উদয় ঘোষ :: সংবাদ প্রবাহ :: বর্ধমান :: আন্তঃরাজ্য হেরোইন কারবারের হদিশ, এসটিএফের হানাদারিতে বর্ধমানে গ্রেপ্তার ২শহরের বিবেকানন্দ কলেজ মোড় এলাকা এবং বর্ধমানের বৈকুণ্ঠপুর ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের গোপালনগর এলাকার দুটি বাড়িতে এসটিএফের অতর্কিত হানাদারিতে মাদক তৈরির কারখানার হদিস মিলেছে।
হেরোইন তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার সহ দুজন এসটিএফের জালে ধরা পড়েছে। ধৃতরা হলেন বাবর মন্ডল এবং তার ছেলে রাহুল মন্ডল। জানা গেছে, দুটি বাড়িই বাবর মণ্ডলের। একটি বাড়িতে বড়ছেলে রাহুল মণ্ডল তাঁর স্ত্রী ও পরিবার নিয়ে থাকতো। অন্য বাড়িতে থাকতেন বাবর মণ্ডল তাঁর স্ত্রী সাবিনা মণ্ডল এবং নাবালক ছেলে রাজ।
ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, রবিবার রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ বিশাল পুলিশ বাহিনী হঠাৎ বিবেকানন্দ কলেজ মোড়ের প্রাসাদোপম একটি বাড়ি ঘিরে ফেলে এবং একই সময়ে বৈকুণ্ঠপুর ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের গোপালনগর এলাকার একটি বাড়িও এসপিএফ ঘিরে ফেলে। এই ঘটনায় চমকে ওঠেন এলাকার মানুষজন। সোমবার তাঁরা জানিয়েছেন, গোটা বিষয় সম্পর্কে তাঁরা কিছুই জানতেন না।
তাঁরা জানতেন ওই বাড়ির মালিক বাবর মণ্ডল মুরগির ব্যবসা করেন। কিন্তু সেই মুরগীর ব্যবসার আড়ালে যে খোদ বর্ধমানেই চলতো আন্তঃরাজ্য মাদক কারবার সেটি তাদের কাছে অজানা। সব থেকে বড় বিষয় এই বাড়িতেই তৈরী হত হেরোইন – তা ভেবে তাঁরা রীতিমতো আতঙ্কিত।
এসটিএফ সূত্রে জানা গেছে, মাদক সংক্রান্ত একটি কেস রুজু হয় হাওড়ার গোলাবাড়ি থানায়। সেই ঘটনার তদন্তে নেমে স্পেশাল টাস্ক ফোর্স আন্তরাজ্য মাদক কারবারের হদিশ পায়। গ্রেপ্তার হয়েছে এখন পর্যন্ত ৬ জন। তাদের মধ্যে দুজন ওড়িশার, দুজন মণিপুরের এবং দুজন এই রাজ্যের বর্ধমানের বাসিন্দা। এখনও পর্যন্ত বাজেয়াপ্ত হয়েছে প্রায় ৬৫ কোটি টাকার হেরোইন এবং প্রক্রিয়াকরণের সামগ্রী। বাজেয়াপ্ত হয়েছে প্রায় ২০ লক্ষাধিক টাকাও।
এসটিএফের অপারেশন চলাকালীন মোট ১৩ কিলোগ্রাম প্রক্রিয়াজাত হেরোইন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। যার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ৬৫ কোটি টাকা। ৯টি ড্রামে থাকা অপরিশোধিত হেরোইন এবং হেরোইন প্রক্রিয়াকরণে ব্যবহৃত অন্যান্য রাসায়নিক উপাদান, নগদ টাকা গণনার মেশিন, ওজন যন্ত্র, সিলিং মেশিন এবং অন্যান্য জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
এদিকে, দুটি বাড়িতে এই ধরণের কারবার চললেও সে সম্পর্কে কিছুই জানতেন না বলে জানিয়েছেন, বাবর মণ্ডলের স্ত্রী সাবিনা মণ্ডল। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর স্বামী এবং বড়ছেলে উভয়েই জমিজায়গার কারবার করতেন বলে তিনি জানতেন। একইসঙ্গে তাঁদের একটি মুরগী খামারও রয়েছে।
শহর বর্ধমানের বুকে গোপনে চলছিল এই হেরোইন কারবার। জানা গেছে, মনিপুর থেকে কাঁচামাল এনে বর্ধমানে তা প্রক্রিয়াজাত করে পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশায় পাঠানো হতো। এসটিএফ সূত্রে জানা গেছে, পশ্চিমবঙ্গে তিন দিনের অভিযানে হেরোইন তৈরি ও বন্টনের সাথে জড়িত একটি আন্তঃরাজ্য র্যাকেটকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।