সুদেষ্ণা মন্ডল :: সংবাদ প্রবাহ :: বারুইপুর :: আলোর উৎসব দীপাবলি । আর দীপাবলি ও কালী পুজোর রাতে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলে দেখা যায় শুধু রঙিন আলোর ছটা। হাজার হাজার আতশবাজির মেলা। গতবছর করোনাকালে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল বাজি ব্যবসায়ীরা। এবছর হাইকোর্টের নির্দেশকে কার্যত চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় ব্যবসায়ীরা ।
সুপ্রিম কোর্টের আদেশে কিছুটা হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ এলাকার বাজি ব্যবসায়ীরা। যদিও পরিবেশবান্ধব বাজি কোন গুলি এখনো পর্যন্ত পুরোপুরি চিহ্নিত করতে পারেনি ব্যবসায়ীরা । ফলস্বরূপ ধন্দের মধ্যে পড়েছে ব্যবসায়ীরা।
দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ুর শিবকাশীর মতোই এ রাজ্যে বারুইপুরের চম্পাহাটি, হাড়াল , সোলগোয়ালীয়া , বেগমপুর এলাকার প্রধান অর্থনীতি বাজি শিল্পের উপর নির্ভরশীল। আদালতের একের পর এক রায়ে আজ সেই বাজির ব্যবসা অস্তিত্বের সঙ্কটে ভুগতে শুরু করেছে। বিভিন্নপুজো, বড়দিন , ঈদ এ বাজির প্রচুর চাহিদা থাকলেও দীপাবলী ও জগদ্ধাত্রী পুজোর , সময় বাজির জোগান দিতে বেশ কয়েক মাস আগে থেকেই বিপুল টাকা ঋণ নিয়ে বাজির মালমশলা তোলে বাজি ব্যবসায়ীরা ।
এখানকার তৈরি বাজি শুধু জেলায় নয় পাড়ি দেয় গোটা রাজ্য তথা ভিন রাজ্যেও ।কিন্তু গত বছর করোনার জেরে বাজি বিক্রি নিষিদ্ধ হয়ে যায়। এ বছরও কলকাতা হাইকোর্ট সারা রাজ্যে বাজি বিক্রি নিষিদ্ধ করে দেওয়ায় খাদের কিনারে এসে দাঁড়িয়েছে বাজির উপর নির্ভরশীল কয়ে হাজার পরিবার ।
১৯৬০ সালে বাজি তৈরির কাজ শুরু হয় স্থানীয় বেগমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের হাড়ালে । চম্পাহাটি, বেগমপুর ও সাউথ গড়িয়া তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ১৯টি গ্রামে কুটির শিল্প হিসেবে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বাজি শিল্প। যে শিল্পে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছে ২০ থেকে ৩০ হাজার মানুষ। মূলত কালীপুজোর বাজারকে কেন্দ্র করে এই বাজির ব্যবসা বছরে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায় ।
পরিবেশ বান্ধব বাজি ব্যবহার এর কথা বলে তাই বেশ সম্যসায় পড়েছে তারা । তবে সব থেকে বড় বিপদে পড়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি বাজি ব্যবসায়ী ও কারিগররা। বড় ব্যবসায়ীদের থেকে তারা বাজি কিনে নিজেদের বাড়িতে বা রাস্তার ধারে কালীপুজোর সময় দোকান দিয়ে বছরে তিন-চার লাখ টাকার ব্যবসা করত।
হাড়ালের অন্যতম বাজি ব্যবসায়ী অর্জুন মন্ডল বলেন, ব্যবসা প্রায় বন্ধ বলা চলে। হাজার হাজার মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। আগামী দিনে বাজি ব্যবসাকে বাঁচিয়ে রাখা খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। এমনি বাজি এবছর কম তৈরী হয়েছে । সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ আসর পর কিছু ব্যবসায়ী তাদের দোকান খুলে অল্প পসার সাজিয়ে বসেছে । কিন্তু অন্যান্য বছরগুলিতে যে পরিমাণ ক্রেতার দেখা মিলত সেই পরিমাণ ক্রেতার দেখা মিলছে না । বাজি শিল্প চরম সংকটের মধ্যে পড়েছে । রাজ্য সরকারের উচিত এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে কিছু একটা বিশেষ ব্যবস্থা করা ।