নিউজ ডেস্ক :: সংবাদ প্রবাহ :: কলকাতা :: রবিবার ১ ,জুলাই :: বিধানচন্দ্র রায় এক অসামান্য চিকিৎসক, যাঁর দুর্ধর্ষ এক ক্লিনিক্যাল আই ছিল । প্রশ্নাতীত রোগ নির্ণয় ক্ষমতা, বাংলার দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী, একদা কলকাতার মহানাগরিক, বিদেশ থেকে পাশ করে আসা এমআরসিপি, এফআরসিএস-এর ডিগ্রি; তাঁর এসব পরিচয় এখন বাঙালির কাছে অতীত।
কেবল রয়ে গিয়েছে বিধান রায় আর নীলরতন সরকারের মেয়ে, কল্যাণীর না পাওয়া প্রেমের গল্প। এ গল্প বাঙালির মুখে-মুখে, সর্বত্র শুধুই অপূর্ন প্রেমের প্রতি বিধান রায়ের আনুগত্যের কথা। আসলে, আমরা অপ্রাপ্তির গল্প শুনতে ভালোবাসি।
না পাওয়াতেই সুখ খোঁজে আমাদের অবচেতন মন। ওই যে বলে না দুঃখের গল্প গুলো আমাদের হৃদয়ের বড্ড কাছাকাছি থাকে। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে, একে না পাওয়া প্রেমকাহিনি, তারপরে এমন বিখ্যাত মানুষদের জীবনের ঘটনা। মানুষ যে সরস গল্প ফাঁদবেই, সে কথা বলাই বাহুল্য!
আর কী! এভাবেই বছরের পর বছর এই গল্প চলতেই থাকল আর বাড়তেই থাকল, টিভি, রেডিও, ইন্টারনেট, ইউটিউব, পোর্টাল থেকে সাধারণ জনমানসে, সর্বত্র শুধুই বিধান আর কল্যাণীর প্রেমের গল্প। ডিডিএলজে-র অমরেশ পুরীর মতো নীলরতন সরকার সে গল্পে, রাগী বাবার ভূমিকায়। কিন্তু সিনেমার মতো শেষটা ভালো হল না, মানে মধুরেণ সমাপয়েৎ হল না। ব্যাস, গল্প জমে ক্ষীর।
আর লোকজনকে এ-গল্প বলা থেকে আটকাবেন কী করে। বাংলার কাঁথি থেকে কলকাতা, আট থেকে আটান্ন হয়ে আশি সবাই এই কাহিনি বলে বেশ আত্মতৃপ্তি নিয়ে আসছে আজ প্রায় পাঁচ-ছয় দশক যাবৎ। হয়তো আজ কোথাও কোথাও বিধান রায়ের সঙ্গে এক মহিলার ছবিও ভেসে আসতে দেখতে পারেন, নিউজ ফিড স্ক্রল করতে করতে। দেখবেন লেখা আছে কল্যাণীর সঙ্গে বিধান, তা কিন্তু নয়, ওই ছবিতে বিধান রায়ের সঙ্গের মহিলাটি হলেন বিধান রায়ের মা অঘোরকামিনী দেবী।
এবার আসি যাকে নিয়ে এত কথা সেই কল্যাণীর কথায়, প্রচলিত ইতিহাস অনুযায়ী তিনি নীলরতন সরকারের কন্যা। একটু ঢুঁ মারা যাক এন আর এস-এর ফ্যামিলি ট্রি-তে। নীলরতন সরকার পাঁচ কন্যাসন্তানের জনক ছিলেন, তাঁরা হলেন নলিনী বসু, অরুন্ধতী চ্যাটার্জি, শান্তা সেন, মীরা সেন এবং কমলা চ্যাটার্জি।
এদের স্বামীরা হলেন যথাক্রমে, ডা: ডি এন বসু,কেদারনাথ চ্যাটার্জি, ভি এন সেন, সুশীল কুমার সেন, অশোক চ্যাটার্জি এবং অশোক চ্যাটার্জি। এরা প্রত্যেকেই তদানীন্তন সমাজের সুপ্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি, কেউ অধ্যাপক, কেউ সাংবাদিক, আবার এদের মধ্যে বিজ্ঞানী, শিল্প উদ্যোগীও রয়েছেন। এছাড়াও নীলরতন সরকারের একজন পুত্রও ছিলেন, তিনি হলেন অরুণ প্রকাশ সরকার।
কিন্তু কোথায় গেলেন বিধান রায়ের প্রেমিকা? ভারী আশ্চর্যের বিষয়! কোথায় আর যাবেন! ওই নামে নীলরতন সারকারের কোনো সন্তানই ছিল না। তাহলে মেয়ে আসবেনই বা কোথা থেকে, মেয়ে থাকলে তবে না প্রেম, তারপরে বিয়ে দেওয়া না দেওয়ার প্রশ্ন।
এর সঙ্গে অনেকেই আরেক গল্প জুড়ে পরিবেশন করেন। যেমন মেয়ের সঙ্গে বিয়ে না দেওয়ায় কারণে নীলরতন সরকারের সঙ্গে এরপর বিধান রায়ের সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায়,তাও এক ভ্রান্ত প্রচার বই কিছুই না। নীলরতন সরকার সঙ্গে বিধান রায়ের বরাবার সুসম্পর্ক বজায় ছিল, তিনি নীল রতনের চিকিৎসাও করতেন।
নীল রতনের স্ত্রী নির্মলা দেবী ১৯৩৯ সালে মারা যাওয়ার পরে,১৯৪০ নীলরতনের স্ট্রোক হয়, সেই সঙ্গে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণও। এই রোগ থেকে কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠার পরে বিধান রায়ের পরামর্শেই তিনি পুরী বেড়াতে গিয়েছিলেন। (সংগৃহিত)