স্বামীর পরকীয়ার প্রতিবাদ করে অশান্তি, আগুনে পুড়ে আত্মঘাতী দুই সন্তানসহ মা।

সুদেষ্ণা মন্ডল :: সংবাদ প্রবাহ :: বারুইপুর :: এমনিতেই অভাবের সংসার। তার উপর স্বামীর পরকীয়া। দুই এমিলিয়ে অসহ্য জীবন যন্ত্রনায় দিন গুনছিলেন মা। আর তাই অবশেষে দুই সন্তান নিয়ে আগুনে পুড়ে আত্মহত্যা করলেন। বলা যেতে পারে আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন। নিহতরা হলেন মা বুলটি মন্ডল (২৭) মেয়ে মনিকা মন্ডল (৮) ও ছেলে             মানস মন্ডল (৬)।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে খবর, প্রায় বছর দশেক আগে কুলতলির ভুবনেশ্বরীর দীপক মন্ডলের সাথে মইপিট থানার বিনোদপুর গ্রামের বুলটি মন্ডলের বিয়ে হয়। স্বামী পেশায় দিনমজুর। তাই সংসারে অভাব লেগেই থাকত বিয়ের পর থেকেই। আর তা নিয়ে চলছিল স্বামী স্ত্রীর সংসার।

কিন্তু ইতিমধ্যেই স্বামী প্রতিবেশী একটি মহিলার সাথে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক গড়ে তোলে। আর তা জানাজানি হতেই শুরু হয় দীপক ও বুলটির মধ্যে অশান্তি। তারপর এই নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে বেশ কয়েকবার আপোষ মীমাংসা করে মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা হয়।

আবার নতুন করে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে গন্ডগোল শুরু হয় বৃহস্পতিবার। শুক্রবার বুল্টির বাপের বাড়ির লোকজন গিয়ে বিষয়টি মিটিয়ে আসেন। সেদিন রাতেই বুলটিকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। তারপর শনিবার বুলটি মেয়ে মনিকা মন্ডল ও ছেলে মানস মন্ডল কে নিয়ে চলে আসে বাপের বাড়িতে। বাপের বাড়িতে বুল্টির বাবা মহাদেব হালদার একাই থাকতেন। দীর্ঘদিন আগেই বাবাকে ছেড়ে চলে গেছে তার মা।

ভাইরাও ভিন রাজ্যে কাজ করে। ফলে বাপের বাড়িতে এসে বাবাকে পুকুরে মাছ ধরতে পাঠায় বুলটি। বাবা জাল নিয়ে পুকুরে মাছ ধরতে গেলে সেই সময় দুই ছেলে মেয়েকে লেপের সাথে বেঁধে দেয়। এরপর কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন লাগিয়ে তিনজন একসাথে আত্মঘাতী হন।

ঘরে দরজা দিয়ে এইভাবে আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়ায় প্রথমে কিছু বুঝে উঠতে পারিনি গ্রামবাসীরা। পরে আগুন এবং ধোঁয়া বের হতে দেখে ছুটে আসে প্রতিবেশীরা। তারা ঘরের দরজা ভেঙে দেখে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে তিনজন। গ্রামবাসীরা পুকুর থেকে জল দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। এবং ঘরের আগুন নিভিয়ে ফেললেও বাঁচানো যায়নি তিনজনকে।

আশঙ্কাজনক অবস্থায় তিনজনকে পাঠানো হয় কুলতলী জামতলা হাসপাতালে। সেখানে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাদেরকে মৃত বলে ঘোষণা করে। দেহ তিনটি পাঠানো হয়েছে ময়নাতদন্তের জন্য। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে মইপিট কোস্টাল থানার পুলিশ।

ইতিমধ্যেই ঘটনার খবর পাওয়ার পর থেকেই পলাতক স্বামী দীপক মন্ডল। খোঁজ চলছে পলাতক স্বামীরও। পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত অনুমান পারিবারিক অশান্তির কারণেই এই আত্মহত্যা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 × two =