সুদেষ্ণা মন্ডল :: দক্ষিণ ২৪ পরগনা :: সংবাদ প্রবাহ :: ভোজনরসিক বাঙালির রসনা তৃপ্তিতে ইলিশের জুড়ি মেলা ভার। বর্ষা মানেই ইলিশ আর ইলিশের বিভিন্ন পদে মোজে বাঙালি। আর মাত্র কয়েকটা দিনের অপেক্ষা ১৫ জুন থেকে গভীর সমুদ্রে ইলিশের সন্ধানে পাড়ি দেবে মৎস্যজীবীরা।
গভীর সমুদ্রে রুপালি শস্যের খোঁজে পাড়ি দেওয়ার আগে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ডহারবার, কুলপি, ফলতা, কাকদ্বীপ, নামখানা, বকখালি ও পাথরপ্রতিমা ও রায়দিঘির বিভিন্ন বন্দরগুলোতে চরম ব্যস্ততা। নাওয়া খাওয়া ভুলে মৎস্যজীবীরা ব্যস্ত নিজেদের মাছ ধরার সরঞ্জাম গোছাতে। মৎস্যজীবীরা মাছ ধরার জাল তৈরি করতে ব্যস্ত।
এছাড়াও ট্রলার গুলি সংস্কার করা হচ্ছে। মৎস্য দপ্তর সূত্রে খবর,১৫ এপ্রিল থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে মৎস্য দপ্তর। ৯০ দিন মাছের প্রজননের জন্য গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা।
সরকারি নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর ১৫ তারিখ থেকে আবার গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যেতে পারবে মৎস্যজীবীরা। ১৫ জুনের আগে শেষ বেলার প্রস্তুতি সেরে নিচ্ছে মৎস্যজীবীরা।মৎস্যজীবী শ্রীকৃষ্ণ দাস জানান, বেশ কয়েক বছর ধরে ইলিশ ধরতে যাচ্ছি গভীর সমুদ্রে। গভীর সমুদ্রে ভয়ানক পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় আমাদের কে। সাগরের উত্তাল ঢেউ পাড়ি দিয়ে আমরা জাল ফেলি। বিগত তিন বছর ধরে তেমনভাবে ইলিশ পাইনি আমরা। ইলিশ না পাওয়ার জন্য ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে ট্রলার মালিক ও মৎস্যজীবীদের। এবছর আবারও আমরা আশায় বুক বেঁধেছি। আমরা মনে করছি এবছর ভালো মাছ পাবো। গতবছর বাজারে ইলিশের চাহিদা থাকলেও আমরা খুব একটা যোগান দিতে। ট্রলারমালিক বিশ্বনাথ দাস বলেন, যে হারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে বহু ট্রলার মালিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। অনেক ট্রলারমালিক ট্রলার বিক্রি করে দিয়েছে।
মরশুমের এক একটি ইলিশ মাছ ধরার অভিযানে জ্বালানি তেল ও অন্যান্য খরচ সহ প্রায় লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়। সেই অনুপাতে মৎস্যজীবীরা তেমন মাছ পায়নি গত বেশ কয়েক বছর ধরে। এর ফলে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে ট্রলার মালিকেরা। এবছর আবারো আশায় বুক বেঁধেছে চলার মালিকেরা। আশা করি এবার মা গঙ্গা মুখ তুলে তাকাবে।ঝিরিঝিরি বৃষ্টি ও পূবালী বাতাস হলো ইলিশের আদর্শ উপকূল পরিবেশ। আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসে ইলিশের দল মোহনার দিকে ছুটে আসে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সহ মৎস্য আধিকারিক (সামুদ্রিক) জয়ন্ত প্রধান জানান, ইতিমধ্যেই মৎস্যজীবীদের গভীর সমুদ্রে যাওয়ার জন্য মৎস্য দফতরের পক্ষ থেকে অনুমতি দেয়ার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে।
সরকারি নিষেধাজ্ঞা মেনেই মৎস্যজীবীরা গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাবে। মৎস্যজীবীরা যে জাল দিয়ে ইলিশ ধরবে সেই জালের ফাঁস ৯০ মিলিমিটার হতে হবে। এছাড়াও ২৩ সেন্টিমিটারের থেকে ছোট মাছ ধরা যাবেনা। গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়ার মৎস্যজীবীরা দের পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট ,লাইভ বুয়া, লক বুক ,জিপিআরএস ডিভাইস নিয়ে যাওয়া বাধ্যতামূলক।
১৫ তারিখের আগে কোন মৎস্যজীবীরা যাতে না গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে বেরিয়ে পড়েছে তা খতিয়ে দেখছে মৎস্য দফতরের পক্ষ থেকে বিভিন্ন বন্দরগুলোতে নজরদারি চালানো হচ্ছে। সঠিক সময় বর্ষা যদি রাজ্যে প্রবেশ করে তাহলে ইলিশের সম্ভাবনা প্রবল। তিন বছর না হলে চতুর্থ বর্ষে ইলিশের সম্ভাবনা প্রবল থেকে যায়।
আমরা আশা করি এই বছর ভালো ইলিশ ধরতে পারবে মৎস্যজীবীরা। মৎস্য দফতরের পক্ষ থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মৎস্যজীবীদের শুভেচ্ছা রইল। গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে ট্রলার দুর্ঘটনা কথা নতুন নয় আর এবার ট্রলার দুর্ঘটনা হাত থেকে মৎস্যজীবীদের রক্ষা করতে এগিয়ে এলো ভারতীয় উপকূল রক্ষী বাহিনীর। ইলিশের ধরার মরশুম শুরু হওয়ার আগে ভারতীয় উপকূল রক্ষী বাহিনীর পক্ষ থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন বন্দরগুলোতে ট্রলার মালিক ও মৎস্যজীবীদের সঙ্গে সচেতন মূলক বৈঠক করেন উপকূল রক্ষী বাহিনীর আধিকারিকেরা। ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনী (হলদিয়া) র প্রধান নাবিক স্বরূপ রতন ঘোড়াই জানান, বর্ষাকালে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার সময় ট্রলার দুর্ঘটনা সম্মুখীন হতে হয় মৎস্যজীবীদের। ট্রলার দুর্ঘটনার কারণে বহু মৎস্যজীবী মারাও যায়।অনেক ক্ষেত্রে ট্রলার গুলিতে লাইফ জ্যাকেট না থাকার কারণে দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রলারের মৎস্যজীবীদের বাঁচার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়। অনেক ট্রলার জিপিআরএস ডিভাইস নিয়ে মাছ ধরতে যায় না। এর ফলে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার সময় ভারতীয় জলসীমানা লংঘন করে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। ভারতীয় উপকূল রক্ষী বাহিনীর পক্ষ থেকে সকল মৎস্যজীবী ও ট্রলার মালিক কে অনুরোধ করেছি যে, মাছ ধরতে যাওয়ার সময় ট্রলারে পর্যাপ্ত পরিমাণে লাইফ জ্যাকেট ও জিপিআরএস ডিভাইস নিয়ে যাওয়ার জন্য ও জিপিআরএস ডিভাইস অন রাখার জন্য। গভীর সমুদ্রে কোনরকম দুর্ঘটনার সম্মুখীন হলে খুব দ্রুতই ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে সক্ষম হবে ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনী।
তিন বছরের ইলিশের আকাল এবছর কি মেটাতে পারবে মৎস্যজীবীরা তা সময়ের অপেক্ষা।