।আরব সাগরের সমুদ্রতটে বালির উপর দিয়ে ছুটছে এক আসামি। সঙ্গে প্রায় জনাদশেক পুলিশ কর্মী। কেরল ও তামিল আর বাংলা মিলিয়ে কথোপথন চলছে পুলিশ কর্মীদের মধ্যে

নিজস্ব সংবাদদাতা :: সংবাদ প্রবাহ :: বারুইপুর :: গত ৭ জুলাই ক্যানিং থানার গোপালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের হাট পুকুরিয়া এলাকায় দুষ্কৃতীদের তাণ্ডবে সকালেই খুন হন তিন তৃণমূল কর্মী। একজন স্বপন মাঝি, অন্য দু’জন ঝন্টু হালদার ও ভূতনাথ প্রামানিক। স্বপন মাঝি ওই এলাকার গোপালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের পঞ্চায়েত সদস্য ও অঞ্চল সভাপতি।

এলাকায় যথেষ্ট সুনামের সঙ্গে কাজ করতেন নিহত ব্যক্তি স্বপন। আর তাতেই চক্ষুশূল হয়ে ওঠে এলাকার কুখ্যাত দুষ্কৃতী রফিকুল সর্দার ও তার দলবলের। তাই তারা একেবারে সকালেই খুনের পরিকল্পনা করে। নৃশংসভাবে প্রথমে গুলি করে পরে গলা কেটে খুন করা হয়। এই ঘটনায় পরপরই পুলিশ তিনজনকে জয়নগর ও ক্যানিং থেকে গ্রেপ্তার করেছিল

।মূল অভিযুক্ত রফিকুল সর্দার ছিল পলাতক।তার খোঁজে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি শুরু করে ক্যানিং থানার পুলিশ।আরব সাগরের সমুদ্রতটে বালির উপর দিয়ে ছুটছে এক আসামি। সঙ্গে প্রায় জনাদশেক পুলিশ কর্মী। কেরল ও তামিল আর বাংলা মিলিয়ে কথোপথন চলছে পুলিশ কর্মীদের মধ্যে। বারবার থামতে বলা হচ্ছে ছুটতে থাকা আসামিকে। কিন্তু আসামিও ছুটছে প্রাণপণে।

আসামিকে ভয় দেখাতে শূন্যে ছোঁড়া হল দু’রাউন্ড গুলিও। তবুও অকুতোভয়। প্রাণপন সেও ছুটে চলেছে পুলিশের হাতে ধরা না দেওয়ার জন্য। এইভাবে চলতে চলতে কয়েক কিলোমিটার যাওয়ার পর অবশেষে আসামিকে ধরে ফেলল পুলিশ। এতক্ষণ শোনার পরে মনে হতে পারে কোনও হিন্দি বা তামিল সিনেমার দুর্ধর্ষ কোনও দৃশ্যের শুটিং চলছে। কিন্তু একেবারেই নয়। খুনের আসামিকে ধরতেই পুলিশের দৌড়ানোর বাস্তব চিত্র।

যা হার মানিয়ে দেবে হিন্দি সিনেমাকেও। আর তাতেই ধরা পড়ে যায় রফিকুল। কেরলের কোঝিকর শহরের একেবারে সমুদ্র লাগোয়া একটি বস্তি এলাকা থেকেই বৃহস্পতিবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এই অপারেশনের নেতৃত্ব দেন তদন্তকারী দলের ক্যানিং থানার অফিসার রঞ্জিত চক্রবর্তী।

প্রথমে এই তদন্তকারী অফিসাররা কেরলে গিয়ে যে এলাকায় রফিক ছিল সেই এলাকাটি ছদ্মবেশে রেইকি করে।কারণ, রফিক ওই এলাকায় রংমিস্ত্রি হিসেবে ভাড়া বাড়িতে ছিল। তার সঙ্গে ছিল জয়নগর ও বাসন্তীর আরও বেশ কিছু দিনমজুর। একসঙ্গেই থাকছিল তারা। পরিচয় গোপন করে রফিকুল সেখানে কাজ নেয়।

আর সেই ঘরেই রাত বারোটা নাগাদ অভিযান শুরু করে পুলিশের একটি দল। তাদেরকে সাহায্য করে কেরল পুলিশের কর্মীরাও। পুলিশের জেরাতে ইতিমধ্যেই স্বীকার করেছে খুনের কথা। তবে খুনের পিছনে রাজনৈতিক যোগ আছে কিনা এবং কে তাকে খুনের বরাত দিয়েছিল সবটাই জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। এ বিষয়ে জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মকসুদ হাসান বলেন, “কেরল থেকে খুব শীঘ্রই তাকে ট্রানজিট রিমান্ডে বারুইপুর পুলিশ জেলাতে নিয়ে আসা হবে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × four =