নিউজ ডেস্ক :: সংবাদ প্রবাহ ::কোলকাতা :: সিঙ্গুরে টাটার শিল্পকারখানা স্থাপনের জন্য রাখা জমিতে এখন মাছের চাষ হচ্ছে। শিল্পকারখানার জন্য রাখা জমিতে মাছের চাষ রাজ্যে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সমালোচনার মুখেও এ জমিতে শিল্পকারখানা স্থাপনে রাজি নয় রাজ্য সরকার।
সিঙ্গুর পশ্চিমবঙ্গের এক ঐতিহাসিক নাম। হুগলি জেলার এই কৃষিনির্ভর থানায় ২০০৬ সালে তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার এই রাজ্যে শিল্পায়নের স্বার্থে গাড়ির একটি কারখানা গড়ার জন্য ৯৯৭ একর জমি অধিগ্রহণ করে লিজের মাধ্যমে তা তুলে দেয় টাটার হাতে। সিঙ্গুরের এই জমি ছিল উর্বর এবং তিন ফসলি। এখানে বেশি উৎপন্ন হতো ধান আর আলু।
সেই জমি টাটার হাতে তুলে দেওয়ার পর টাটাগোষ্ঠী এই জমিতে সস্তার ন্যানো ব্র্যান্ডের গাড়ি তৈরির জন্য গড়ে তুলেছিল কারখানা। কিন্তু সিঙ্গুরের জমির মালিকদের একাংশ সেদিন চাইছিল না এখানে গাড়ির কারখানা হোক। ৪০০ একর জমির মালিকেরা সেদিন তৃণমূল ও বিরোধী দলের নেত্রী মমতার ডাকে সিঙ্গুরে গড়ে তুলেছিলেন টাটা এবং জমি অধিগ্রহণবিরোধী আন্দোলন। সেই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সিঙ্গুরবাসী অনশন, ধর্মঘটও পালন করেছিলেন।
জমি অধিগ্রহণবিরোধী আন্দোলনে জেরবার টাটাগোষ্ঠীর কর্ণধার রতন টাটা ২০০৮ সালে সিঙ্গুর থেকে ন্যানো গাড়ির কারখানা সরিয়ে নেন গুজরাটের সানন্দে। ভেঙে দেন কারখানার কাঠামো। কিন্তু টাটাগোষ্ঠী এরপরই এই জমি নিয়ে শরণাপন্ন হয় কলকাতা হাইকোর্ট থেকে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। সেই মামলায় লড়ে তৃণমূল কংগ্রেস এবং রাজ্য সরকার।
২০১৬ সালে সুপ্রিম কোর্ট সিঙ্গুরে জমিগ্রহণ আইনসম্মত হয়নি বলে এক নির্দেশে সেই জমি কৃষকদের ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে ক্ষতিপূরণসহ ওই জমি ফিরিয়ে দেয় জমির মালিক কৃষকদের হাতে। মমতাও ঘোষণা দেন, ওই জমিতে এবার কৃষকেরা ফের চাষাবাদ শুরু করবেন। সেই লক্ষ্যে কৃষকেরা ওই জমিতে চাষাবাদ শুরু করলেও ফিরে পায়নি জমির উর্বরতা শক্তিকে। ফলাতে পারেনি ফসল।
পরে ওই জমিতে ধান, আলু, সবজি চাষের উদ্যোগ নিলেও তা কার্যত ব্যর্থ হয়। কারণ ন্যানো গাড়ির কারখানা গড়তে গিয়ে খোঁড়াখুঁড়িতে জমির উর্বরতা শক্তি চলে যায়। মমতা নিজে গিয়ে ওই জমিতে শর্ষে চাষের উদ্যোগ নিলে তাতেও ব্যর্থ হন। তিনি ২০১৬ সালের ১৯ অক্টোবর ওই জমিতে নিজের হাতে শর্ষের বীজ বপণ করেন। কিন্তু জমি আর উর্বরতা শক্তি ফিরে পায়নি। তাই শর্ষে ফলাতেও ব্যর্থ।