নিজস্ব সংবাদদাতা :: সংবাদ প্রবাহ :: হাড়োয়া :: বৃহস্পতিবার ১১,সেপ্টেম্বর :: উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাট মহকুমার হাড়োয়া থানার গোপালপুর এক নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্য গোপালপুর গ্রাম প্রায় চারশো বছর আগে তৎকালীন পূর্ববঙ্গ তথা বাংলাদেশের কালিয়ানী জেলা থেকে রত্নেশ্বর হর চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি হাড়োয়ার গোপালপুরে পা রাখেন
তারপর তিনি দেখতে পান গোটা এলাকার সুন্দরবন অর্থাৎ তৎকালীন সুন্দরবন ছিল গোপালপুর এলাকার তারপর এই জঙ্গলের মধ্যে গোলপাতা দিয়ে ঘেরা একটি কুঠুরী বানান তারপর সেখানেই দূর্গা মায়ের মূর্তি স্থাপন করে পুজো শুরু করেন ওই ব্যক্তি। তারপর আস্তে আস্তে ওই পুজোর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে সুন্দরবনের পাশাপাশি তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে
তারপর আস্তে আস্তে বিষয়টি কৃষ্ণনগরের এক রাজার নজরে আসে তারপর তিনি রত্নেশ্বর হর চৌধুরী নামে ওই ব্যক্তিকে শ্রদ্ধা করতেন সেখান থেকে শুরু হয় জমিদারি প্রথা।তারপর আস্তে আস্তে পুজো আরো বড় হতে থাকে পূজো পুজোকে আরো আকর্ষণীয় গড়ে তুলতে তৎকালীন সুদূর জার্মানি থেকে আনা হাজার বাতির লন্ঠন পূজো দালানে শোভা পেত ।
সেখান থেকে আজও পূজোর দালান কোঠায় হাজার বাতি লণ্ঠন জলে। পরবর্তীতে রত্নেশ্বর হর চৌধুরী প্রয়াত হওয়ার পর পুজোর দায়িত্ব নেন উনার পুত্র রামজয় হর চৌধুরী তারপর থেকে পুজো চলতে থাকে পাশাপাশি স্বর্গীয় রত্নেশ্বর হর চৌধুরীর নামে গড়ে উঠেছে একটি পুজো দালান মূলত সেখানেই চৌধুরী বাড়ির দেবী দুর্গা পুজিত হন এখন আরো জাঁকজমক ভাবে।
কথিত আছে মহালয়ার দিন চৌধুরীর বাড়ির পাশে একটি বাগানের মধ্যে পুকুর রয়েছে সেই পুকুরে গিয়ে মাকে প্রণাম করে নিমন্ত্রণ করলে পুজোর বাসনসহ পুজো সরঞ্জামের সমস্ত কিছু পুকুর থেকে নিজে থেকেই ভেসে উঠে।তারপর পুজো মিটে গেলে আবারো পুকুরে ফিরিয়ে দিয়ে আসা হত সেই সকল বাসন-কোসন
পরিবারের সদস্যরা জানাচ্ছেন এই পুজো ঘিরে হাড়োয়া তো বটেই পাশের জেলা এমনকি রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের কাছে খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে অর্থাৎ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসেন এই পুজো দেখতে
পরিবার সূত্রে জানা যায় হর চৌধুরী বাড়ির বেশিরভাগ সদস্য কলকাতা সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত এমনকি বিদেশেও থাকেন পুজো আসলেই তারা আবার হাজির হন গোপালপুরে তারপর পুজোর কটা দিন ঠাকুর দালানে জমজমাট থাকে অর্থাৎ হর চৌধুরী বাড়ির সদস্যরা আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠেন
পরিবার সূত্রে জানা যায় পূজো চলাকালীন ভোগ রান্না করা হয় বাড়ির কাঠের তৈরি উনুনে আজও সেই প্রথা মেনে আসছেন পরিবারের সদস্যরা পরিবারের সদস্যরা আরও জানিয়েছেন কথিত আছে রাম জয় হর চৌধুরীর নাম নিলে ভাঙ্গা হাড়ি জোড়া লেগে যায় এমনই বেশ কিছু অলৌকিক ঘটনা ঘটে থাকে
জমিদার নেই জমিদারি প্রথাও নেই কিন্তু জমিদার বাড়ির সেই জমজমাট পুজো আজও স্বমহিমায় হয়ে আসছে হর চৌধুরী বাড়িতে। কালের পরিবর্তনে বিলীন হয়েছে নানান ইতিহাস কিন্তু পুজোটি আজও ধরে রেখেছেন পরিবারের সদস্যরা এখন হাজারবাতির লন্ঠন আর জলে না পুকুর থেকেও বাসন আর ওঠে না সেটি বলা যায় অতীত
সব মিলিয়ে গোপালপুরের হর চৌধুরী বাড়ির প্রাচীন পূজা ঘিরে রয়েছে নানান রহস্য প্রাচীন সংস্কৃতি রূপকথা জড়িয়ে রয়েছে দালানের ভাঙ্গা ইটের গল্প গাথায়। পাশাপাশি রত্নেশ্বর হর হর চৌধুরী এবং রাম জয় হর চৌধুরীর স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটি আজও মাথা উঁচু করে ইতিহাস জানান দিচ্ছে অর্থাৎ চৌধুরী বাড়ির ইতিহাস আজও বহন করে চলেছেন পরিবারের সদস্যরা।