লর্ড ক্যানিং এসেছিলেন ঘোষ বাড়ির দুর্গা পুজোয়

সুদেষ্ণা মন্ডল  :: সংবাদ প্রবাহ :: বারুইপুর :: শনিবার ১৪,অক্টোবর :: জমিদারী প্রথা চলে গিয়েছে , কিন্তু আজও জমিদারী প্রথার ইতিহ্য বহন করে ১৪১ বছর ধরে দুর্গা পুজো হয়ে আসছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরের রামনগরের ঘোষ বাড়িতে। ইংরেজ আমলে তৎকালীন বড়লাট লর্ড ক্যানিং জমিদার নরেন ঘোষের ছিলেন অতি ঘনিষ্ঠ। তাই ক্যানিং যাওয়ার পথে দুর্গা পুজোর সময় এই বাড়িতে এসেছিলেন লর্ড ক্যানিং।

পুজোয় কয়েক ঘন্টা সময়ও কাটিয়েছিলেন তিনি। এই পুজোয় একসময় ছাগ বলির নিয়ম ছিল । কালের নিয়মে ছাগ বলি বন্ধ হয়ে গেলেও নিয়ম করে আজও আখ ও চালকুমড়ো বলি হয়ে আসছে এই পুজোয়। অষ্টমীর দিন ঘোষ বাড়ির পুজোয় নিরামিশ আহার খেতেই ভিড় জমান গ্রামের প্রচুর লোকজন ।

রামনগরের ঘোষ বাড়ির প্রথম জমিদার ছিলেন কৈলাস ঘোষ। তাঁর নামানুসারে বাড়ির নাম কৈলাস ভবন। কৈলাসবাবুর ছেলে নরেন ঘোষ ইংরেজ আমলে ঘোষ বাড়িতে দুর্গা পুজো শুরু করেন। বাড়ির দুর্গা দালানে এখন চলছে প্রতিমা তৈরির শেষ মুহূর্তের জোর প্রস্তুতি। কয়েকদিন পরেই সাজ সাজ রব পড়ে যাবে জমিদার বাড়িতে। কলকাতা সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন ঘোষ পরিবারের সদস্যরা। সবাই পুজোর কয়েকদিন মিলিত হয়ে যান ঘোষ বাড়ির দুর্গা দালানে।

প্রবীন সদস্য মলয় ঘোষ বলেন, ইরেজ আমলে বারুইপুর থেকে ক্যানিং যাওয়ার রাস্তা ছিল মাটির। তাই ক্যানিং যাওয়ার পথে বড়লাট লর্ড ক্যানিং তাঁর ফিয়েট গাড়ি এই ঘোষ বাড়ির পিছনে রেখে দিয়ে ঘোড়ার গাড়িতে ক্যানিং যেতেন। পূর্ব পুরুষ নরেন ঘোষের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় একবার দুর্গা পুজোয় তিনি বাড়িতে এসে পুজোও দেখেছিলেন। সময় কাটান দীর্ঘক্ষণ ।

এছাড়া প্রায় সময়েই ইংরেজ সাহেবরা তাঁদের গাড়ি রাখার জন্য প্রায় আসতেন এই বাড়িতে। আগে ষষ্ঠীর দিন রাঁধুনি সোনা ঠাকুরের কচু দিয়ে দেশী চিংড়ির ঝোল রান্না খেতে প্রচুর মানুষের সমাগম হত। অষ্টমীর দিন এখনও নিরামিশ পদে লুচি, ফুলকপির ডালনা খেতে গ্রামের মানুষজন ভিড় জমান । তবে সংখ্যা কিছুটা কমেছে।

সপ্তমী থেকে দশমী চালকুমড়ো ও আখ বলি হয়। সন্ধি পুজো দেখতে আশপাশের গ্রামের মহিলারাও জড় হয়ে যান। বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে এই পুজো হয়ে আসছে। জমিদারী প্রথার রীতি মেনেই বিসর্জনের দিন কাঁধে করেই ঢাক ঢোল বাজিয়ে মাকে নিয়ে যাওয়া হয় বাড়ির পুকুরে। সেই পুকুর হেদুয়ার পুকুর বলে এলাকায় পরিচিত। এই পুকুরেই ইংরেজ সাহেবরাও স্নান করতে আসতেন একসময় ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eleven − three =