আমেরিকার ক্যাপিটল ভবনের এক দুঃস্বপ্নের সময় – আজ পর্ব – ২

আনন্দ মুখোপাধ্যায়, সংবাদপ্রবাহ টিভি ডট কম এর নিউজ ডেস্ক থেকে আগামী দুই দিন ধরে আমি আপনাদের শোনাচ্ছি  বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্ররোচনায় কেমন করে আক্রান্ত হলো বিশ্বের সবথেকে শক্তিশালি দেশ আমেরিকার সংসদ ভবন আর কিই বা চলছিল সংসদের ফ্লোরে ।
আজ আমাদের প্রতিবেদনের দ্বিতীয় পর্ব ।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

সেদিনক্যাপিটল বিল্ডিং মানে মার্কিন সংসদ ভবনে ডোনাল্ড ট্রাম্প সমর্থকদের বিভীষিকাময় হামলার আঁখো দেখি হাল আমাদের শুনিয়েছেন নিউইয়র্ক টাইমস-এর কংগ্রেস প্রতিবেদক নিকোলাস ফান্দোস ও এমিলি কচরান এবং চিত্রগ্রাহক এরিন স্কাফ । আমরা তাঁদের মুখ থেকেই শুনবো সেদিনের লাইভ কমেন্ট্রি যা আমাদের যুগপৎ বিস্ময় এবং আতঙ্কে ঘিরে ফেলে । কারণ আমিও একজন সিনিয়র সাংবাদিক এবং প্রায়শই আমাদের মতন যাঁরা কেবল মাত্র বিশেষ প্রতিবেদনেই লেখেন তাঁদের সংসদ ভবন ,রাষ্ট্রপতি ভবন কিংবা অন্য কোনো বিশেষ প্রতিবেদন লিখতে যাই তখন হঠাৎ করে অবস্থা কতটা সঙ্গিন হয়ে উঠতে পারে সেই ধারণা অনেকেরই নেই ।

আসুন আমরা প্রথমে শুনে নেব নিউইয়র্ক টাইমস এর প্রতিবেদক : এরিন স্কাফ এর সেদিনের অভিজ্ঞতার কথা ! 

আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল: এরিন স্কাফ

ক্যাপিটল ভবনের প্রথম তলা থেকে হামলাকারীদের চিৎকার শুনতে পাচ্ছিলাম আমি। ঘটনা কী জানতে আমি নিচে গেলাম। তবে ততক্ষণে তারা ওপরে উঠে আসতে শুরু করেছে। যে কক্ষে সিনেটররা বৈঠক করছিলেন, তার ঠিক বাইরেই তাঁরা চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করে দিলেন। এমনকি ওই কক্ষে ঢুকতে দরজার সঙ্গে রীতিমতো যুদ্ধ শুরু করলেন যেন তাঁরা। আমি হতভম্ব হয়ে সব দেখছিলাম। ভাবছিলাম, অল্প কয়েকজন বিক্ষোভকারী হয়তো কোনোভাবে ক্যাপিটল ভবনে ঢুকে পড়েছেন। কিন্তু নিচে তাকিয়ে আমার ভুল ভাঙল।

হাজার হাজার মানুষ এদিক-সেদিক ছুটছে, চিৎকার করছে। একদলকে দেখলাম পডিয়াম তুলে একদিক থেকে আরেকদিকে যাচ্ছে। এসব ঘটনার কয়েকটি ছবি তুললাম। নিচে দরজার দিকে গিয়ে দেখি, মাত্র একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে শত শত হামলাকারীর সঙ্গে যুঝতে হচ্ছে। বেশিক্ষণ টিকতে পারলেন না তিনি। বিক্ষোভকারীরা ঢুকে পড়লেন।

দৌড়ে ওপরে উঠে এলাম আমি। হঠাৎ দু-তিনজন মানুষ এসে আমাকে ঘিরে ধরলেন। আমি কী করি, জানতে চাইলেন। আমার পরিচয়পত্রে নিউইয়র্ক টাইমস-এর নাম দেখে তাঁরা আরও খেপে উঠলেন। আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলেন, ক্যামেরা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করলেন। সাহায্য পেতে আমি তখন চিৎকার করছিলাম। কিন্তু কেউ এগিয়ে এলেন না। মৃত্যুভয় চেপে বসল আমার। হামলাকারীরা আমার কাছ থেকে একটা ক্যামেরা কেড়ে নিয়ে লেন্স ভেঙে চলে গেলেন।

এরপর যেন আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়লাম। কী করব, ভেবে পাচ্ছিলাম না। দৌড়ে প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির কার্যালয়ে গেলাম। কিন্তু সেখানেও তাণ্ডব চলছিল তখন। বেরিয়ে ন্যাশনাল মলের দিকে যেতেই একটি দলকে দেখলাম, অভিষেক মঞ্চ ঢেকে দিতে। কাছেই একটা জায়গায় ক্যামেরা লুকিয়ে রাখলাম। এরপর ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে মুঠোফোনে ছবি-ভিডিও ধারণ করতে লাগলাম। আমার কাছেই একজনকে বলতে শুনলাম, ‘গৃহযুদ্ধের শুরু এখান থেকেই।’

ঠিক ওই মুহূর্তে পুলিশকে পেপার স্প্রে, কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে দেখলাম। ছুটে তৃতীয় তলায় উঠে একটা জায়গায় লুকালাম। এরপর আমার স্বামীকে ফোন করলাম। তিনি আমাকে শান্ত থাকতে এবং নিরাপদ একটা জায়গায় লুকাতে বললেন। কিন্তু পারলাম না। পুলিশ আমাকে ধরে ফেলল।

তাদের বললাম, আমি ফটো সাংবাদিক, হামলাকারীরা আমার পরিচয়পত্র ও পাস ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। কিন্তু তারা বিশ্বাস করল না। বন্দুক তাক করে চিৎকার করে আমাকে শুয়ে পড়তে বলল। আমি শুয়ে পড়লাম। ঠিক ওই মুহূর্তে পরিচিত দুজন ফটো সাংবাদিক ছুটে এসে বললেন, ‘তিনি সাংবাদিক।’ এরপর পুলিশ কর্মকর্তারা আমাদের দ্রুত সেখান থেকে সরে যেতে বললেন………চলবে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

7 − 7 =