সুন্দরবনের বিচ্ছিন্ন দ্বীপের হতদরিদ্র পরিবারে দুলক্ষ আঠাশ হাজার টাকার বিদ্যুৎ চুরির কেস – অবসাদে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা

সুদেষ্ণা মন্ডল :: সংবাদ প্রবাহ :: পাথরপ্রতিমা :: সুন্দরবনের বিচ্ছিন্ন দ্বীপের হতদরিদ্র পরিবারে দুলক্ষ আঠাশ হাজার টাকার বিদ্যুৎ চুরির কেস । আর তাতেই মানসিক অবসাদে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা এক ব্যক্তির। আর এই ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা এলাকায় । ঘটনাটি ঘটেছে পাথরপ্রতিমার হেরম্ব গোপালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণ কাশীনগর গ্রামে ।তীব্র দাবদহের মধ্যে থাকতে না পেরে অগত্যা বিদ্যুতের খুঁটি থেকে লাইন টেনে বিদ্যুৎ নিয়ে ফ্যান চালাচ্ছিল এক ব্যক্তি সহ আরো কয়েকটি পরিবার ।

এই খবর পেয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ এর অফিস থেকে কর্মীরা এসে ওই ব্যক্তিকে দুলক্ষ আঠাশ হাজার টাকা জরিমানা করে কেস চালু করে । সামান্য বিদ্যুৎ নিয়ে ফ্যান চালানোর জন্য দু’লক্ষ আঠাশ হাজার টাকা জরিমানা ।

এই বিপুল পরিমাণ টাকা আসবে কোথা থেকে । না দিলে জেল খাটতে হবে । চুন কালি পড়বে গোটা পরিবারের মুখে । এই কথা ভেবে মানসিক অবসাদে শেষমেশ গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় ওই ব্যক্তি ।

যদিও গ্রামবাসীদের চেষ্টায় কোনো রকমে প্রাণে বেঁচে যায় ওই যুবক। এই ঘটনায় একদিকে যেমন ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে অন্য দিকে এলাকায় সকলের মধ্যে রয়েছে আতঙ্কের ছোঁয়া ।

ইয়াস ঝড়ের সময় পাথরপ্রতিমা সহ সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকায় বিদ্যুৎ পরিষেবা স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল । ঘরবাড়ি ভেঙে মাটির সঙ্গে মিশে গিয়েছিল । ঘরের মধ্যে থাকা বিদ্যুতের মিটার বক্স ভেঙে তছনছ হয়ে গিয়েছিল। বিদ্যুৎ বিভাগের এর কাছে বারে বারে আবেদন করার পর আজও তারা বিদ্যুৎ এর মিটার পায়নি ।

বাধ্য হয়ে তীব্র দাবদহ সহ্য করতে না পেরে বিদ্যুতের খুঁটি থেকে হুকিং করে বিদ্যুৎ নিয়ে ঘরের মধ্যে ফ্যান চালাচ্ছিল পাথরপ্রতিমা হেরম্ব গোপালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণ কাশীনগর এলাকার মন্টু মন্ডল সহ সাতাশটি পরিবার।

মথুরাপুর বিদ্যুৎ বিভাগের অফিস থেকে কর্মীরা এসে হঠাৎ এলাকায় ঢুকে ওই সাতটি পরিবারের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা জরিমানা করে । আর এর পর থেকেই পেশায় দিনমজুর এই পরিবারগুলি আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে ।

এক এক জনের নামে দুলাখ তিন লাখ টাকার জরিমানা করে কেস দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগের আধিকারিকরা। তাদের বেঁচে থাকার শেষ সম্বল বাস্তু ভিটে বিক্রি করলেও কোনোদিন এই বিপুল পরিমাণ টাকা তারা জোগাড় করতে পারবে না কোনোদিন।

এই সব ভেবে মানসিক অবসাদে মিন্টু মন্ডল নামে এক ব্যক্তি আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় । ঘরের মধ্যে গলায় দড়ি দিতে যায় সে । কোনোভাবে তা বুঝে ফেলে তার স্ত্রী । চিৎকার চেচামেচি করতে প্রতিবেশীরা জানতে পেরে তাড়াতাড়ি পৌঁছে সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে ও প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করে ।

এখন প্রশ্ন উঠছে অন্যায় করলে নিশ্চয়ই জরিমানা হওয়া উচিত । কিন্তু এই তীব্র দাবদহে দারিদ্র ঘরে যারা একটা ফ্যান চালায় কিংবা একটা আলো জ্বালায় তাদের কি দুলক্ষ থেকে তিনলক্ষ করে মোটা অঙ্কের জরিমানা করা যায় ? বিদ্যুৎ দপ্তরের তুঘলকি কাণ্ড নিয়ে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছে স্থানীয় শাসক দল থেকে বিরোধীরা সকলেই ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thirteen − 4 =