঞ্জন ঘোষের মতে বিচারাধীন বিষয়ে কাউকে দোষী বলা যায় না। এই ধরনের বিক্ষোভ তৃণমূলকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা। অন্যদিকে হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লক পঞ্চায়েত সমিতির ভূমি ও বন কর্মাধ্যক্ষ আদিত্য মিশ্র বিধায়কের মতের সম্পূর্ণ বিপরীতে গিয়ে এলাকাবাসীর বিক্ষোভকে যুক্তিসঙ্গত বলে মনে করছেন। সাথে তার বিস্ফোরক অভিযোগ সুজাতা সাহার স্বাক্ষর জাল করা হয়নি।

উল্লেখ্য, তৃণমূল নেত্রী সুজাতা সাহা দাবী করেছিলেন তার স্বাক্ষর জাল করে দুর্নীতি করা হয়েছে। এমনকি সমগ্র ঘটনায় এক ধাপ এগিয়ে সিবিআই তদন্তের দাবী জানিয়েছেন আদিত্য মিশ্র। স্বাভাবিক ভাবে সমগ্র ঘটনা সামনে আসতেই তৃণমূলকে খোঁচা দিতে ছাড়েনি বিজেপি। আর জেলায় অভিষেক ব্যানার্জীর নবজোয়ার যাত্রার প্রাক্কালে এই ঘটনায় ব্যাপক অস্বস্তিতে তৃণমূল। তুঙ্গে রজনৈতিক তরজা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ten − nine =