সুদেষ্ণা মন্ডল :: সংবাদ প্রবাহ :: সুন্দরবন :: সুন্দরবনের বাস্তুতন্ত্রকে রক্ষা করতে এবার কচ্ছপের পর সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী ও খালের ছাড়া হলো কুমির। এবছর নতুন করে বন বিভাগের পক্ষ থেকে ৩৫টি প্রজননক্ষম কুমির ছাড়া হল সুন্দরবনের অভায়ারণ্যতে।
সুন্দরবনের কলমি নদী, ভাইজোড়া খাল এবং লোথিয়ান দ্বীপের কাছে এই কুমিরগুলিকে ছাড়া হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি পুরুষ কুমির এবং ৩২টি স্ত্রী কুমির রয়েছে বলেও বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।
যে কুমিরগুলি ছাড়া হয়েছে তাদের আনুমানিক দৈর্ঘ্য চার ফুট। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডিএফও মিলন মণ্ডল, এডিএফও এবং রামগঙ্গার ফরেস্ট রেঞ্জ অফিসার তন্ময় চট্টোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে এই কুমিরগুলি ছাড়া হয়। গত বছর সুন্দরবনের বিভিন্ন নদীতে ৫৫ টি কুমির ছাড়া হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে বিভাগীয় বনাধিকারিক মিলন বলেন, প্রতিবছর কুমিরের সংখ্যা কমতে থাকায় কুমির প্রতিপালন করে নদীতে ছাড়া শুরু হয়েছিল। এর ফলে কুমিরের সংখ্যা বেড়েছে। গত বছর সুন্দরবনে ৫৫টি কুমির ছাড়া হয়েছিল। এইবার ৩৫টি কুমির ছাড়া হল।
বনদপ্তর সূত্রের খবর,১৯৭৬ সাল থেকে পাথরপ্রতিমার ভগবৎপুরে প্রথম কুমিরের ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা প্রতিপালন করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। ১৯৮২ সাল থেকে প্রতিবছরই সুন্দরবনের নদী ও খাঁড়িতে নোনা জলের কুমির ছাড়ছে বন দফতর।সেখানে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হওয়ার পর ৪ বছর পর্যন্ত বাচ্চা কুমিরগুলোকে রাখা হয়। নোনা জলে বেঁচে থাকার জন্য উপযুক্ত হয়ে উঠলেই সুন্দরবনের গভীরে নদী ও খাঁড়িতে ছেড়ে দেওয়া হয়।
কোনও কুমির সাড়ে চার ফুট বা তার বেশ লম্বা হলে তবেই প্রকৃতিতে ছাড়ার উপযুক্ত বলে বিবেচনা করেন বনকর্মীরা। এমনকি সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় কুমিরের ডিম পাওয়া গেলে তা উদ্ধার করে ভগবতপুরে নিয়ে আসা হয়। সেই ডিম ফুটে যেমন কুমিরের বাচ্চা হয়। পাশাপাশি কুমির প্রকল্পে ‘ব্রিডিং পুল’-এ রাখা প্রজনন সক্ষম কুমিরদের ডিম সংগ্রহ করে হ্যাচারিতে কৃত্রিম ভাবে তা ফোটানো হয়।
তবে প্রথম থেকেই কুমিরদের বিভিন্ন রকম ট্যাঙ্কের মধ্যে রেখে প্রতিপালন করা হয়। ৪ বছর বয়সে কুমিরগুলো গড়ে চার ফুট মত লম্বা হলেই নোনা জলে ছাড়ার তোড়জোড় শুরু করা হয়। যেহেতু শীতের সময় সুন্দরবন অঞ্চলের নদীতে জল কম থাকে এবং নদীসংলগ্ন খাঁড়িগুলো প্রায় শুকনো থাকে তাই এই সময়কে কুমির ছাড়ার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে বলে বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে।