বর্ধমান শহরের পশ্চিমে লাখুড্ডিপাড়ার জলকলের কাছে অবস্থিত দুর্লভা কালী মন্দির একটি প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো প্রাচীন মন্দির

নিজস্ব সংবাদদাতা :: সংবাদ প্রবাহ :: বর্ধমান :: শুক্রবার ১০,অক্টোবর :: বর্ধমান শহরের পশ্চিমে লাখুড্ডিপাড়ার জলকলের কাছে অবস্থিত দুর্লভা কালী মন্দির একটি প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো প্রাচীন মন্দির, যা একসময় ঘন জঙ্গলে ঘেরা ছিল এবং তাই দেবী “দুর্লভা কালী” নামে পরিচিত।

এই মন্দিরের মূল আকর্ষণ হল অষ্টধাতুর ‘কমলাত্নিকা’ বিগ্রহের মাথায় একটি গর্ত থেকে বের করে আনা ৮-৯ ইঞ্চি পাথরের দুর্লভা কালী বিগ্রহ, যা মন্দিরের রহস্যময় প্রথা ও বিশ্বাসকে আরও বাড়িয়ে তোলে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় শিয়ালদের ভোগ খাওয়ানোর এক অলৌকিক প্রথাও এই মন্দিরের সঙ্গে জড়িত।গোকুলানন্দ নামক এক সাধক এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন বলে কথিত আছে। পূর্বে ঘন জঙ্গলে ঘেরা থাকার কারণে দেবীর দর্শন দুর্লভ ছিল, তাই দেবীর নাম ‘দুর্লভা কালী’। মন্দিরে প্রতিদিন সন্ধ্যায় শিয়ালদের ভোগ খাওয়ানো হয়, যা এই মন্দিরের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। মন্দিরের পিছনে সাধক গোকুলানন্দ ব্রহ্মচারীর একটি সমাধি রয়েছে বলে জানা যায়।

গোকুলানন্দ ব্রহ্মচারী তাঁর পৈতের পর বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন এবং ঘুরতে ঘুরতে জঙ্গল ঘেরা লাকুড্ডিতে আসেন ।এখানেই শুরু করেন মা কালীর আরাধনা। একদিন দেবী গোকুলানন্দকে স্বপ্নাদেশ দেন।

তিনি স্থানীয় পুকুরে স্নান করতে গিয়েছিলেন, সেই সময়ে তাঁর পায়ে একটি পাথরে ঠেকে। তিনি ওই পাথরটিকে তুলে নিয়ে এসে প্রতিষ্ঠা করেন।

সন্ন্যাসী গোকুলানন্দ তার পরেই লাকুড্ডি জঙ্গলে মা দুর্লভার আরাধনা শুরু করেন। প্রথমে তালপাতার ছাউনি করে মা দুর্লভা কালীর আরাধনা শুরু হয়। সেই পুজো শুরুর পর, বর্ধমানের মহারাজা বিজয়চাঁদ মহতাব এক দিন জঙ্গলে শিকার করতে গিয়ে দেখতে পান, তালপাতার ছাউনিতে এক সন্ন্যাসী বসে সাধনা করছেন।

কথিত আছে, সেইদিন ছিল অমাবস্যার রাত। বিজয়চাঁদ মহতাবকে তিনি অমাবস্যাতেও পূর্ণিমার চাঁদ দেখিয়ে ছিলেন। তাঁর এই অলৌকিক ক্ষমতায় মুগ্ধ হয়ে মহারাজা বিজয়চাঁদ মহতাব তাঁকে মন্দির তৈরির জন্য জমি দান করেন। লুকুড্ডি এলাকায় গড়ে ওঠে মন্দির। সেখানে প্রতিষ্ঠা করা হয় দেবী দুর্লভার মূর্তি।

মন্দিরের মধ্যে রয়েছে পঞ্চমুণ্ডির আসনও। পাশেই তৈরি করা হয় বেশ কয়েকটি শিব মন্দির।এই মন্দিরে এখনও ডাকাতরা ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে এখানে পুজো দিয়ে তবে ডাকাতি করতে যায় বলে এখানকার পুরোহিত জানায়। দুর্গাপুজোর সময় চার দিন ধরে মা দুর্লভার পুজো হয় ও দীপান্বিতা কালীপুজোর সময় রাতভর পুজো হয় এখানে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

17 − 11 =