শত বাধা পেরিয়ে একসঙ্গেই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসতে চলেছে মা ও ছেলে

নিজস্ব সংবাদদাতা :: সংবাদ প্রবাহ :: নদীয়া :: ১৩ই,মার্চ :: ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়! আরো একবার এই শব্দটি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল বাঙালি গৃহবধূ। সংসারের শত বাধা পেরিয়ে নিজের ছেলের সঙ্গেই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে চলেছেন ৩৮ এর লতিকা মন্ডল। তার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে এলাকাবাসী। নদীয়ার শান্তিপুর থানার নৃর্সিংহপুর সরদার পাড়ার বাসিন্দা লতিকা মন্ডল।

প্রায় ১৯ বছর আগে বিয়ে হয় লতিকা মন্ডল এর। লতিকার বাবার বাড়ি নদিয়া জেলার ধুবুলিয়া থানা এলাকায়। বিয়ের আগে থেকেই পড়াশোনার প্রতি তীব্র আগ্রহ ছিল ওই গৃহবধুর। কিন্তু ইচ্ছা থাকলেও অনেক সময় উপায় হয়ে ওঠে না নানান কারণে। ঠিক সেই রকমই একদিকে আর্থিক অনটন অন্যদিকে মার শারীরিক অসুস্থতার কারণে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করলেও তারপরে আর পড়াশোনা করতে পারেননি তিনি।

এরপর আর্থিক অনটনের কথা মাথায় রেখেই লতিকা মন্ডলকে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তার পরিবার। সেই মতো শান্তিপুরের সর্দারপাড়ায় এক যুবকের সঙ্গে তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়। তার স্বামী কাজের সুবাদে ভিন রাজ্যে থাকেন। বর্তমানে লতিকার দুই সন্তান রয়েছে। একটি পুত্র সন্তান এবং একটি কন্যা সন্তান।

তার বড় কন্যা রানী মন্ডল শান্তিপুর কলেজের বাংলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। আর ছোট ছেলে সৌরভ মন্ডল বর্তমানে পূর্ব বর্ধমান জেলার কালনা অম্বিকা উচ্চ বিদ্যালয় এর ছাত্র। এবার সে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসবে। তার প্রথম কন্যা যখন তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে তখন ওই গৃহবধূ লতিকা মন্ডল নিজেই বাড়িতে পড়াশোনা শেখাতেন মেয়েকে।

এরপরেই শান্তিপুর মিউনিসিপাল স্কুলে ভর্তি হন লতিকা। ২০১৯-২০ বর্ষের মাধ্যমিক পাস করেন তিনি। মিউনিসিপাল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাশ করে নৃসিংহপুর উচ্চ বিদ্যালয় ভর্তি হন তিনি। এবছর ছেলের সৌরভ মন্ডল এর সঙ্গে পরীক্ষায় বসতে চলেছেন মা লতিকা মন্ডল।

শুধু পরীক্ষায় বসাই শেষ নয়, প্রতিদিন সংসারের কাজ সামলে নিয়ম করে ছেলের সঙ্গে পড়তে বসেন ওই গৃহবধূ। তবে গৃহবধূর এই উদ্যোগে সাধুবাদ জানিয়েছে এলাকাবাসী। নিজের পরিবারের তরফ থেকেও অনেকটা সাহায্য পেয়েছে বলেই জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × 3 =