সুদেষ্ণা মন্ডল :: সংবাদ প্রবাহ :: সুন্দরবন :: রাত পেরিয়ে দিনের আলো ফুটেছে। তবু খাঁচায় ধরা পড়লনা কুলতলির লোকালয়ে চারদিন ধরে দাপিয়ে বেড়ানো দক্ষিণ রায়। সকালেই মিলেছে বাঘের নখের আঁচড়ের দাগ। আর তাতেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে শেখ পাড়া ও আদিবাসী পাড়ার আশেপাশেই রয়েছে সে।
কিন্তু, সেই বাঘের দেখা কোথায়! রাতভর পাহারা দিয়েও খাঁচায় পোরা যায়নি তাকে। যদিও, বনদফতরের কর্মীরা জানিয়েছেন, খাঁচার পরিধি ছোট করে আনা হচ্ছে। গ্রামবাসীদেরও সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
ইতিমধ্যেই গোটা এলাকা ঘিরে ফেলেছেন বনকর্মীরা। জোড়া দুটি খাঁচার পরিধি ছোট করা হচ্ছে। কারণ, আয়তন ছোট হলে সহজে ধরা পড়বে বাঘটি। খাঁচার মধ্যে রাখা হয়েছে টোপ হিসাবে ছাগলও। শুধু তাই নয়, বাড়ানো হয়েছে ট্রাঙ্কুলাইজ়ারের পরিমাণ। গোটা এলাকায় চলছে চিরুনি তল্লাশি। গ্রামবাসীদের বাড়ি থেকে বেরতে নিষেধ করা হয়েছে। যারা বিপদসীমার মধ্যে রয়েছেন তাদের নিরাপদ আস্তানায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে।
বনবিভাগের এক কর্মীর কথায়, “বাঘটা অনেকদূর থেকে একটানা ঘুরে ঘুরে যাচ্ছে। ও ক্ষুধার্ত রয়েছে যে কোনও সময়েই ফাঁদে ধরা দেবে। আমরা চেষ্টা চালিয়েই যাচ্ছি। আশা করছি ধরতে পারব।” অন্য আরেক বনকর্মীর কথায়, “অনেকসময় এক-দুইদিনে বাঘ ধরা পড়ে না। কখনও কখনও এক সপ্তাহও লেগে যেতে পারে।
কিছুদিন আগে ঝড়খালিতেও এমন হয়েছিল। এক সপ্তাহ পর আমরা বাঘটাকে কব্জা করতে পেরেছিলাম। তাই ওভাবে বলা যায় না। তবে, হ্যাঁ, বাঘটাকে ধরা যাবে তা নিশ্চিত। সাধারণ মানুষের আতঙ্ক কমাতে হবে।” রাতভর ফাঁদ পেতেও ধরা দিল না দক্ষিণ রায়
এদিকে, বাঘ ধরা না পড়ায় রীতিমতো আতঙ্কে ভুগছেন এলাকাবাসী। তাদের অনেকেই বলছেন, ঘরে আলো জ্বালানোর উপায় নেই। কেউ বা চিন্তা করছেন যদি বাড়িতেই হামলা করে ডোরাকাটা! রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে তাদের। গ্রামবাসীদের অনেকেই লাঠি হাতে গ্রামের সীমানা পাহারা দিচ্ছেন। কিন্তু, রাতভর ফাঁদ পাতাই সার। দেখা দেননি দক্ষিণ রায়।
তাই অপেক্ষা ছাড়া গতি নেই। একইসঙ্গে নাইলনের জালে ঘেরা জঙ্গলের গাছে তৈরি মাচায় অভিজ্ঞ বনকর্মীরা ঘুম পাড়ানি বন্দুক ও সার্চ লাইট নিয়ে উঠে পাহারায় রয়েছেন। সেখান থেকেই বাঘের উপর নজরদারি চলছে। মাচাতে থেকে বনকর্মীরা বাঘটিকে ঘুমপাড়ানি গুলি করে ধরতে তৎপ
বন আধিকারিক, ডিএফও, কনজারভেটর অব ফরেস্টও রয়েছেন সেখানে। বাঘের উপর কাজ করে এমন সংগঠনের লোকজনও হাজির হয়েছেন রবিবার রাতে। গত চারদিন ধরে বাঘটিকে কোনও ভাবেই ধরা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ এলাকার লোকজনের।দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডিএফও মিলন মণ্ডল বলেন, “গত চারদিন ধরে ও বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।
ওর মধ্যেও একটা আতঙ্ক কাজ করছে। এদিকে গ্রামবাসীরাও আতঙ্কিত। সে কারণে হয়তো বাঘটা হয়তো তৈরি করা ঘেরাটোপকে এড়িয়ে নিজের জায়গায় ফেরার চেষ্টা করছে। তবে রবিবার যেখানে ওর দেখা পাওয়া গিয়েছে এবং ফেন্সিং যেভাবে করা হয়েছে তার সাথে আগে শুধু খাঁচা ছিল, এবার সঙ্গে মাচাও করা হয়েছে কোনওভাবে ও যদি খাঁচার কাছে এসেও সেখানে না ঢোকে তা হলে বাঘটিকে ঘুম পাড়ানি গুলিতে কাবু করা হবে ।