মধু সংগ্রহ করতে গভীর জঙ্গলে রওনা দিচ্ছে মউলরা , মিললো ছাড়পত্র

সুদেষ্ণা মন্ডল :: সংবাদ প্রবাহ :: সুন্দরবন :: বুধবার ৯,এপ্রিল ::  সুন্দরবনের মানুষের অন্যতম পেশা হলো মাছ , কাঁকড়া ধরা ও মধু সংগ্রহ করা। আর এর মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য পেশা হল মধু সংগ্রহ করা। সাধারণত যারা মধু সংগ্রহ করে, তাদেরকে মউল বলে।এরা বছরের একটা নির্দিষ্ট সময় জঙ্গলে যায় এবং মধু সংগ্রহ করে।
জীবনের পরোয়া না করেই মৌলেরা জঙ্গলে যায় এবং নিজেরাও জানে জঙ্গল থেকে তাঁরা নাও ফিরতে পারে। তবুও জীবন-জীবিকার তাগিদে তাদের জঙ্গলে যেতে হয়, যুদ্ধ করতে হয় বাঘ, কুমির,বিষধর সাপেদের সাথে।সাধারণত ফাল্গুন মাসেই হেঁতাল গাছে ফুল ফোটে এবং তাঁর পরেই অন্যান্য গাছগুলিতে ফুল ফুটতে দেখা যায়।
যেমন,আষাঢ় মাসের প্রথম দিকে খলসে ফুল ফোটে আর মৌমাছিরা এই সময় জঙ্গলে তাদের বাসা তৈরি করে এবং মধু সংগ্রহ করে চাক পরিপূর্ণ করে। সাধারণত ফাল্গুন, চৈত্র, বৈশাখ এই তিন মাস মৌলেরা মধু সংগ্রহ করে। অন্য সময় জঙ্গলে মৌচাক থাকলেও তাতে তেমন মধু থাকে না।
কারণ অন্য সময়ে জঙ্গলের কোনো গাছে ফুল ফোটেনা ফলে মৌমাছিরা মধু সংগ্রহ করার পরিবর্তে বাসায় বসে মধু খেতে থাকে।এছাড়া ফাল্গুন চৈত্র মাসে তেমন ঝড় বৃষ্টি হয় না,ফলে মৌচাকের কোন ক্ষতি হয় না,আবার বৃষ্টি না হবার দরুণ ফুলের মধুতে জলের পরিমাণ কম থাকে ফলে মধু গাঢ় হয়। তাই ফাল্গুন চৈত্র এই দুই মাসই হল মৌলেদের মধু সংগ্রহের উপযুক্ত সময়।
মঙ্গলবার কুলতলির বিট অফিস থেকে পঞ্চাশের ৫৫টি দলকে পাশ দেওয়া হয়। প্রত্যেক টিমে পাঁচজন থেকে সাতজন করে থাকবে। এবারে বন দফতর আশা করছে ১০ টনের মত মধু তারা মৌলেদের কাছ থেকে সংগ্রহ করতে পারবে।
কুলতলী বিধানসভা বিভিন্ন এলাকা থেকে এই সমস্ত যে মৎস্যজীবী পরিবার আছে বা মৌলেরা এরা এই দিনটায় কুলতলী বিট ফরেস্ট অফিস থেকে পাস সংগ্রহ করে তারা বাড়ি থেকে তাদের গুরুজনদের আশীর্বাদ নিয়ে বেরিয়ে যায় ১৫ দিনের জন্য মধু আরোহন করতে।
উপস্থিত ছিলেন বনদপ্তরের ডিরেক্টর ও জয়েন্ট ডিরেক্টর সহ ডি এফ ও নিশা গোস্বামী, এডিএফও অনুরাগ চৌধুরী।প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও উপকরণ সংগ্রহ হয়ে গেলে পঞ্জিকা দেখে একটি ভালো দিন নির্বাচন করে এবং জঙ্গলের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে।
জঙ্গলে যাওয়ার পূর্বে মা বনবিবির উদ্দেশ্যে পুজো দেয়। ১০-১৫ দিনের খাবার সামগ্রী বাদেও তাঁরা সঙ্গে নেয় একটি বড় ‘দা’ বা ‘হেসো’, যা মধুর চাক কাটতে প্রয়োজন হয়।
দলে যে ক’জন লোক থাকে, প্রত্যেকের জন্য ছোট অথবা মাঝারি দা থাকে, এছাড়াও সঙ্গে থাকে বড় নেট জাল, ২-৩টি হাড়ি, বালতি, বড় মোটা দড়ি,খড়, প্লাস্টিকের ড্রাম, টিনের ড্রাম,
প্রত্যেকের জন্যএকটি কদাকার মুখোশ, দুটি গামলা প্রভৃতি। এ সবই তাদের মধু সংগ্রহ করার সময় প্রয়োজন হয়। মৌলেরা সাধারণত জোয়ারের জলেই গভীর জঙ্গলে প্রবেশ করার চেষ্টা করে।
এদের জঙ্গলের পথঘাট সবই জানা থাকে, ফলে কোন পথে গেলে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছানো যাবে তা সহজেই নির্ধারণ করে নেয়। এই ভাবেই চলে মৌলেদের জীবন জীবিকা মৃত্যুকে হাতে নিয়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eleven + 11 =