আনন্দ মুখোপাধ্যায় :: সংবাদ প্রবাহ ডট কম :: ৩রা জুলাই :: কোলকাতা :: আমাদের মনে আছে ২০১১ সালে যখন তৃণমূল সরকারে আসে ঠিক সেই সময় শুরু হয়েছিল দলবদল আর আদি ও নব্য তৃণমূলের দ্বন্দ সেদিন গোটা তৃণমূল নেতৃত্বকেই একটা অস্বস্তিকর পরিমন্ডলের মধ্যে পড়তে হয়ে ছিল ।ঠিক একই ভাবে গেরুয়া শিবিরের অন্দরেই যে ভাবে প্রতিদিন সংঘাত বাধছে, তাতে বিজেপিতে আদি-নব্য মিশ না খাওয়ার বার্তাটাই প্রকট হয়ে উঠেছে। ভোটের মরসুমে যা রীতিমতো চিন্তায় ফেলেছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে।
ক’দিন আগেই দলীয় কর্মীদের বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন বাঁকুড়ার নব্য বিজেপি নেতা জয়ন্ত মিত্র। তাঁর গাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান বিজেপির আদি কর্মীরা। দফায় দফায় ‘সালিশি সভা’ বসিয়েও দলের রাজ্য নেতারা জয়ন্তর সঙ্গে আদি নেতাদের ‘মিলমিশ’ করাতে পারেননি। কিছুদিন আগেই রাজারহাট-নিউটাউন বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি মণ্ডল সভাপতি বিশ্বজিৎ সর্দার আক্রান্ত হয়েছেন। অভিযোগের তির নব্য বিজেপির দিকে। রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে চিঠি লিখে স্থানীয় নব্য বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে তিনি ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তিনি ।
দলের অন্দরের খবর, নব্য-আদি বিবাদ নিয়ে সতর্ক অবস্থান নিতে চাইছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। অন্য দলের জেলা স্তরের কোনও নেতাকে নেওয়ার ক্ষেত্রে স্থানীয় আদি বিজেপি নেতাদের মতামত চাওয়া হচ্ছে। ইদানীং প্রতিটি জেলায় ‘যোগদান মেলা’ কর্মসূচি শুরু করেছেন দিলীপরা। মঞ্চ বেঁধে অন্য দলের কর্মীদের হাতে পদ্ম-ঝান্ডা তুলে দেওয়া হচ্ছে সেখানে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশে এই মেলার ভার পুরোপুরি দেওয়া হয়েছে দলের আদি নেতাদের উপরে।
বিশেষ প্রয়োজন না-পড়লে সেখানে রাজ্য নেতারা নাক গলাচ্ছেন না। কিন্তু তা সত্ত্বেও আদি-নব্য বিবাদ ঠেকাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বিজেপির শীর্ষ নেতাদের। এই পরিস্থিতিতে দল আরও বাড়লে সংঘাত কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, সেটাই এখন ভাবাচ্ছে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বকে।
আরও একটি ঘটনা বিজেপি এবং তৃণমূল এই দুই দল ছাড়াও যারা এভাবে দলবদল করতে চাইছেন তাদেরও বেশ গভীর সতর্কবাণী দিয়েছে । আমি আসানসোলের তৃণমূল নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারির কথাই বলছি । জিতেন্দ্র তিওয়ারি নানান প্রলোভনে এবং রাজনীতির মারপ্যাঁচে পড়ে দুম করে তৃণমূল ত্যাগ করে বিজেপির দিকে হাত বাড়ালেন । বিজেপির নেতৃত্বের কয়েকজন রাজিও হয়ে গেছিলেন কিন্তু ব্যাড সাধে আদি বিজেপির একাংশ এমনকি জেলার মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ই বেঁকে বসেন । মুখে না বললেও বেশ দ্বিধায় পরে যায় বিজেপির হাইকমান্ড ।
এদিকে বেকায়দার আঁচ করেই জিতেন্দ্র আবার তৃণমূলে ফিরতে চান কিন্তু সব পদ হারিয়ে তাঁকে নিধিরাম সর্দার করে দেওয়ায় তিনি রাতের আঁধারে কলকাতারই একটি পাঁচ তারা হোটেলে রাতের আঁধারে বিজেপির দুয়ারে পৌঁছে যায় । কিন্তু সেখান থেকেও তেমন কোনো আশ্বাস পাননি জিতেন্দ্র তিওয়ারি । কারন একটা কথা ঠিকই যে জিতেন্দ্রকে বিজেপিতে নিলে আসানসোলের শিল্পাঞ্চপলে নির্বাচনের আগে তুলকালাম কান্ড হতে পারে । আদি বিজেপিরা কোনোমতেই জিতেন্দ্রকে দলে মেনে নেবেন না ।
আরও একটি ব্যাপার নজরে এসেছে । গেলো কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর সঙ্গিণী বৈশাখী বন্দোপাধ্যা দোলে এসে রাজ্য দপ্তরে ঢুকবেন এবং বসবেন বলতেই কিন্তু জাতীয় স্তরের বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের রাজ্য দপ্তরের বসার ঘরটাই সটান শোভন বৈশাকীর জন্য বরাদ্দ হওয়াতে বিষয়টি নিশ্চয়ই মুকুলবাবু খুব আনন্দের সঙ্গে নেননি । এই অবস্থাতেও অতি নব্য বিজেপি বর্ধমানের সাংসদ সুনীল মন্ডল নতুন বিজেপি হয়েই হুঙ্কার ছেড়েছেন ‘আরও অনেকেই লাইনে আছে বিজেপিতে আসার জন্য। অন্তত ১৬-১৭ জন সাংসদ তৃণমূল থেকে বিজেপিতে আসবেনই।’ এই কথা শুনে একজন রাজনৈতিক ভাষ্যকার তো ব্যঙ্গ করে বলেই বাঙাল ভাষায় বলেই বসলেন ” কইয়েননা কইয়েননা দাদা গুরায় হাসবো ” ।
ঘোড়া হাঁসুক বা না হাঁসুক একটা কথা হলপ করেই বলা যায় আদি-নব্য বিবাদ ঠেকাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বকে ।