সুদেষ্ণা মন্ডল :: সংবাদ প্রবাহ :: ডায়মন্ডহারবার :: সোমবার ০২,অক্টোবর :: জমিদারি কথা আর নেই কিন্তু জমিদার বাড়ির পুজোতে কোনরকম খামতি রাখতে চাইছে না পরিবারের সদস্যরা।জমিদারি আর নেই। রয়ে গিয়েছে জমিদারের বৈঠকখানা, ঘরদালান, জমিদারি আমলের লোহার সিন্দুক, আরও কত কী! সবই আজ ইতিহাস। সেই ইতিহাসেরই এক নীরব সাক্ষী ডায়মন্ড হারবারের বারদ্রোণ গ্রামের মণ্ডলদের জমিদার বাড়ি।
মণ্ডল বাড়িতে জোরকদমে চলছে পুজো প্রস্তুতি। ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে জমিদার গোলকচন্দ্র মণ্ডলের জীবদ্দশায় মণ্ডলবাড়িতে শুরু হয় উমার আরাধনা। প্রথম থেকেই মণ্ডল বাড়িতে একচালা প্রতিমা। আগে মাটির সাজের দেবী দুর্গার আরাধনা হত। সাতের দশক থেকে প্রতিমার ডাকের সাজ শুরু হয়। রথযাত্রাতে হয় কাঠামো পুজো।
ষষ্ঠীর দিন বেলতলায় দেবীর বোধন। পরিবারের কুলদেবতা লক্ষ্মীনারায়ণের মন্দির রয়েছে দুর্গাদালানের পাশেই। সেই মন্দির থেকে কুলদেবতাকে সিংহাসনে বসিয়ে দুর্গাদালানে দেবী দুর্গার পাশে আনা হয়। পুজোর চারদিন গৃহদেবতারও পুজো হয়। সপ্তমীর হোমের আগুন নেভে দশমীতে।
অষ্টমীতে কুমারী পুজোর রীতি রয়েছে। জমিদার আমলে সন্ধিপুজোয় হত গানফায়ার। বর্তমানে তা আর হয় না। আগে রেওয়াজ ছিল পাঁঠাবলির।রীতি মেনে পরিবারের সবচেয়ে প্রবীণ দম্পতি পুজোয় উপবাস করেন। তৎকালীন হাজিপুরের (অধুনা ডায়মন্ড হারবার) বারদ্রোণ গ্রামের বাসিন্দা অযোধ্যা রামের পৌত্র গোলকচন্দ্র মণ্ডল।
সেই সময় মণ্ডল পরিবার ছিল পুরোমাত্রায় ব্যবসায়ী। ধান, চাল, নুন ও সাবানের ব্যবসায় ক্রমেই ফুলেফেঁপে উঠেছিল পরিবারটি। ব্যবসার মুনাফার টাকায় একের পর এক জমি কিনেছিলেন বংশধরেরা।
পঞ্চাশের দশক থেকে পাঁঠাবলিও বন্ধ। পরিবারের এক মহিলা সদস্য চিত্রা মন্ডল তিনি বলেন, অতীতের সেই জৌলুস ফিকে হলেও এখনো প্রাচীন রীতিনীতি মেনে আমাদের এই পুজোর চলে আসছে। পুজোর চারটে দিন পরিবারের মহিলাদের কার্যত ব্যস্ততার মধ্যে দিয়ে কাটে।
নৈবিত্তিক থেকে শুরু করে বিজয় দশমী পর্যন্ত চূড়ান্ত ব্যস্ততার মধ্যে আমরা থাকি। বিজয় দশমীর দিন মায়ের বরণ করার সময় এই পরিবারের মহিলা সদস্যরা কেঁদে ফেলেন কিন্তু আসছে বছর আবার হবে এই আশায় বুক বেঁধে মাকে বিদায় জানাই। আমরা পুজোর এই চারটে দিন খুবই আনন্দের সঙ্গে কাটাই। প্রাচীন সেই রীতিনীতি আগলে ধরে বেঁচে রয়েছে মন্ডল পরিবারের সদস্যরা।