আনন্দ মুখোপাধ্যায় :: সংবাদ প্রবাহ টিভি :: : ১৯শে জানুয়ারি ::কোলকাতা ::
কলকাতায় কন্ডোম বিতর্ক শুরু হয়েছে অভিনেত্রী সায়নী ঘোষের পুরনো একটি টুইট নিয়ে, যেখানে তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে শিবলিঙ্গকে কন্ডোম পরানোর ছবি পোস্ট করা হয়েছিল।যদিও অনেকে বলছেন, ওই ছবি থেকে স্পষ্ট এইডসের বিরুদ্ধে সচেতনতা অভিযানের অংশ হিসেবেই সেটি পোস্ট করা হয়েছিল – অনেকে আবার দেবদেবীদের নিয়ে এই ধরনের ‘চটুলতা ও অশ্লীলতা’ মেনে নিতে পারছেন না।
পুরা ও মেঘালয়ের প্রাক্তন রাজ্যপাল ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ তথাগত রায় গত শনিবার কলকাতার রবীন্দ্র সরোবর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করে লেখেন, ওই টিভি অভিনেত্রীর করা টুইটে একজন একনিষ্ঠ শিবভক্ত হিসেবে আমার ধর্মীয় বিশ্বাস আহত হয়েছে।পঁচিশ বছর আগে তিনি পায়ে হেঁটে কৈলাস-মানস সরোবর পাড়ি দিয়ে শিবের পূজা দিতেও গিয়েছিলেন, এই তথ্য জানিয়ে তথাগত রায় ভারতীয় দন্ডবিধির ২৯৫এ ধারায় ওই অভিনেত্রীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন।
২৯৫-এ ধারায় ধর্ম বা জাতপাতের ভিত্তিতে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিদ্বেষ ও শত্রুতা ছড়ানোর অভিযোগ আনা যায়।রবিবার গুয়াহাটির পল্টনবাজার থানায় এবং ব্যাঙ্গালোরের আর একটি পুলিশ থানাতেও সায়নী ঘোষের বিরুদ্ধে একই অভিযোগে এফআইআর আনা হয়েছে। ওই দুটি রাজ্যে, যথাক্রমে আসাম ও কর্নাটকে, বিজেপি সরকার ক্ষমতায় রয়েছে।
Advertisement
টুইটারে সায়নী ঘোষ ইতিমধ্যে আত্মপক্ষ সমর্থন করে লিখেছেন, আমার নিজের ধর্মের অনুভূতিকে আঘাত করার কোনও অভিপ্রায় কখনওই আমার ছিল না।তিনি আরও দাবি করেন, বছরকয়েক আগে ওই পোস্টটি করা হয়েছিল তাঁর অগোচরে – এবং তিনি জানতে পারামাত্র সেটির নিন্দা করে তা মুছে দিয়েছিলেন এবং মানুষকেও সেটা জানিয়েছিলেন।
এপ্রসঙ্গে সায়নীর পক্ষে সরব হয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় । টুইট বিতর্কে গেরুয়া রোষ থেকে সায়নী ঘোষকে রক্ষা করতে এ বার ঢাল হয়ে এগিয়ে এলেন খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানিয়ে দিলেন, বিজেপি বাংলার শিল্পীদের চোখ রাঙাবে, তা বরদাস্ত করবেন না তিনি।
সায়নী এবং প্রবীণ বিজেপি নেতা তথা অসম ও ত্রিপুরার প্রাক্তন রাজ্যপালের টুইট যুদ্ধ এবং আইনি লড়াই নিয়ে আড়াআড়ি বিভক্ত বাংলার রাজনৈতিক এবং শিল্পীমহল। এমন পরিস্থিতিতে নায়িকার বাক স্বাধীনতার পক্ষেই সওয়াল করতে দেখে গেল মুখ্যমন্ত্রীকে।
সোমবার পুরুলিয়ার হুটমুড়ায় শতাব্দী রায়কে নিয়ে সভা করেন মমতা। সেখানেই বিজেপি-কে তীব্র আক্রমণ করে তিনি বলেন, ‘‘সায়নী বলে একটা মেয়ে ফিল্মে কাজ করে। তাকে ধমকানো হচ্ছে। চমকানো হচ্ছে। আজ সকালেও শুনলাম তাকে ধমকাচ্ছে বিজেপি। এত বড় ক্ষমতা ওদের! ’’
তিনি বলেন, ‘‘দিল্লিতে গিয়ে ধমকাও, উত্তরপ্রদেশে গিয়ে ধমকাও, বিহারে গিয়ে ধমকাও। বাংলায় ধমকানোর আশা আসে কোত্থেকে? এখানে ধমকালে বাংলার মানুষ লিউকোপ্লাস্টার দিয়ে মুখ বন্ধ করে দেবে। অত সহজ নয়। ক্ষমতা থাকলে সায়নীর গায়ে হাত দিয়ে দেখাও, ক্ষমতা থাকলে টালিগঞ্জের গায়ে হাত দিয়ে দেখাও, ক্ষমতা থাকলে বাংলার সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষের গায়ে হাত দিয়ে দেখাও।’’
নাম না করে তথাগতকেও একহাত নেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘বয়স হয়ে গিয়েছে। তবুও ভীমরতি যায় না। নাতনির বয়সি মেয়েকে প্রতিদিন হুমকি দিচ্ছে। কেন? তার কি স্বাধীন ভাবে কথা বলার অধিকার নেই?’’