কুমার মাধব :: সংবাদ প্রবাহ :: মালদহ :: সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে ভর্তির অভিযোগ সামনে আসার পর থেকে ব্যাপক চাঞ্চল্য মানিকচক জুড়ে। ব্যাপক চাঞ্চল্য প্রশাসনিক মহলেও।
এই ঘটনায় সরব প্রশাসনিক ও শিক্ষক মহল। মোটা টাকার বিনিময়ে ছাত্র ভর্তি করছেন প্রধান শিক্ষিকা এই অভিযোগে লিখিত অভিযোগ দায়ের দুইজন অভিভাবকের।ডি পি এস সি চেয়ারম্যান, জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (প্রাথমিক) কে লিখিত অভিযোগ। এমনকি মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষা মন্ত্রীর দপ্তরে ই-মেইলের মাধ্যমে অভিযোগ দায়ের। প্রশাসন উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে হাই কোর্টে যাওয়ার হুমকি অভিবাবকদের।
মানিকচক শিক্ষা নিকেতন হাই স্কুল বর্তমানে মানিকচক তথা মালদা জেলার মধ্যে সুপ্রতিষ্ঠিত মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় আর এই ক্যাম্পাসের মধ্যেই মানিকচক ম্যানেজড্ প্রাথমিক বিদ্যালয় এর অবস্থান।
২০১৪ সালের আরটিআই অ্যাক্ট অনুযায়ী মানিকচক ম্যানেজড প্রাইমারি স্কুল শিক্ষা নিকেতন লাগোয়া স্কুল হওয়ায় এই প্রাইমারি স্কুলের সমস্ত ছাত্র-ছাত্রী নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষা নিকেতনে ক্লাস ফাইভে ভর্তির সরাসরি সুযোগ পেয়ে থাকে।
তাই শিক্ষা নিকেতন স্কুলে নিজেদের ছেলে মেয়েকে পড়াতে টার্গেট করতে এই প্রাথমিক বিদ্যালয় নিজেদের ছেলেমেয়েদের ভর্তি করতে মরিয়া অভিভাবকরা ।অভিভাবকদের অভিযোগ এই সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন মানিকচক ম্যানেজড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সুলতানা খাতুন।
তাদের অভিযোগ সরকারি নিয়ম-নীতিকে তোয়াক্কা না করে বেশ কয়েক বছর ধরে এই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত মোটা টাকার বিনিময়ে ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তি চালিয়ে গেছেন প্রধান শিক্ষিকা সুলতানা খাতুন ।এই ব্যাপারে কয়েক বছর ধরে এলাকায় কানাঘুষো চললেও লিখিতভাবে কোন অভিযোগ করেননি কোন অভিভাবক ই।
টাকা নিয়ে ভর্তি সংক্রান্ত প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ করেন মথুরাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ধর্মূটোলা গ্রামের বাসিন্দা পেশায় ক্ষৌরকার শ্যামল প্রামানিক। তিনি তার মেয়েকে মানিকচক ম্যানেজড প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেণীতে ভর্তি করার উদ্দেশ্যে প্রধান শিক্ষিকা সুলতানা খাতুন এর সঙ্গে দেখা করেন। জানা গেছে প্রধান শিক্ষিকা সুলতানা খাতুন শ্যামল বাবু কে তার এনায়েতপুরের বাসগৃহে এসে দেখা করতে বলেন।
শ্যামল বাবু একজন জনৈক শিক্ষক কে সঙ্গে নিয়ে প্রধান-শিক্ষিকার এনায়েতপুরের বাড়িতে যান। অভিযোগ শিশু শ্রেণীতে তার মেয়েকে ভর্তি করা বাবদ ২৫ হাজার টাকা দাবি করেন প্রধান শিক্ষিকা সুলতানা খাতুন।
শ্যামল বাবু জানান, আমি প্রধান শিক্ষিকাকে অনুরোধ করে বলি আমি সামান্য নাপিতের কাজ করি। আমার অর্থনৈতিক অবস্থা তেমন ভালো নয় ।আমি আপনাকে ১০ হাজার টাকা দেব ।আপনি দয়া করে আমার মেয়েকে ভর্তি করে নেন।
কিন্তু তার দাবি মত টাকা দিতে না পারায় বেশ কয়েক মাস পর ঘোরানোর পর আমাকে সাফ জানিয়ে দেন আমার মেয়ের ভর্তি হবে না। কিন্তু তার দাবি মত টাকা দিতে পারলে আমার মেয়ে এখন ওই ইস্কুলে পড়তে পারতো। শ্যামল বাবুর স্ত্রী দীপ্তি প্রামানিক জানান, সরকারি নিয়ম থাকলে তা সবার জন্য হবে।
আমাদের মথুরাপুর, নাজিরপুর থেকে কত ছেলেমেয়ে ওই স্কুলে রোজ পড়তে যাই ।তারা কিভাবে কোন আইনে সেই স্কুলে ভর্তির সুযোগ পেল। আইন টাইন কিছু না ,টাকা দিতে পারলে আমার মেয়েও ওই স্কুলে ভর্তি হতে পারত।
প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে শ্যামল বাবুর অভিযোগের ঘটনা চাওর হতেই সরব হন অভিভাবকরাও| এনায়েতপুর পূর্ব পাড়ার বাসিন্দা জাইনুল আবেদিন অভিযোগ করেন, প্রধান শিক্ষিকা সুলতানা খাতুন এর দাবি মত ১০,০০০ টাকার বিনিময় তিনি তার মেয়েকে এই বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি করান বর্তমানে তার মেয়ে রাইসা নওশিন সেই বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে।
অভিভাবক জয়নুল আবেদীন জানান ,এই ঘটনা বেশ কয়েক মাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও আমি এই যন্ত্রনা অন্তরে চেপে রাখতে পারি নি। আমি যে অপরাধ করেছি তার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। কিন্তু যিনি এই অপরাধ করতে আমাকে বাধ্য করেছেন সেই প্রধান শিক্ষিকা সুলতানা খাতুন এর বিরুদ্ধে উপযুক্ত শাস্তি বিধানের জন্য লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি।
তিনি আরো জানান আমি অভিযোগ করছি জেনে প্রথমে সুলতানা খাতুন ফোন মারফত আমাকে হুমকির সুরে বলেন, আমি যেন ভুলে না যাই আমার মেয়ে এখনো তার অধীনে আছে। অভিযোগ করলে পরবর্তীতে সবার ক্ষতি হবে ।
পরে আবার আমাকে বাড়িতে ডেকে বোঝান, সেই ১০,০০০ টাকার মধ্যে ৬,০০০ টাকা ব্যবহার করা হয়েছে বিদ্যালয়ের চেয়ার কিনতে এবং বাকি চার হাজার টাকা একজন জনৈক নেতার নাম উল্লেখ করে বলেন রেকমেন্ডেশন এর জন্য তাকে দিতে হয়েছে আমি চাই অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিক প্রশাসন।