নিজস্ব সংবাদদাতা :: সংবাদ প্রবাহ :: আগরতলা :: সালটা ১৯২৯। রামকৃষ্ণ মঠের দ্বিতীয় অধ্যক্ষ স্বামী শিবানন্দের শিষ্য ব্রহ্মচারী তাপস চৈতন্য ত্রিপুরার কৈলাশহরে গড়ে তোলেন একটি ছোট্ট আশ্রম। পরে স্থানীয় জমিদার সাধারণ মানুষের মধ্যে শিক্ষা প্রসারের জন্য আশ্রমকে জমি দান করেন। তৈরি হয় স্কুল ও কলেজ। স্বাধীনতার আগেই স্থানীয়দের উৎসাহে পথ চলা শুরু হয় দুর্গাপুজোর। যা এখনও স্বমহিমায় ভাস্বর।
ত্রিপুরা রাজ্যে রামকৃষ্ণ সঙ্ঘের তিনটি মূল শাখা বর্তমান। তার মধ্যে দু’টি (কৈলাশহর ও ধলেশ্বর রামকৃষ্ণ আশ্রম) কেন্দ্রে দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হয়। রীতি মেনে কাঠামো পুজো হয় জন্মাষ্টমীতে। প্রতিমা তৈরির দায়িত্বে স্থানীয় শিল্পী। তবে সাজ যায় কলকাতা থেকেই। মঠের সাধু-ব্রহ্মচারীদের তত্ত্বাবধানে একটি স্বেচ্ছাসেবক দল এই আশ্রমের দুর্গাপুজোর তদারকি করে। দিনরাতের পরিশ্রমেও ক্লান্তিহীন কিশোর ঘোষ, ডাঃ দেবাশিস তরফদার, সুনির্মল ধর, অরবিন্দ চন্দ্ররা। পুজোর প্রথম তিনদিন প্রায় হাজার পাঁচেক মানুষ ভোগ প্রসাদ পেয়ে থাকেন। রান্নার দায়িত্ব নিষ্ঠাভরে পালন করেন শশাঙ্ক সেন।
পঞ্চমীতে ঘট স্থাপনের মাধ্যমে উৎসবের ঢাকে কাঠি পড়ে। বেলুড় মঠ থেকে পাঠানো পূজারী সন্ন্যাসী তন্ত্রধারকের সহযোগিতায় পুজো করেন। সপ্তমী, অষ্টমী এবং নবমীতে মাকে আমিষ ভোগ দেওয়া হয়। তবে শিব ও নারায়ণের জন্য বরাদ্দ নিরামিষ ভোগ। কৈলাশহর আশ্রমের অধ্যক্ষ স্বামী গিরিজানন্দ বলেন, ‘প্রত্যেকদিন সন্ধ্যা আরতির পর এখানে মহিষাসুরমর্দিনী স্তোত্র পাঠ করা হয়।
ফি বছর কুমারী পুজো হলেও করোনার কারণে এবার তা স্থগিত রাখা হয়েছে। পুজো দেখতে ভিড় করেন নানা বর্ণের মানুষ। বিজয়া দশমীতে ধুনুচি নাচও খুব জনপ্রিয়। বিকেলে নিরঞ্জন শোভাযাত্রা।’ বিসর্জন হয় মনু নদীর তীরে। দুর্ঘটনা রুখতে ব্যবহৃত হয় অভিনব পন্থা। ঘাটে একটি পাটাতনের ওপর প্রতিমা রাখা হয়। তারপর যন্ত্রের মাধ্যমে মা দুর্গাকে নদীতে নিমজ্জিত করা হয়। দীর্ঘদিনের রীতি মেনে আজও মা দুর্গার হাতে বেঁধে দেওয়া অপরাজিতার শাখা। সন্ধ্যায় এই প্রসাদী শাখাই (যাত্রাসূত্র) সংগ্রহ করে স্থানীয় কয়েক হাজার ভক্তরা।